পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহামারি করোনায় থমকে গেছে বিশ্ব। প্রকৃতির কাছে অসহায় মানুষ! তা প্রমাণ হলো বিজ্ঞানের এমন সময়েও। বিপর্যস্ত সমস্ত জনপদ। লাশের ভারে ভারি আকাশ-বাতাস। বিপর্যয় বাংলাদেশেও। সংক্রমণ হচ্ছে, মানুষ মরছে। অজানা মহামারি সামলাতে স্বাস্থ্যখাতের কিছু দুর্বলতা চোখে পড়েছে। তারপরও করোনা প্রতিরোধে চিকিৎসক, সেবাকর্মীসহ স্বাস্থ্যখাতের সবাই যেন ছিল অদম্য। আক্রান্তদের সেবা দিয়েছেন। মৃতদের সৎকার পর্যন্ত করেছেন তারাই। মহামারির বিপদ সময়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা যে সেবা দিয়েছেন, নিঃসন্দেহে নজিরবিহীন।
কিছু সীমাবদ্ধতার পরও করোনা নিয়ন্ত্রণে বিজয়ের ৫০ বছরে চিকিৎসা খাতের অর্জন নিয়ে যে কেউ-ই আশাবাদ ব্যক্ত করতে পারেন। আর তাই সাধারণের প্রদীপ হয়ে হয়ে জ্বলছে স্বাস্থ্যখাত। গতি ধীর হলেও এ খাতের অর্জন কম নয়।
সূত্র মতে, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে বাংলাদেশ সফলতা দেখিয়েছে বহু আগে। গড় আয়ু বেড়েছে। পুষ্টি গ্রহণের উন্নয়ন, অসংক্রামক রোগ মোকাবিলা ও প্রতিরোধে চিকিৎসা খাতের কার্যক্রম প্রশংসার দাবি রাখে। সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচিতে অভাবনীয় সাফল্য বাংলাদেশের। সরকারগুলো পরম্পরায় টিকাদান কর্মসূচিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এসেছে।
বাংলাদেশের শুরুতে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ব্যাপক। ১৯৮৬ সালের জরিপ মতে, এক লাখ জীবিত শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে ৬৪৮ জন মায়ের মৃত্যু হয়। ২০১৫ সালে এসে তা দাঁড়িয়েছে ১৮১ জনে। মাতৃমুত্যুর হার কমিয়ে আনাকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে শিশু (৫ বছর বয়সী) মৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজারে ১৩৩ জন। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৬ জনে। দুই দশক আগে প্রতি হাজার নবজাতকের মধ্যে ৫২ জনের মৃত্যু হতো। ২০১৪ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৮ জনে। স্বাস্থ্যখাতের প্রতিটি ধাপেই এমন অগ্রগতির ফলও মিলছে, বাড়ছে গড় আয়ু।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, স্বাস্থ্যখাতের উল্লেখযোগ্য সফলতা হচ্ছে, আমাদের গড় আয়ু বেড়েছে। যেমনÑ কলেরা বা ম্যালেরিয়ার মতো রোগগুলো আমরা জোরালোভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছি। সরকার টিকা দেয়ার মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন টেকসই করেছে। টিকা কার্যক্রমে সরকারগুলোর সফলতা ব্যাপক বলে মনে করি। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। আমরা অসংক্রামক রোগের ব্যাপারে সঠিক নজর দিতে পারিনি। খাদ্য এবং অনিয়ন্ত্রিত নগর জীবনে অসংক্রামক রোগীর সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে গেছে। এসব রোগ মোকাবিলা করার জন্যস্বাস্থ্য বিভাগের যে করণীয়, সেখানে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।
এই বিশ্লেষক বলেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দু’ধরনের বিস্তার ঘটেছে। বাণিজ্যিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপক বিস্তার নগরজুড়ে। অপেক্ষাকৃত ধনীরা এই সেবা কিনে নিচ্ছেন। বড় চিন্তার বিষয় হচ্ছে ব্যক্তি পর্যায়ে স্বাস্থ্যখাতের ব্যয় বাড়ছে দিনে দিনে। যা সামাল দেয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে অসংক্রামক রোগে মানুষ ভুগছে, কিন্তু সমাধান মিলছে না। আবার অঞ্চলভেদে স্বাস্থ্যসেবার বৈষম্যও ব্যাপক। এই বৈষম্য কাটিয়ে ওঠার লক্ষণও দেখতে পাচ্ছি না।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ডা. আব্দুন নূর তুষার বলেন, স্বাস্থ্যখাতের বড় অর্জন হচ্ছে, আমরা সংক্রামক ব্যাধি মোকাবিলা করতে পেরেছি। বিভিন্ন রোগের টিকা দিতে পেরেছি। আরেকটি সফলতা হচ্ছে, মাতৃমৃত্যু এবং শিশুমৃত্যুর হার কমাতে পেরেছি। ডায়রিয়াজনিত মৃত্যু, নিউমোনিয়াজনিত রোগের মৃত্যু কমানো সম্ভব হয়েছে। গড় আয়ু বেড়েছে। পুষ্টি গ্রহণের মাত্রা বেড়েছে। স্বাধীনতার পর কিন্তু এই সূচকগুলো নিম্নমুখী ছিল। প্রোটিন, শর্করা উৎপাদনে আমরা ভালো অবস্থায় আছি। এই অর্জনগুলো অবশ্যই একটি জাতির জন্য সুখের খবর। তবে তিনি এ খাতের নানা সমস্যার কথাও উল্লেখ করেন। আব্দুন নূর তুষার বলেন, স্বাস্থ্যখাতের বড় ব্যর্থতা হচ্ছে, আমরা এই সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে পারিনি। আগে যেসব সাফল্যের কথা বললাম, তা শিশু এবং তরুণদের প্রতি স্বাস্থ্যসেবার বিষয়। বয়স বাড়লে রোগ বাড়ে, সেবাও কমে। সেবা দিয়ে আয়ু বাড়ানো যাচ্ছে। কিন্তু বয়সীদের সেবা দিতে পারছি না। বয়স বাড়লে কিডনিরোগ, হৃদরোগ, লিভারের সমস্যা বাড়ে। গরিব মানুষের এই রোগগুলো হলে তারা আর রক্ষা পায় না। মানে, সেবা নিশ্চিত করতে পারিনি আমরা। গরিব বেঁচে থাকে কষ্ট নিয়ে। শুধু বাঁচিয়ে রাখাই তো সেবা হতে পারে না। ভালো রাখাও দায়িত্ব। গরিব মানুষের একটি জটিল রোগ হলে তাকে গরু, বাড়িঘর বিক্রি করে সেবা নিতে হয়। রাষ্ট্রের দায় তো এখানেই। আমার মনে হয়, এখানে সঠিক নজর দেয়া যায়নি।
‘৫০ বছর ধরে আমরা রোগকে ঠেকিয়ে চলছি। কিন্তু জীবনকে সুস্থ রাখতে পারছি না। দুর্টনায় আহত একজন মানুষ সময় মতো চিকিৎসা নিতে পারে না। সাপের কামড়ে এখন বহু মানুষ মরছে। এই দুর্বলতা তো কাটিয়ে ওঠার কথা এতদিনে। তবে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে চলমান স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতি। এটা না ঠেকাতে পারলে কোনো সফলতাই টিকসই হবে না বলে উল্লেখ করেন আব্দুন নূর তুষার।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।