পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ঠেকাতে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা দেয় সরকার। পরে অবশ্য মালিক-শ্রমিকদের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে তা থেকে সরে এসে যত সিট তত যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচলের নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে সে নির্দেশনাও রয়ে যায় শুধু কাগজে কলমে। কোন গণপরিবহনে তা মানা হয় না। যত আসন তত যাত্রীর বদলে যত খুশি তত যাত্রী নিয়েই চলাচল করছে গণপরিবহনগুলো। বিষয়টি নিয়ে কারোরই নজরদারি নেই।
গতকাল শনিবার রাজধানীর সড়কগুলোতে গণপরিবহনগুলোতে কোন রকমের স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা যায়নি। এমনকি যত সিট তত যাত্রী নিয়মও পালন করছেনা বাসের চালক ও হেলপাররা। বেশিরভাগ লোকাল বাসে দাঁড়িয়েও যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। অধিকাংশ যাত্রীই মুখে ছিল না মাস্ক। চালক থেকে শুরু করে হেলপারদের মুখেও মাস্ক দেখা যায়নি। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতেও দেখা যায়নি কোনও গণপরিবহনে। চালকের সহকারীরা যাত্রী টেনে টেনে বাসে তুলছেন পুরনো অভ্যাসেই। বিধিনিষেধ মানাতে সড়কে নেই কোনো ধরনের তদারকিও। অধিকাংশ বাসে অফিসগামী যাত্রীদের ঠাসাঠাসি করে উঠানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার নীতি মানছেন না যাত্রীদের অনেকে। মাস্ক থাকলেও তা কারও হাতে, কারও পকেটে। অধিকাংশ হেলপার ও চালকের মাস্ক ঠাঁই পেয়েছে থুতনিতে। সব সিটে যাত্রী নেয়ার পাশাপাশি দাঁড়িয়েও যাত্রী নেয়া হচ্ছে। যাত্রী ওঠানো এবং নামানোর ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। বসুমতি, ওয়েলকাম পরিবহন, মিরপুর মেট্রো সার্ভিস, বৈশাখী পরিবহন, প্রজাপতি, ৮নং বাস, লাব্বাইক, মৌমিতা, ভ‚ঁইয়া পরিবহন, ট্রান্স সিলভা, ঠিকানা, বাহন পরিবহন, সৌদিয়া মিনি বাস, আলিফ, অগ্রদূত, এস এম লাভলী, দিশারী, নিউ ভিশন, সজন, হিমাচল, তালুকদার ও সাভার পরিবহনসহ সব গণপরিবহনে একই অবস্থা।
এদিকে, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ মেনে চলাচল করছে রেল। মোট আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলছে আন্তঃনগর রেল। গতকাল শনিবার থেকে নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। সকালে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সব রেলে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে বেশ সচেষ্ট দেখা গেছে কমলাপুর স্টেশনের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্টেশনের উদ্দেশ্যে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে গেছে অর্ধেক আসন ফাকা রেখেই। টিকিটও বিক্রি হয়েছিলো তেমনই অর্ধেক আসনের। শুধু ট্রেনেই না, স্টেশন চত্বরেও বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে কঠোরভাবে। যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণে গত ১২ জানুয়ারি থেকে আন্তঃনগর ট্রেনে মোট আসন সংখ্যার অর্ধেক টিকিট বিক্রি শুরু হয়। হ্রাসকৃত টিকিটের ৫০ শতাংশ মোবাইল অ্যাপ বা অনলাইনে এবং বাকিটা কাউন্টার থেকে কেনা যাবে বলে জানায় রেল কর্তৃপক্ষ।
রেলের যাত্রী রফিকুল ইসলাম জানান, আগের চেয়ে এখন স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে রেল কর্তৃপক্ষ বেশি তদারকি করছে। নিরাপত্তাকর্মীরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভ‚মিকা রাখছে। যাত্রীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করার কাজ করছেন। আর সামাজিক দূরত্ব মানার ক্ষেত্রে নির্দেশনা দিচ্ছেন।
কমলাপুর স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারোয়ার জানান, সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ মেনে চলার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সবগুলো ট্রেনে যাত্রা শুরুর আগে এবং শেষে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে। সকাল থেকে ছেড়ে যাওয়া সকল আন্তঃনগর ও লোকাল ট্রেন অর্ধেক আসন নিয়ে ছেড়ে গেছে।
অপরদিকে, গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ও সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা তদারকির জন্য রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত নামিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন অথরিটি (বিআরটিএ)। গতকাল শনিবার বিভিন্ন এলাকায় এসব ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় বেশ কিছু পরিবহনকে জরিমানার আওতায় আনা হয়। পাশাপাশি মাস্ক পরিধান না করে গণপরিবহনে চলাচল করায় বহু যাত্রীদের সতর্ক করা হয়। শাহবাগ, গুলিস্তান, ফুলবাড়ীয়া বাস টার্মিনাল, মতিঝিল, রমনা, ওয়ারী, চকবাজার, গেÐারিয়া, ডেমরা, বংশাল, লালবাগ, শ্যামপুর, সূত্রাপুর, হাজারীবাগ ও সদরঘাট ও এর আশপাশ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত-১ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আয়েশা আক্তারের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এলাকায় পরিচালিত হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত-৪। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজা পারভিন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসিন মনিরার নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত-৫ এর অভিযান পরিচালিত হচ্ছে ইসিবি চত্বর, বনানী, কাকলী রেলস্টেশন এলাকা, মহাখালী বাস টার্মিনাল, গাজীপুর সড়কে সিটি করপোরেশন সীমানা এলাকা, ৩০০ ফিট এলাকা এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মহাসড়কে সিটি সীমানা ও এর আশপাশ এলাকায়।
দিয়াবাড়ী, জোয়ারসাহারা, খিলক্ষেত, ঢাকা-আব্দুল্লাহপুর সড়কে সিটি করপোরেশন সীমানা এবং উত্তরা এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত-৬ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাজিদ আনোয়ারের নেতৃত্বে একটি অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। তেজগাঁও, ফার্মগেট, আদাবর, কলাবাগান, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, মোহাম্মদপুর, বসিলা ব্রিজ, বাবু বাজার এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত-৭ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাকিলা বিনতে মতিনের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত-৮ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে মিরপুর, কল্যাণপুর, গাবতলী বাস টার্মিনাল এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সিটি করপোরেশন সীমানা এলাকায়। আর গুলশান, ভাটারা, বাড্ডা, শাহাজাদপুর এবং রামপুরা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ১০ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জুবের আলীর নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
আবুল হাশেম নামের এক বাস যাত্রী বলেন, সকালে অফিসে যেতে হয়। তখন গণপরিবহন থাকে কম। কিন্তু সব বাসে উঠতে পারি না। কোন কোন বাসে হেলপাররা ডেকে ডেকে উঠায়। তখন বাসে সিট না থাকলে বাধ্য হয়েই দাঁড়িয়ে যেতে হয়। আর যাত্রীদের অনেকের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। প্রয়োজনের তাগিদেই আমাদের এভাবে চলতে হয়।
সায়েদাবাদ-মিরপুর রুটে চলাচল একটি পরিবহনের বাসের হেলপার কায়েস বলেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার আছে আছে কিন্তু যাত্রীরা কখনো চায়না। যাত্রীদের মাস্ক পরতে আমরা বললে তারা আমাদের কথা রাখেন না। তাই আমরা যাত্রীদের মাস্ক পরার কথা বলি না।
শিকড় পরিবহনের হেলপার রুহুল আমিন বলেন, সব সিটেই যাত্রীরা বসছেন। নির্দেশনা মেনেই যাত্রীদের বসতে বলি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহনের চেষ্টাও করি কিন্তু সিট ভর্তি হয়ে যাওয়ার পরেও অনেক যাত্রী জোর করে বাসে উঠে যায়। তখন তাদের নামাতে পারি না। বাস থেকে নামতে বলছে ঝগড়া হয়।
বাংলাদেশ সড়ক পরবিহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, বাসের অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহনে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। তাই বাসভাড়া নির্ধারণ নিয়ে মালিক সমিতির নেতাদের নিয়ে নিজ কার্যালয়ে বৈঠক করেছি। মালিকদের সবাই বিদ্যামান ভাড়ায় যাত্রী পরিবহনের পক্ষে মত দিয়েছেন। তাই বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করা হবে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সব আসনে যাত্রী পরিবহন করা হোক, কিন্তু তাতে যাতে স্বাস্থ্যবিধি পরিপূর্ণভাবে পরিপালন করা হয়। সেদিকে সরকারের নজরদারি রাখতে হবে। কিন্তু কোথাও কোনও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। কারো কোন নজরদারি নেই। যে যার মতো চলছে। এভাবে চলতে থাকলে করোনা মহামারি আরও ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় কঠোর জোর দিয়ে যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।