পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ দেশের মানুষের জন্য যে মানুষটার বুক ভরা ভালোবাসা ছিল, যে মানুষগুলো আমাদের ঘরে বসে খেয়ে পরে গেল- তারা কীভাবে ওই বুকে গুলি চালায়? বাংলাদেশের মাটি অনেক উর্বর। এখানে যেমন অনেক ভালো মানুষ জন্মে, তেমনি পরগাছাও জন্ম নেয়। তেমন বেঈমান পরগাছাও এদেশে ছিল। তাদের ইচ্ছা ছিল এদেশ যেন উন্নতি করতে না পারে। এরা মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল।
গতকাল বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এই আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত থেকে সভাপতিত্ব করেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাহাত্তরে বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পর থেকেই কিছু কিছু লোকের শুরু হলো নানা ধরনের সমালোচনা। এটা হলো না, ওটা হলো না। এই হচ্ছে না, সেই হচ্ছে না। একবার তারা ভেবে দেখলো না, এই দেশটা ছিল পরাধীন। দুইশ বছর ব্রিটিশদের গোলামি করেছে। তারপর ২৩ বছর পাকিস্তানিদের গোলামি করতে হয়েছে। এরপর মুক্তিযুদ্ধ করতে হয়েছে। পাকিস্তানের একটি প্রদেশকে যিনি রাষ্ট্রে উন্নীত করেছেন, ধীরে ধীরে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয় যাচ্ছেন। কিন্তু তাকে সময় দেওয়া হলো না। যারা সেই সময় এ রকম কলাম লিখেছেন, আন্দোলন বা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। তারা কী ভেবেছিল? কী করতে চাচ্ছিল তারা? সেটাই আমার প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের উত্তর আজও পাইনি।
স্বাধীনতার পর পাকিস্তান কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ভুট্টো নিজের চামড়া বাঁচাতে এবং বাংলাদেশে আটকে পড়া ৯৬ হাজার পাকিস্তানিকে ফেরত নিতে ও আন্তর্জাতিক চাপে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশে ফিরে তিনি সবার আগে ফিরে যান দেশের মানুষের কাছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশের দায়িত্ব নিয়ে পরিবর্তন শুরু করেন। মাত্র সাড়ে ৩ বছরে স্বল্পোন্নত দেশের স্বীকৃতি আদায় করে দেন। মানুষ ও দেশের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে এগুলো হতো না।
শেখ হাসিনা বলেন, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ও পাকিস্তান আধা ঔপনিবেশিক আমলের যে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা তা পরিবর্তন করে বাংলাদেশের গ্রামের তৃণমূলের মানুষের হাতে ক্ষমতার অধিকার দিতে চেয়েছিলেন। জনগণকে প্রজাতন্ত্রের মালিক করতে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি দিয়ে সেই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সার্বিক উন্নয়নকে কেন্দ্রীভূত না রেখে বিকেন্দ্রীকরণ করে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে চেয়েছিলেন। যেন বাংলাদেশ কারও মুখাপেক্ষী না হয়। দেশের মানুষ যেন বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। যখনই তিনি ঘুণে ধরা সমাজ ভেঙে নতুন সমাজ বিনির্মাণের পদক্ষেপ নেন তখনই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পরে যারা হত্যা-ক্যুর ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, তার দেশকে কি দিয়েছিল? অনেকে গালভরা বুলি দিয়েছে, গণতন্ত্র দিয়েছি! কিন্তু কি গণতন্ত্র? আজকে নির্বাচন নিয়ে যারা কথা বলে, প্রশ্ন তোলে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন পচাত্তরের পরে সংবিধান লঙ্ঘন করে মার্শাল ল জারি করে ক্ষমতা দখল করা হয়েছিল। একটা নয়, ১৯/২০ বার ক্যু হয়েছে সেনাবাহিনীতে। তার ফলাফলটা কি? মুক্তিযোদ্ধা, সৈনিক, অফিসার, রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা ও গুম করা হয়েছে। এরপর রাজনীতি করার শখ হয়। সেই খায়েস মেটাবার জন্য মেলিটারি ডিকটেটররা প্রথমে হ্যা-না ভোট হয়।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের হ্যা-না ভোটে কি কারো না করার ক্ষমতা ছিল? সবই তো হ্যা ভোট পড়ার ছিল। তরপর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, সামরিক বাহিনীর রুলস-রেগুলেশনে একজন সেনাপ্রধান কখনো নির্বাচন করতে পারে না। কিন্তু একদিনে সংবিধান লঙ্ঘন করে অন্যদিকে সেনাবাহিনীর রুলস ভঙ্গ করে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে উর্দি পড়ে ক্ষমতায় বসে। একদিকে সেনাবাহিনী প্রধান, একদিকে স্ব ঘোষিত প্রেসিডেন্ট! অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী। সেই নির্বাচনে জনগণ কি ভোট দিতে পেরেছিল? সেখানে ভোট ছিল কোথায়? তারপর আবার দল গঠন করা হলো। ক্ষমতায় বসে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ঠ বিলিয়ে দল গঠন করা। সেই দলেরই নাম হচ্ছে বিএনপি।
১৯৮১ সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমস্ত জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর অকথ্য নির্যাতন হয়। ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। মানুষ হত্যা করা হয়। এরপর আসি ছিয়াশির নির্বাচনে। ৪৮ ঘণ্টা নির্বাচনের রেজাল্ট বন্ধ করে তা পাল্টে দেওয়া হলো। একানব্বই সালের নির্বাচন, কোনো দলই তখন সংখ্যা গরিষ্টতা পেল না। তখনকার প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিন সাহেব আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিলÑ জামায়াত আর জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে হবে। কিন্তু আমরা মেজোরিটি পাই বলে সেই প্রস্তাবে রাজি হইনি। আমি বলেছিলামÑ এই দুর্বল অবস্থায় আমি ক্ষমতায় যেতে চাই না। বিএনপি জামায়াতের সহযোগিতায় সরকার গঠন করে।
তিনি আরো বলেন, ছিয়ানব্বই সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কথা মানুষ ভুলে যায় কিভাবে? যারা আমাদের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে, ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তাদের আমি জিঙ্গেস করিÑ ছিয়ানব্বই সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কেমন নির্বাচন করেছিল? কত শতাংশ ভোট পড়েছিল? ৪ শতাংশ ভোটও পড়েনি। সমস্ত জায়গায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করে দিয়ে ভোটের বাক্স সিল দিয়ে ভরে খালেদা জিয়া নাকি তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী! কিন্তু জনগণের ভোট চুরি করেছিল বলে কি হয়েছিল তার পরিণতি, গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল। আন্দোলন ও সংগ্রাম হয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়া বাধ্য হয়েছিল পদত্যাগ করতে। আজকে যারা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাদের আমি স্মরণ করাতে চাই, ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার পদত্যাগের কথা। তাদের তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী তো তিন মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারে নাই। কারণ ভোট চুরির অপরাধে নাকে খদ দিয়ে তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। প্রেসিডেন্টের ভবনে পদত্যাগ করতে যেতে আমাদের, জনগণের পারমিশন নিয়ে যেতে হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল। ভোট চুরি করলে জনগণ ছেড়ে দেয় না। এটাই বাস্তবতা।
শেখ হাসিনা বলেন, এরপর ছিয়ানব্বই সালের ১২ জুন নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। সেখানেও অনেক বাধা এসেছিল। কিন্তু আমরা সরকার গঠন করেছিলাম। বাংলাদেশের মানুষের স্বর্ণযুগ এসেছিল। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পায়। রাস্তাঘাট পুল ব্রিজ নির্মাণসহ অনেক কাজ আমরা করি। আমি এতো কিছু বলতে চাই, শুধু স্মরণ করাতে চাই এদেশের নির্বাচনের খেলা। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচন। আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করেছিল। জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে। ভোটের শতকরা হারেও আওয়ামী লীগ অনেক এগিয়েছিল। কিন্তু সেখানে বড় একটা বড় চক্রান্ত হয়েছিল। ফলে আমাদের সিট পেতে দেওয়া হয়নি। তার কারণ ছিল আমাদের প্রকৃতিক গ্যাস।
২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হারানোর জন্য অনেক ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব কথা কি কারো মনে আছে? যারা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা ভুলে যান কেন? আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সারা দেশে কেউ ঘরে থাকতে পারেনি। তাদের পিটিয়ে ঘর ছাড়া করা হয়। অকথ্য অত্যাচার করা হয়। আওয়ামী লীগের ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়নি। হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়।
খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে জেলে। দয়া করে আমরা তাকে বাসায় থাকতে দিয়েছি। বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। তার ছেলে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা এবং দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, বিদেশে পালিয়ে ফিজিটিভ হয়ে গেছে। কিন্তু তার যত ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। আজ বাংলাদেশের উন্নয়নের কোথায় কম আছে? যারা শুধু এ দেশের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আর বলেন উন্নয়নে নাকি হাজার হাজার কোটি টাকা ধ্বংস হয়েছে! যদি ধ্বংসই হয়ে থাকে এতো উন্নয়ন হলো কিভাবে সেই প্রশ্নও তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, সভাপতিমণ্ডলির সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সম্পাদক ডা. দীপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।