Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মানুষের ভাগ্য গড়তে হবে

‘মুক্ত স্বদেশে জাতির পিতা’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশে পরিণত করার মাধ্যমে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোটাই লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিদ্যমান অগ্রগতি ধরে রাখতে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য যে স্বপ্ন নিয়ে জাতির পিতা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো এবং বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলা। আজকের দিনে সে প্রত্যয়ই ব্যক্ত করছি। তিনি বলেন, ইনশাআল্লাহ যতটুকু পারি জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের ভাগ্যটা পরিবর্তন করে দিয়ে যাব এবং দেশবাসীকেও আমি সে আহ্বানই জানাই- আজকের যে অগ্রগতিটা হয়েছে সেটা ধরে রেখে আমরা যেন আরো এগিয়ে যেতে পারি সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত ‘মুক্ত স্বদেশে জাতির পিতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বে সভাপতির ভাষণে একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর রামপুরাস্থ বাংলাদেশ টেলিভিশন সেন্টারে (বিটিভি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এই বিশেষ অনুষ্ঠানটি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় বাঙালির হৃদয়ে ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পাকিস্তানি সেনারা তাকে সে দেশে নিয়ে বন্দি করে রাখে। কিন্তু তিনি সবসময় মুক্তিকামী মানুষের পাশে ছিলেন। তিনি সশরীরে আমাদের মধ্যে ছিলেন না, কিন্তু তিনি বাঙালির হৃদয়ে ছিলেন। তার ৭ মার্চের ভাষণ ধারণ করে বাঙালি জাতি যুদ্ধ করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি লক্ষ্য অর্জন করেছিলেন। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬ দফা, ৭০-এর নির্বাচন, ৭ মার্চের ভাষণ, সর্বশেষ আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের সর্বাগ্রে ছিলেন তিনি। তার ভাষণ মুক্তিকামী মানুষকে প্রেরণা জুগিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর যেদিন তিনি দেশে এলেন, দিনটি আমাদের জন্য কেমন ছিল তা ভাষায় বোঝাতে পারবো না। ১০ জানুয়ারি তিনি ফিরে আমাদের (পরিবার) কাছে আসেননি। তিনি সোজা চলে গেলেন তার প্রিয় জনতার কাছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ১০ জানুয়ারির যে ভাষণ, তার মধ্যে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র কীভাবে চলবে তার দিকনির্দেশনা তিনি দিয়েছিলেন। তার এই ভাষণে বাংলা কেমন হবে তা উঠে এসেছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে ৩ বছর হাতে সময় পেয়ে জাতির পিতা বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে একেবারে তৃণমূলের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন, তাদের ক্ষমতায়ন করতে চেয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই জাতির পিতা সাধারণ মানুষ তথা তৃণমূলের মানুষের ক্ষমতায়নের জন্য পদক্ষেপ নিলেন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পদক্ষেপ নিলেন তখনই কিন্তু ১৫ আগস্টের আঘাতটা এল। এই আঘাতটা শুধু একজন প্রেসিডেন্টকে হত্যা নয়, এই আঘাত ছিল একটি স্বাধীন দেশের আদর্শ ও চেতনাকে হত্যা করা।
কেননা ১৫ আগস্টের পর থেকে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা সেভাবেই রাষ্ট্রটা চালিয়েছিল। ১৫ আগস্টের খুনীরা স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারি-তারাই ক্ষমতায় বসেছিল। আর মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কোন চেষ্টাই তারা করেনি। কাজেই যে মানুষগুলোর জন্য তিনি (জাতির পিতা) নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন, আজীবন জেল, জুলুম, অত্যাচার সহ্য করেছেন সেই মানুষগুলোর ভাগ্য গড়াটাই আমাদের লক্ষ্য।

তিনি ভোট দিয়ে বারবার নির্বাচিত করায় দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করে বলেন, তারা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন, বার বার আমি ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি এবং সব থেকে বড় কথা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে ফিরে আসার স্মরণে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসটি পালন করতে পারছি।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ভির্সি এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসস এর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান প্রফেসর আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী স্বাগত ভাষণ দেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে এই মহান নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ছোট বোন ও জাতির পিতার ছোট মেয়ে শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে গতকাল ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত তার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামীলীগ, ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ।

টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা : স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে।
গতকাল কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষে সভাপতিমন্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খানের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পন করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এমপি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে নেতৃবৃন্দ জাতির পিতা ও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনায় ফাতিহা পাঠ, দোয়া ও মোনাজাত করেন।



 

Show all comments
  • Emran Emu ১১ জানুয়ারি, ২০২২, ১:২২ এএম says : 2
    গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Mannan Shahin ১১ জানুয়ারি, ২০২২, ১:২২ এএম says : 1
    আমরা পেয়েছি প্রানের প্রিয় বাংলাদেশ, আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের50 স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Sohel Howlader ১১ জানুয়ারি, ২০২২, ১:২৩ এএম says : 2
    বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রেষ্টা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে "বিনম্র শ্রদ্ধা"
    Total Reply(0) Reply
  • MD Year Ali Sikder ১১ জানুয়ারি, ২০২২, ১:২৩ এএম says : 2
    ১০ই জানুয়ারি মহাবিজয়ের মহানায়ক স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে চিরন্তন ভালোবাসায় গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Abir Hasan ১১ জানুয়ারি, ২০২২, ১:২৩ এএম says : 2
    যে জাতিকে মুক্ত করার জন্য জীবন বাজি রাখলেন এই মহান নেতা সেই জাতি তাকে মূল্য দিতে পারলো না। অকৃতজ্ঞ জাতির জন্য মানুষ টা এতকিছু করলেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Maria Rusa ১১ জানুয়ারি, ২০২২, ১:২৪ এএম says : 2
    অন্তর থেকে মহানায়কের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করছি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ