Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পদ্মা ব্যাংককে সব আইন ও আন্তর্জাতিক মানদন্ড মেনেই অনুমতি- ব্যবস্থাপনা পরিচালক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০২২, ৫:৩৭ পিএম

বিদেশি বিনিয়োগ আনতে পদ্মা ব্যাংককে কোনো ছাড় নয়; বরং ব্যাংকটির আর্থিক বিবরণী সুসংহত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা করেছে বলে জানিয়েছেন চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এহসান খসরু। তিনি বলেছেন, সব আইন, নিয়ম-কানুন এবং আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্টিং মানদ- মেনেই এ অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এহসান খসরু বলেন, ব্যাংকটিতে বিদেশি বিনিয়োগ আনার প্রক্রিয়া সহজ এবং সরলীকরণ করার জন্য নিয়ম-কানুন মেনে গবেষণা করে ব্যাংকটিকে আরও ভালো করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পদ্মা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের পথকে মসৃণ করে দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে পদ্মা ব্যাংকের আর্থিক বিবরণী সুসংহত করতে সহায়তা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক; কোনো ছাড় দেয়নি। সব কিছু স্বচ্ছতার সঙ্গে হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) শনিবার যে বিবৃতি দিয়েছে, সে প্রসঙ্গে এহসান খসরু বলেন, একটা আন্তর্জাতিক সংগঠন এমন একটি স্বচ্ছ উদ্যোগকে ‘প্রতারণামূলক সুবিধা’ বলে আখ্যায়িত করে বিবৃতি দেয়ায় হতবাক হয়েছি। কোনো ধরনের গবেষণা না করে, ভালোভাবে বিচার-বিশ্লেষণ, যাচাই-বাচাই না করে শুধু গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এমন একটি মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক বিবৃতি কী করে দেয় একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন! এটাকে আমি স্বচ্ছ একটি প্রতিষ্ঠানের অস্বচ্ছ বিবৃতি বলছি। এ ধরনের উদ্ভট বিবৃতি টিআইবি কোনোভাবেই দিতে পারে না।

পদ্মা ব্যাংককে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং টিআইবির ‘বিতর্কিত’ বিবৃতি প্রসঙ্গে রোববার (৯ জানুয়ারি) এক বিজ্ঞপ্তিতে এহসান খসরু এ সব কথা বলেন। পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসান খসরু বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পদ্মা ব্যাংককে যে সহায়তা করছে, সেটা বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। এর আগে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংককে একই ধরনের সহায়তা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক ডেলমর্গান অ্যান্ড কোম্পানি পদ্মা ব্যাংকে ৭০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছে। এর অর্ধেক বিনিয়োগ হবে মূলধন হিসেবে। বাকি অর্ধেক হবে বন্ড বা অন্য উপায়ে। এই বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতিসহ সব ধরনের নিয়ম-কানুন মেনে পদ্মা ব্যাংক কাজ করছে।

এহসান খসরু বলেন, ‘পদ্মা ব্যাংকের ২০২০ সালের আর্থিক বিবরণী ভালোভাবে দেখে বিশ্লেষণ করে গবেষণা করে ডেলমর্গান পদ্মা ব্যাংকে বিনিয়োগ করতে রাজি হয়েছে। ব্যাংকটির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, এখান থেকে তারা ভালো মুনাফা পাবেÑএ সব বিচার-বিশ্লেষণ করেই ডেলমর্গান এই ব্যাংকে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এখানে কোনো ধরনের অস্বচ্ছ তথ্য দেয়া হয়নি। কোনো ধরনের প্রতারণারও আশ্রয় নেয়া হয়নি। গণমাধ্যমে যেসব প্রতিবেদন এসেছে এবং যার ওপর ভিত্তি করে টিআইবি বিবৃতি দিয়েছে, তার সবই মিথ্যা, অসত্য এবং বিভ্রান্তিমূলক।

তিনি বলেন, সদ্য শেষ হওয়া ২০২১ সালের আর্থিক বিবরণী আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবে পদ্মা ব্যাংক। যা স্বচ্ছতা-জবাবদিহির সঙ্গে তৈরি করা হচ্ছে। এখানে প্রতারণার প্রশ্ন কেন আসছে, বুঝতে পারছি না।

সাবেক ফারমার্স ব্যাংক থেকে নতুনভাবে পদ্মা ব্যাংক তার কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে কোনো ধরনের প্রতারণা হয়নি; সবকিছু স্বচ্ছতা-জবাবদিহির সঙ্গে হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম-কানুন, বিধি-বিধান মেনেই হয়েছে।

ফারমার্স ব্যাংক নাম থাকাকালে ঋণ বিতরণে নানা অনিয়মের কারণে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকটির ঋণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে ব্যাংকটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন ঘটে। সরকারের উদ্যোগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) মিলে ৭১৫ কোটি টাকার মূলধনের জোগান দেয়। ফলে ব্যাংকটির মোট মূলধনের ৬৬ শতাংশই সরকারি ব্যাংকের হাতে।

এহসান খসরু বলেন, গত চার বছরে আমরা ব্যাংকটির অনেক উন্নতি করেছি। গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করেছি, আমানত বেড়েছে। ঋণ বিতরণও করছি আমরা এখন। বাংলাদেশ ব্যাংকও আমাদের কাজে খুশি; আমাদের ওপর আস্থা রেখেছে। ডেলমর্গানও অ্যানালাইসিস করে দেখতে পেরেছে, এই ব্যাংকে বিনিয়োগ করলে তারা ভালো রিটার্ন পাবে। সে কারণেই বিনিয়োগের ব্যবস্থা করছে তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকও সেই বিনিয়োগে সব ধরনের সহায়তা করছে। এখানে অস্বচ্ছভাবে কোনো কিছু হচ্ছে না। সব কিছু স্বচ্ছতা-জবাবদিহির সঙ্গেই হচ্ছে।

টিআইবির বিবৃতি প্রসঙ্গে পদ্মা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী এহসান খসরু বলেন, যারা (টিআইবি) স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করে, তারা অস্বচ্ছ ধারণা বা চিন্তা নিয়ে কী করে এ ধরনের বিবৃতি দেয়, আমি বুঝতে পারি না।

শনিবার সন্ধ্যায় ‘বিদেশি বিনিয়োগ আনতে পদ্মা ব্যাংককে আর্থিক বিবরণীতে অনৈতিক ও প্রতারণামূলক সুবিধা দেয়া নিয়ে টিআইবির উদ্বেগ; দীর্ঘ মেয়াদে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ও সুনাম অধিকতরক্ষুণ্ন হবার শঙ্কা’ শীর্ষক বিবৃতিতে সংস্থাটি, ‘ক্রম পুঞ্জীভূত মূলধনসংকট সামাল দিতে’ বিদেশি বিনিয়োগ আনার শর্ত হিসেবে পদ্মা ব্যাংকের আর্থিক বিবরণী থেকে লোকসানের তথ্য গোপন করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে।

সংস্থাটি এমন সুবিধাকে অনৈতিক ও প্রতারণামূলক আখ্যা দিয়ে বলছে, এটি সামনের দিনে আর্থিক খাতে শৃক্সখলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশ্বাসযোগ্যতার সমস্যাকে প্রকটতর করার পাশাপাশি বিদেশে সুনামক্ষুন্ন করার ঝুঁকি তৈরি করবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ