Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মালদ্বীপের সঙ্গে বন্দি বিনিময় এবং স্বাস্থ্যকর্মী পাঠাতে চুক্তি

আগামী বুধবার প্রধানমন্ত্রী মালদ্বীপ সফরে যাচ্ছেন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২২ ডিসেম্বর মালদ্বীপ সফরে যাচ্ছেন। এ সফরে যাওয়া আগে মালদ্বীপের কারাগারে বন্দিদের দেশে ফিরিয়ে আনা ও বাংলাদেশের বন্দিদের সে দেশে ফেরাতে একটি চুক্তির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মালদ্বীপে বাংলাদেশের সাজাপ্রাপ্ত ৪৩ জন এবং অপর ৪০ জন বিচারাধীন অবস্থায় বন্দি আছেন। তবে বাংলাদেশে কোনো মালদ্বীপের নাগরিক কারাবন্দি নেই। বাংলাদেশি বন্দিদের দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে, মালদ্বীপে আমাদের কিছু প্রিজনার আছে। মালদ্বীপেরও কিছু ছেলেমেয়ে এখানে পড়ালেখা করে। তারাও যদি এখানে কোনো অফেনেন্সের সাথে ইনভলব হয়, তাদেরকে প্রয়োজন হলে ওই দেশে নিয়ে যাওয়া। এজন্য বন্দি বিনিময় চুক্তি। মালদ্বীপে যদি কোনো বাংলাদেশি প্রিজনার থাকে তাহলে মালদ্বীপ বাংলাদেশকে রিকয়েস্ট করতে পারে যে, তুমি তোমার প্রিজনারকে তোমার দেশে নিয়ে যাও। বাংলাদেশও বলতে পারে যে আমার প্রিজনার আছে দিয়ে দাও। প্রিজন নিজেও প্রেয়ার দিতে পারে যে আমাকে আমার দেশে পাঠিয়ে দাও, আমার দেশে প্রিজন থাকব।

এটা মালদ্বীপের সাথে আমাদের কোয়ালিফাইড হেলথ প্রফেশনাল গ্রহণের জন্য একটা চুক্তি। আমাদের এতদিন একটা এমওইউ ছিল, সেটার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের হেলথ প্রফেশনাল যেত। মালদ্বীপ বলেছে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা এবং একটি চুক্তির মধ্যে নিয়ে আসা। এমওইউ বাইন্ডিং থাকে না, কিন্তু এগ্রিমেন্ট হলে বাইন্ডিং হবে। বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপে কোয়ালিফাইড হেলথ প্রফেশনাল গ্রহণের জন্য সংশোধিত একটি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আগামী বুধবার মালদ্বীপ যাচ্ছেন। সফরে দেশটির সঙ্গে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দ্বৈত করারোপ এবং যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক চারটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর মালদ্বীপ সফর নিয়ে গতকাল রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
ড. মোমেন বলেন, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ’র আমন্ত্রণে আগামী ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মালদ্বীপ সফর চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে। সফরে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দ্বৈত করারোপ, যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক চারটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২২ ডিসেম্বর বিশেষ ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালেতে অবতরণ করবেন। দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন। ২৩ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন।
সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেয়া হবে। গার্ড অব অনার নেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদে যাবেন। এ ভেন্যুতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে চারটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হবে।

দেশটি সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মালদ্বীপের ভাইস প্রেসিডেন্ট, স্পিকার ও প্রধান বিচারপতি সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সফরে প্রধানমন্ত্রী মালদ্বীপের জাতীয় পার্লামেন্টেও বক্তব্য রাখবেন বলে আশা করা হচ্ছে। মালদ্বীপে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি কুশল বিনিময় করবেন। একই দিন রাতে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে যোগ দেবেন।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে থাকছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সেনাপ্রধান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, পররাষ্ট্র সচিবসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উপযুক্ত কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। ২৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

কোয়ালিফাইড হেলথ প্রফেশনাল, ক্লিনিক্যাল স্পেশালিস্ট, পাবলিক হেলথ স্পেশালিস্ট, ডেন্টাল সার্জন, নার্সেস অ্যান্ড আদার অক্সিলারি স্টাফ নেবে। চুক্তিটি মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী আগামী কয়েকদিনের মধ্যে মালদ্বীপ যাবেন এবং সেখানে এ চুক্তিটা স্বাক্ষর হবে। সেই ক্ষেত্রে আমাদের দেশের বেশ কিছু মেডিক্যাল প্রফেশনের বেশকিছু ক্যাটাগরির লোক যেতে পারবে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন আইন, ২০২১’ খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও) ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার শর্ত অনুযায়ী চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের বিদেশে স্বীকৃতিতে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল করতে একটি আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

তিনি বলেন, ডবিøউএইচও এবং তাদের সংশ্লিষ্ট যত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সংস্থা আছে, তাদের একটা সিদ্ধান্ত আছে যে, ২০২৪ সালের মধ্যে সবাইকে একটা মিনিমান সিস্টেমের মধ্যে, অ্যাক্রেডিটেশনের মধ্যে আসতে হবে। যদি কোনো দেশ সেই অ্যাক্রেডিটেশনের মধ্যে না আসে তাহলে সেই দেশের ডাক্তার কিংবা কোনো হেলথ টেকনিক্যাল লোকজন অন্যদেশে রিকোগনাইজড (স্বীকৃতি) হবে না। তারা বিদেশে চাকরি করতে যেতে পারবে না। শিক্ষার্থীরা অন্য দেশে গিয়ে শিক্ষাও গ্রহণ করতে পারবে না। ২০২৩ সাল পর্যন্ত এ শর্ত ছিল, কোভিডের কারণে তার ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, উন্নত দেশে যদি আমাদের মেডিক্যাল শিক্ষা বা পেশাকে স্বীকৃতি দিতে হয় কিংবা দেশে এমবিবিএস করার পর শিক্ষার্থীদের অন্যদেশে উচ্চ শিক্ষা নিতে হয় তবে তাদের একটা অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের আওতায় তাকে স্বীকৃতি গ্রহণ করতে হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ আইনটি নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি বলেন, খসড়া আইন অনুযায়ী একটি অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল থাকবে। সেই কাউন্সিল অ্যাক্রেডিটেশনের বিষয়গুলো হ্যান্ডেল করবে। নীতিমালা বা ক্রাইটেরিয়া সব প্রণয়ন করবে। এখানে ১৯ সদস্যের একটা কাউন্সিল থাকবে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আমাদের অ্যাক্রেডিটেশনের ক্রাইটেরিয়া বা মানদন্ড ফিক্সড করতে হবে।

তিনি বলেন, মিথ্যা উপাধি, অনুমোদনহীন ওষুধের প্রেসক্রিপশন এবং ডিগ্রির অনুকরণ করলে জেল-জরিমানার বিধান রেখে বাংলাদেশ ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন, ২০২১ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। অধ্যাদেশগুলোকে আইনে পরিণত করার জন্য একটা বিধান ছিল। ১৯৮৩ সালের একটি অর্ডিনেন্সকে আইনে পরিণত করা হচ্ছে। এতে ৫০টি ধারা আছে। আইনে ঢাকায় একটি আয়ুর্বেদিক বোর্ড থাকার কথা বলা হয়েছে। এ বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে যে কোনো স্থানে শাখা করা যাবে। একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকবে, চেয়ারম্যান সভাপতি এবং একজন রেজিস্ট্রার থাকবে। বছর শেষে বোর্ড সার্বিক প্রতিবেদন সরকারকে দেবে।

তিনি বলেন, একটি কাউন্সিল থাকবে মেডিক্যাল কাউন্সিলের মতো। তারা একাডেমিক বিষয়গুলো দেখবে। কাউন্সিল তারাই নির্বাচন করবে। তারা না পারলে সরকার সভাপতি নির্বাচন করে দেবে। কাউন্সিলের সভাপতি নির্বাচিত হবে ৩ বছরের জন্য। কাউন্সিলই সভাপতি নির্বাচন করবে। কাউন্সিলে ১৬ ক্যাটাগরির সদস্য থাকবেন। এর মধ্যে ৩ জন সংসদ সদস্য যাদের স্পিকার মনোনয়ন দেবেন, ডিজি হেলথ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের ডিন, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ডিন, চট্টগ্রাম রাজশাহী ও খুলনা মেডিক্যাল থেকে মেডিসিন অনুষদের একজন ডিন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের যুগ্মসচিব, অর্থ বিভাগের যুগ্মসচিব, বাংলাদেশ ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক বোর্ডের রেজিস্ট্রার, সরকারি পর্যায়ে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক কলেজের অধ্যক্ষ ও বেসরকারি পর্যায়ে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক কলেজের অধ্যক্ষ এরকম প্রায় ১৯ থেকে ২০ জন সদস্য।

কাউন্সিলের কাজ হলো- ডিপ্লোমা, স্নাতক, স্নাতোকোত্তর ডিগ্রির রেজিস্ট্রেশন, গবেষণা বা বিশেষ শিক্ষা প্রবর্তন করাসহ অন্যান্য গবেষণা, আর্থিক স্বীকৃতি এবং প্রকাশনা। ইউনানী চিকিৎসকরা ডাক্তার ব্যবহার করতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা কাউন্সিল নির্ধারণ করবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইনে কিছু সাজার বিধানও রাখা হয়েছে। কোনো সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি মিথ্যা উপাধি ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদন্ড বা ১ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড হতে পারে। অনুমোদনহীন ওষুধের প্রেসক্রিপশন দিলেও এক বছরের কারাদন্ড বা ১ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড এবং কোনো সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ডিগ্রির অনুকরণ করলে ৩ বছরের কারাদন্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ