Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাড়ছে না ঋণ পরিশোধের মেয়াদ

কিস্তি শোধে আরও সময় চান উদ্যোক্তারা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প খাতকে কিছুটা নীতিসুবিধা দিতে খেলাপি হওয়ার সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। চলতি ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক ঋণের কিস্তি শোধ না করলেও কোনো গ্রাহককে খেলাপি করা যাবে না-বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন নির্দেশনায় উদ্যোক্তাদের নাভিশ্বাস কিছুটা কমেছিল। তবে দুই বছর পর এই সুবিধা উঠিয়ে নিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণের ২৫ শতাংশ পরিশোধ করেই খেলাপির বাইরে ছিলেন গ্রাহক। তবে বিশেষ এ সুবিধা তুলে নেওয়ার ফলে ডিসেম্বরের পর ঋণ পরিশোধ না করলেই গ্রাহক খেলাপিতে পরিণত হবেন। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আয়োজিত ব্যাংকার্স সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। সভা শেষে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০২১ সালে ২৫ শতাংশ ঋণ পরিশোধ করেই খেলাপির বাইরে ছিলেন গ্রাহক। বেশিরভাগ গ্রাহকই এই টাকা পরিশোধ করেছেন। কিছু গ্রাহক এখনো নতুন সুবিধার আশায় রয়েছেন। কিন্তু এই সুবিধা আর বাড়ানো হবে না।
তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্র গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রেও বিশেষ সুবিধার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মাত্র ১৫ শতাংশ অর্থের মাধ্যমেই খেলাপি হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যাবেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। এখানে বিশেষ সুবিধা হিসেবে আরও রাখা হয়েছে এক দশমিক ৫০ শতাংশ প্রভিশনে ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ। এ সুবিধা শুধু করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য।

কিন্তু করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, কনটেইনার সংকট, জ্বালানির অপ্রতুলতা প্রভৃতি কারণে উদ্যোক্তারা ধরাশায়ী হয়ে আছেন। এ অবস্থায় সম্ভাব্য স্বাভাবিক পরিস্থিতি এখনো ধরা দিচ্ছে না। ফলে, স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারছেন না উদ্যোক্তারা। তাই তারা ঋণের কিস্তি পরিশোধে আরো সময় চান।

এরআগে ১৫ ডিসেম্বর ব্যাংক খাতে ঋণ পরিশোধের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর জন্য গভর্নর বরাবর আবেদন জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআিই। সেই চিঠিতে বলা হয়, করোনার কারণে ব্যবসায়ীরা এখনো ভয়াবহ অবস্থা পার করছেন। তাই ২৫ শতাংশ পরিশোধের শর্ত শিথিল করে ঋণ শ্রেণিকরণ সুবিধার মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। তবে ব্যবসায়ীদের সে দাবিতে সায় দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

করোনাকালীন অর্থনীতির সংকট মোকাবিলায় ২০২০ সাল জুড়ে ঋণের কিস্তির এক টাকা শোধ না করলেও গ্রাহককে খেলাপি করতে পারেনি ব্যাংক। চলতি বছর শুরু হয় ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি ৬ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ নিয়ে। এ বছর নতুন করে আগের মতো সব সুযোগ দেওয়া হয়নি। একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা, চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে তার ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলেও তাকে আর খেলাপি করা যাবে না। তবুও খেলাপি ঋণ বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকায়। বর্তমানে তা এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সবশেষ ব্যাংকিং খাতের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ৮.১২ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ব্যবসা বন্ধ কিংবা কিস্তি প্রদান না করলেও সুদের চাকা কিন্তু বন্ধ নেই। এটা ঠিকই চলমান রয়েছে। তাছাড়া, ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ প্রভিশন করে লভ্যাংশ বা ডিভিডেন্ট ঘোষণা করছে। কাজেই, ব্যাংক অনাদায়ি কিস্তি (সুদসহ) ও আরোপিত সুদ যোগ করে পুনরায় আসল হিসেবে ধরে নিয়ে করে কিস্তি পুননির্ধারণ করবে। তখন বেশির ভাগ উদ্যোক্তার পক্ষেই কিস্তি পরিশোধ করা তার সক্ষমতাই বাইরে চলে যাবে। একরকম বাধ্য হয়েই খেলাপির পথে হাঁটতে হবে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সহমত পোষণ করছেন অর্থনীতিবিদরাও। তারা বলছেন, ব্যাংকের চাপ থাকলে গ্রাহক মানসিক বিপর্যয়ে পড়বেন এবং নিশ্চিতভাবেই খেলাপি হতে বাধ্য হবেন। সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দীর্ঘমেয়াদি নীতিকৌশলের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে হবে। নইলে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার উদ্যোগ সুফল দেবে না।

এদিকে, পদ্ধতিগত কিংবা পরিস্থিতির কারণে কোনো গ্রæপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান খেলাপি হয়ে গেলে সচল অন্য প্রতিষ্ঠানও সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে। করোনাকালীন এই অন্যায্য নিয়ম বাতিলেরও দাবি রয়েছে। কোনো গ্রæপের সহযোগী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের একটি হিসাব একটি ব্যাংকে শ্রেণিবিন্যাসিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অন্যান্য ব্যাংকে ‘২৭কক’ ধারার ৩ নম্বর উপধারার বিধান অনুযায়ী কোনো রকম আর্থিক সহায়তা না করার জন্য লিখিতভাবে অনুরোধ জানায়। ফলে, ঐ গ্রæপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান খেলাপি না হওয়া সত্তে¡ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে অপারগতা প্রকাশ করে। এতে একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান যৌক্তিক কারণে সাময়িক খেলাপি হওয়ায় ঐ গ্রæপের অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান খেলাপি না হওয়া সত্তে¡ও অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ