Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এবার হচ্ছে না বই উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

২০০৯ সালে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাগ্রহণের পর তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়ার ক্ষেত্রে বিপ্লবের সূচনা করেন। তার নেতৃত্বে ২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন সকল শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যের বই তুলে দিয়ে বই উৎসব শুরু হয়। সেই থেকে ১ জানুয়ারি সারাদেশে বই উৎসব পালিত হয়ে আসছে। করোনা মহামারির কারণে চলতি বছর বই উৎসব করেনি সরকার। এই একই কারণে আগামী ১ জানুয়ারি বই উৎসব হচ্ছে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, এই বছরে বই উৎসব করার মতো অবস্থা নেই। উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেওয়া না হলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই শিক্ষার্থীরা বই পেয়ে যাবে।

করোনা ও ওমিক্রন পরিস্থতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। কাজেই সব স্কুলে ক্লাস ধরে ধরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বই বিতরণ করবে। সেই বিতরণের নিয়মে কোনো সমস্যা হবে না। শিক্ষার্থীরা সবাই হাতে বই পেয়ে যাবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মাতুয়াইলে মৌসুমী প্রেসে পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর অগ্রগতি দেখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

তবে শুধু যে বই উৎসব হচ্ছে না তা নয়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) অবহেলা ও পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে গিয়ে এবার নির্ধারিত সময় (১ জানুয়ারি) সারাদেশের সকল শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দিতে পারবে না সরকার। মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, যে সময় কাজ দেয়া হয়েছে তাতে নির্ধারিত সময়ে বই পৌঁছানো কোনভাবেই সম্ভব না। আর নিজেদের ভুলের কারনে এনসিটিবিও আমাদের কিছু বলতে পারবে না। তবে এনসিটিবি এখনো আশা প্রকাশ করছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তারা শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দিতে পারবে। মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা শিক্ষামন্ত্রী আংশিক স্বীকার করে বলেন, স্বাস্থ্যবিধির কারণে ১ তারিখে সবাইকে বই দিতে পারব না। কিন্তু ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ৯৫ শতাংশ বই স্কুলে স্কুলে পৌঁছে যাবে। বাকি ৫ শতাংশ বই ৭ জানুয়ারির মধ্যে পৌঁছে যাবে।

যদিও ২০২২ সালে ৪ কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় ১০ কোটি এবং মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় ২৫ কোটি বই ছাপাতে হবে। মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান বলেছেন, প্রাথমিক স্তর নিয়ে হয়তো সমস্যা হবে না। এর মধ্যে অবশিষ্ট বই চলে যাবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাধ্যমিকের ছাপাই হয়নি ৭ কোটি বই। আবার ছাপা হয়েছে কিন্তু বাঁধাই-কাটিং হয়নি-বিভিন্ন প্রেসে এমন বই আছে কয়েক কোটি। এসব দৃষ্টিকোণ পর্যালোচনায় বলা যায়, ডিসেম্বরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ বই যাবে। বাকি বই সরবরাহে মধ্য জানুয়ারি লেগে যেতে পারে। আর এমনটি হলে আইনগতভাবে এনসিটিবি মুদ্রাকরদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থায় যেতে পারবে না।

তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী, ৯ নভেম্বর থেকে অষ্টম ও নবম শ্রেণির বইয়ের জন্য ৮৪ দিন সময় ধরে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বই দেয়ার সময় আছে। ষষ্ট ও সপ্তম শ্রেণির বইয়ের জন্য আমাদের সাথে চুক্তি হয়েছে ৭০ দিন সময় দিয়ে। এই ৭০ দিনে আমরা ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত বই দিতে পারবো। এনসিটিবি কোন অবস্থাতেই আমাদেরকে বলতে পারে না যে ৩১ ডিসেম্বরের আগে বই দিতে হবে।

ছাপাখানার কাজের অগ্রগতি কতটা সে বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২১ কোটি বই বাঁধাই হয়েছে, সরবরাহ হয়েছে ১৭ কোটির বেশি। আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে সবই প্রায় হয়ে যাবে। তারপরেও হয়ত খুব স্বল্প সংখ্যক বাদ থাকতে পারে। সেটাও আমরা আশা করছি অবশ্যই জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে আমরা দিয়ে দিতে পারব। দীপু মনি বলেন, আমি এখানে দেখলাম কাজ পুরোদমে চলছে। তাদের যতটুকু কাজ পুরোটাই হয়ে গেছে। এখন কিছু বাঁধাইয়ের কাজ চলছে। তারা দুইদিনের মধ্যে এগুলো সব সরবরাহ করে দিবে।

তিনি জানান, ১৫৮টি প্রেসে মাধ্যমিকের ও ৪২টিতে প্রাথমিকের কাজ চলছে। তদারকির জন্য একটি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড- এনসিটিবির পক্ষে সপ্তাহে দুই-তিনদিন প্রেস পরিদর্শন করা হয়।

মন্ত্রী বলেন, প্রাক-প্রাথমিকের বইয়ের টেন্ডারে একটি সমস্যা হয়েছিল, সেটা আবার করা হয়েছে। সেটাও আশা করছি ২৫ জানুয়ারির মধ্যে হয়ে যাবে। নতুন বইয়ে ভুল থাকলে তা ঠিক করা হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি ভুল যেন না হয়। আর নিম্ন মানের কাগজ দেওয়া হলে সেসব প্রেসকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। যদি মান নিয়ে কেউ দুর্নীতি করে, খারাপ মানের বই দেয়, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।

মার্চ পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার কথা তুলে ধরে ডা. দীপু মনি বলেন, ওমিক্রন নিয়ে শেষ কথা বলার সময় আসেনি। আমেরিকা, ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ছে ব্যাপকভাবে। আমাদের আরও দেখার দরকার। কাজেই মার্চ না আসা পর্যন্ত বলতে পারব না যে আমরা নিরাপদ অবস্থানে আছি। #



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ