Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গার্মেন্টস শিল্প এলাকাতেই ধর্ষণের বেশি ঘটনা ঘটছে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

কাক্সবাজারে ঘুরতে গিয়ে এক নারী পর্যটককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। একই দিন বান্দরবানেও এক গৃহবধূকে ধর্ষনের ঘটনা ঘটে। কক্সবাজারে ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে দেশী বিদেশী মিডিয়ার ব্যাপক লেখালেখি হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন বলেছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু থাকায় এমন নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গেছে। তবে গণমাধ্যম কর্মী ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদনে দেখা গেছে গার্মেন্টস শিল্প এলাকাগুলোতে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে।
গাজীপুর থেকে কাজ শেষে ঢাকায় ফেরার পথে ধর্ষণের শিকার তরুণী, চাকরি দেওয়ার নাম করে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ, চড়া শব্দে গান ছেড়ে দিয়ে চলন্ত বাসে ধর্ষণ, রাজধানীতে মা-বাবা কাজে গেলে প্রতিবেশীর দ্বারা ধর্ষণের শিকার কিশোরী। এগুলো হচ্ছে ধর্ষণের ঘটনায় প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদের শিরোনাম।
ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে গত তিন মাসে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের বেশ কয়েকটি ঘটনার পর দেশের কোন এলাকায় ধর্ষণ কেন বেশি, তা নিয়ে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে মূলত শিল্প এলাকায় ধর্ষণের ঘটনা বেশি।
দেশে ২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ঢাকায়। এরপরেই রয়েছে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের স্থান। ঘটনার বিশ্লেষণ বলছে, এসব জেলা শিল্প এলাকা হওয়ায় ভাসমান মানুষের আনাগোনা বেশি এবং ধর্ষণের ঘটনাও বেশি। অধিকারকর্মীদের দাবি, নারী যখন নিজের এলাকা ছেড়ে কাজের সূত্রে অন্য এলাকায় বসবাস শুরু করেন, তখন অপরিচিত মানুষজনের মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বাইরে অবস্থান করতে হয়। ফলে অনেকে ধর্ষণের শিকার হন।
কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট এক হাজার ২৪৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১০৯টি, নারায়ণগঞ্জে ৭৪টি, গাজীপুরে ৫৭টি ও চট্টগ্রামে ৪৪টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এসব এলাকায় দেশের বেশিরভাগ শিল্পকারখানা রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কর্মজীবী নারীরা এসব এলাকায় দৃশ্যমান এবং সেটি কখনও কখনও ধর্ষকদের রোষানলে পড়ার কারণ হয়ে থাকতে পারে। এমনকি কর্মজীবী নারী শ্রমিককে ‘শিক্ষা দেওয়ার’ জন্য, আবার পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণেও এসব এলাকায় একাধিক দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। আর বন্দরনগরীগুলোতে ভাসমান মানুষের আনাগোনা বেশি হওয়ায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, যার বেশিরভাগ মামলা পর্যন্ত গড়ায় না।
মানবাধিকারকর্মী নূর খান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেন, ঢাকা, গাজীপুর নারায়ণগঞ্জ হচ্ছে ব্যস্ততম শিল্পনগরী। এখানে সারাক্ষণ অপরিচিত মানুষের আনাগোনা। আবার এসব এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ এবং সংখ্যাগতভাবে অনেক বেশি মানুষের বাস। এসব এলাকার শিল্পকারখানায় নারীদের যে অংশগ্রহণ, সে অনুপাতে রাস্তাঘাটে নিরাপত্তার অভাব আছে। নিরাপত্তা কেবল আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা দিয়ে নির্ধারণ সম্ভব না। সাধারণত এলাকাভিত্তিক সামাজিক সুরক্ষা বলয় থাকে, যা নিরাপত্তা বোধ দেয়। কিন্তু এসব শিল্প এলাকায় যখন ভিন্ন জায়গার মানুষ অনবরত আসা যাওয়ার মধ্যে থাকে, যখন ভাসমান মানুষ বেশি, তখন কীভাবে সেই নিরাপত্তা বোধ তৈরি হবে?
‘উই ক্যান’ এর নির্বাহী সমন্বয়ক জিনাত আরা হক মনে করেন, নারীর প্রতি সহিংসতা যেকোনও সময়ের চেয়ে বেড়েছে মাত্রাগতভাবে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে একের পর এক ঘটনা ঘটছে। এসব এলাকায় মাইগ্রেটেড লোক অনেক। এখানে সেই অর্থে কমিউনিটি নেই। কেউ কাউকে চেনে না। ফলে ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটলেও গোষ্ঠীগত প্রতিবাদ হয় না।
আইন সালিশ কেন্দ্রের চলতি বছরের তথ্য বলছে, সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে জুন মাসে ১৭১টি। এরপরে আগস্ট মাসে ১৬০টি, জুলাই মাসে ১৪৫টি ঘটনা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। সেপ্টেম্বরে সেই সংখ্যা কিছুটা কমে ১০৭টি এবং অক্টোবরে ৯৩টি ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়। জুন থেকে আগস্ট সময়ে ধর্ষণ বেশি কেন তার কোনও ব্যাখ্যা না পাওয়া গেলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, এর সঙ্গে অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের যোগ থাকতে পারে। ###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ