পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
করোনাকালে কাজের অভাবে শ্রমিক ছাঁটাই করেছে যে পোশাক শিল্প, বর্তমানে সেই শিল্পই ভুগছে শ্রমিক সঙ্কটে। এই কারণে অনেক ক্রয়াদেশও ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে বলে জানান এই খাতের উদ্যোক্তারা। এমনকি বাজার ধরতে অনেক শিল্প মালিকই যেতে পারছেন না কারখানা স¤প্রসারণে। এ অবস্থায় শ্রমিক সঙ্কটের প্রকৃত কারণ বের করে এর সমাধানে উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ অর্থনীতি বিশ্লেষকদের।
ইতোমধ্যে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প বিশ্ববাজার দখলে এগিয়েছে অনেকটা পথ। গত তিন মাসে এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় এই খাতের রফতানি আয় বেড়েছে ৪২, ৫৩ ও ৩২ শতাংশ করে। তবে ক্রেতারা যখন ঝুঁকছেন মেইড ইন বাংলাদেশের দিকে, তখন বাংলাদেশ ধুঁকছে শ্রমিক সঙ্কটে- এমনটাই বলছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা।
এ বিষয়ে মাসকো গ্রæপের সিনিয়র মহা-ব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ, প্রশাসন ও কমপ্লায়ান্স) শাহিন মোহাম্মদ বলেছেন, মেশিনগুলো প্রস্তুত। অন্যান্য অবকাঠামোগুলো প্রস্তুত। সুপারভাইজারসহ সবকিছু প্রস্তুত রয়েছে। অর্ডারগুলোও রয়েছে। তবে আমরা অপারেটর পাচ্ছি না।
ফকির ফ্যাশন লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির কে. নাহিদ বলেছেন, শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা বেগ পাচ্ছি। এতে প্রায় ১০ শতাংশের মতো আমাদের উৎপাদনের লোকসান হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে এই খাত থেকে রফতানি আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, আয় এসেছে তার চেয়ে প্রায় দুই বিলিয়ন বেশি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে নভেম্বর মাসে তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ বিলিয়ন ১২ কোটি ডলার। তবে এ সময়ে অর্জন হয়েছে ১৫ বিলিয়ন ৮৬ কোটি ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা থেকে আয় বেশি হয়েছে ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। করোনার শুরুর দিকে ক্রয়াদেশের অভাবে যেখানে অনেক শ্রমিক ছাঁটাই করেন উদ্যোক্তারা। ঘুরে দাঁড়ানোর প্রেক্ষাপটে শ্রমিক সঙ্কটে এবার ক্রয়াদেশ ছেড়ে দিতে হচ্ছে বলে জানান তারা।
শ্রমিক সঙ্কট নিয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেছেন, ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে। সেজন্য আমরা সময়মতো অনেক অর্ডারই করতে পারছি না। যে পরিমাণ অর্ডার আমি নিতে পারতাম আমার কারখানার জন্য, আমি সে পরিমাণ অর্ডার আগামী জুন পর্যন্ত শ্রমিক ঘাটতির জন্য নিইনি।
এ দিকে তথ্য বলছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ। পরের অর্থবছরে এসেছে ৩০ বিলিয়ন ডলার। এরপর এক বছরেই ৪ বিলিয়ন ডলার আয় বেড়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় ৩৪ বিলিয়ন ডলারে। করোনার কারণে গত দুই অর্থবছরে কমে গেলেও আবার দ্রæতগতিতে বাড়ছে এই খাতের রফতানি আয়।
করোনার আগে ক্রমবর্ধমান ক্রয়াদেশের সঙ্গে দরকার মতো শ্রমিকও পেয়েছেন উদ্যোক্তারা। তাহলে বর্তমানে কেন এই সংকট তৈরি হয়েছে? তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ অর্থনীতি বিশ্লেষকদের। অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মোহাম্মাত হেলাল উদ্দিন বলেছেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের চিহ্নিত করতে হবে কোন জায়গা থেকে সমস্যা টি হয়েছে। শ্রমিক আসতে চাচ্ছে না, যারা আগে এখানে ছিল। নাকি নতুন করে শ্রমিকের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। কোনটি মূলত সমস্যা? উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে এই খাতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ বিলিয়ন ডলার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।