Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫০০ কোটি টাকার স্কিম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:৩৮ পিএম

করোনা মহামারিতে শহরে জীবিকার উপায় হারিয়ে গ্রামে ফিরে যাওয়া জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনে ৫০০ কোটি টাকার একটি স্কিম হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘ঘরে ফেরা’ নামের পুনঃঅর্থায়ন এ স্কিমের আওতায় ঋণ পাবেন করোনা মহামারিতে কর্মসংস্থান হারিয়ে বেকার হয়ে পড়া জনগোষ্ঠী।

সোমবার (৩ ‍জানুয়ারি) এ তহবিল গঠন ও পরিচালনা নীতিমালা-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি বিভাগ।

দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের প্রধানদের উদ্দেশে জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‌কোভিড-১৯ মহামারি কারণে শহরকেন্দ্রিক জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মজীবী মানুষ হঠাৎ কর্ম হারিয়ে গ্রামাঞ্চলে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এসব মানুষের অধিকাংশই এখন গ্রামে অবস্থান করছেন। মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ সুবিধার আওতায় এসব জনগোষ্ঠীকে আনা একান্ত প্রয়োজন। অন্যথায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, এসব জনগোষ্ঠীর জন্য গ্রামেই উপযুক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হলে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা হবে। ফলে সামগ্রিক অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামাঞ্চলে আয় উৎসারী কর্মকান্ড অধিকতর গতিশীল করার লক্ষ্যে স্বল্প সুদে প্রয়োজনীয় ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করা আবশ্যক। এ লক্ষ্যে এর আগে গৃহীত বিভিন্ন প্রণোদনামূলক পদক্ষেপের ধারাবাহিকতায় কোভিড-১৯ মহামারি ও অন্যান্য কারণে কর্মজীবী/শ্রমজীবী/ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ আয় উৎসারী কর্মকান্ডে নিয়োজিত ব্যক্তি তাদের নিজ নিজ কর্ম হারানোর কারণে গ্রামে ফিরে যাওয়ার ফলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনে ৫০০ কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

জানা গেছে, ওই তহবিলের পরিমাণ প্রয়োজনে বৃদ্ধি করা যাবে। এ তহবিলের উৎস বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল। স্কিমের মেয়াদ থাকবে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে গ্রাহক পর্যায় থেকে আদায় কার্যক্রম স্কিমের মেয়াদ পরবর্তী সময়েও অব্যাহত থাকবে। স্কিমে অংশগ্রহণ করবে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকসমূহ। এ ছাড়া বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকসমূহের মধ্যে যে সব ব্যাংক আলোচ্য কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগের প্রধান কার্যালয় বরাবর আবেদন করে কর্মসূচিতে অংশ্রগ্রহণ করতে পারবে।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ব্যাংকসমূহের কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা, ঋণ বিতরণের সক্ষমতা ইত্যাদির ভিত্তিতে কৃষি ঋণ বিভাগ ব্যাংকসমূহের অনুক‚লে তহবিল বরাদ্দ করবে। অংশগ্রহণকারী ব্যাংক এ স্কিমের আওতায় সময়ে সময়ে ঋণ বিতরণের সক্ষমতা পর্যালোচনা শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক পরবর্তীতে প্রয়োজনবোধে বরাদ্দ তহবিলের পরিমাণ পুনর্র্নিধারণ করতে পারবে।

এ ছাড়া গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণের পর পেশ করা পুনঃঅর্থায়ন দাবি পর্যালোচনাপূর্বক পর্যায়ক্রমে বরাদ্দ তহবিলের সমপরিমাণ অর্থায়ন করা হবে। স্কিমের আওতায় অংশগ্রহণকারী ব্যাংকসমূহ নিজস্ব নেটওয়ার্ক অর্থ্যাৎ শাখা, উপশাখা, এজেন্ট, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ ও আদায় করতে পারবে। প্রয়োজনবোধে আউটসোর্সিং ফেসিলিটেটর (শাখা প্রতি একজন) নিয়োগ করে তাদের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ মঞ্জুরির জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা গ্রহণসহ ঋণ আদায় কার্যক্রমে ফেসিলিটেটর সহায়তা গ্রহণ করতে পারবে। তবে এ ঋণ প্রদান কার্যক্রমে এনজিও, ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান বা অনুরূপ অন্য কোন প্রতিষ্ঠানকে ফেসিলিটেটর এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে না।

এ স্কিমের আওতায় ঋণ গ্রহণকারী খেলাপি না হলে ঋণ পরিশোধের পর পুনরায় নতুন ঋণ গ্রহণ করতে পারবে। তবে গৃহীত ঋণ কোনোভাবেই গ্রাহকের পুরাতন ঋণ সমন্বয়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। এদিকে অংশগ্রহণকারী ব্যাংকসমূহ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্ধারিত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ সুদ বা মুনাফা হারে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা পাবে। এবং গ্রাহক পর্যায়ে সুদ বা মুনাফা হার হবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ (সরল সুদ হারে)। সে সুদ বা মুনাফা হার সকল গ্রাহকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। সেই সঙ্গে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে কোন নিরাপত্তা জামানত গ্রহণ করা যাবে না।

স্বল্প পুঁজির স্থানীয় ব্যবসা, পরিবহন খাতেক্ষুদ্র ও মাঝারি যানবাহন ক্রয়, ক্ষুদ্র প্রকৌশল শিল্প, মৎস্য চাষ, গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন, তথ্য প্রযুক্তি সেবা কেন্দ্র ও অন্যান্য সেবা উৎসারী কর্মকান্ড, বসতঘর নির্মাণ বা সংস্কার, সবজি ও ফলের বাগান, কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় ও ফসল বিপণন এছাড়াও গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার করে এমন কর্মকান্ড যেমন ছোট ছোট ব্যবসা, বিশেষ করে ধান ভাঙানো, চিড়া বা মুড়ি তৈরি, নৌকা ক্রয়, মৌমাছি পালন, সেলাই মেশিন ক্রয়, কৃত্রিম গহনা তৈরি, মোমবাতি তৈরি, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও দরিদ্র মহিলাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এমন ক্ষেত্রে এ স্কিমের আওতায় ঋণ প্রদান করা যাবে। সরকারি সংস্থাসমূহ হতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।

এ ছাড়া স্কিমের আওতায় বিতরণ করা ঋণের মধ্যে নারী ঋণ গ্রহীতা বা উদ্যোক্তাদের ন্য‚নতম ১০ শতাংশ ঋণ বা বিনিয়োগ প্রদান করতে হবে। গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের পরিমাণ ২ লাখ টাকা ৩ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ ঋণের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ২ বছর বা ২৪ মাস। ঋণের পরিমাণ ২ লাখ টাকার বেশি তবে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ৬ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ ঋণের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৩ বছর বা ৩৬ মাস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ