পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে-বিদেশে দায়িত্ব পালনে দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব দেখিয়ে সেনাবাহিনী সব মহলের প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই সুনাম আরো এগিয়ে নিতে হবে। বিশ্বের যে কোনও প্রান্তের মানুষ, শান্তি আর সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জানবে এটিই আমার প্রত্যাশা। গতকাল রোববার চট্টগ্রামে প্রেসিডেন্ট প্যারেড-২০২১ এ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কৃতি ক্যাডেটদের কৃতিত্বের জন্য পুরস্কৃত করেন।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর জন্ম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা তার দূরদর্শী চিন্তার মাধ্যমে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের উপযোগী উন্নত ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনীর অপরিসীম গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন। এ কারণেই একটি প্রশিক্ষিত, শক্তিশালী ও দক্ষ সেনাবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কুমিল্লা সেনানিবাসে ‘বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি’ এর শুভ উদ্বোধন করেন; যা ছিল বাংলাদেশের জন্য এক ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু নবীন সামরিক অফিসারদের পেশাগতভাবে দক্ষ, নৈতিক গুণাবলি সম্পন্ন এবং দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে গড়ে উঠার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই প্রাজ্ঞ, কালজয়ী ও দূর দৃষ্টিসম্পন্ন দিক নির্দেশনায় অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পেশাদারিত্ব এবং কর্মদক্ষতার সঙ্গে আজ দেশের সীমানা পেরিয়ে বহির্বিশ্বেও তাদের অবদান রেখে চলেছে।
সরকার প্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭৪ সালেই প্রণয়ন করেন আমাদের ‘প্রতিরক্ষা নীতি’। আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতা প্রণীত সুদূর প্রসারী প্রতিরক্ষা নীতির আলোকেই সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ প্রণয়ন করেছে। আমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নতুন নতুন পদাতিক ডিভিশন, ব্রিগেড, ইউনিট ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সার্বিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছি। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীতে ৩টি নতুন পদাতিক ডিভিশন ও প্রথম প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে অত্যাধুনিক সাঁজোয়া যান এবং গোলন্দাজ কোরে মাঝারি ও দূরপাল্লার এমএলআরএস রেজিমেন্ট। আকাশ বিধ্বংসী স্বয়ংক্রিয় সোরাড, ভিসোরাড ও সর্বাধুনিক অরলিকন মিসাইল রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আকাশ প্রতিরক্ষায় সূচিত হয়েছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। অত্যাধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও সিগন্যাল সরঞ্জামাদি ছাড়াও বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, হেলিকপ্টার, বিমান, মডার্ন ইনফ্যান্ট্রি গেজেট এবং আরও নানাবিধ অস্ত্র-সরঞ্জামাদি সেনাবাহিনীতে সংযুক্ত হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, এসকল অস্ত্র-সরঞ্জামাদির জন্য প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো স¤প্রসারণ ও বিপুল সংখ্যক নতুন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও আরও নানাবিধ অস্ত্র-সরঞ্জামাদি ও ভৌত কাঠামোর সংযোজন ও স¤প্রসারণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আজকের সেনাবাহিনীর যুদ্ধ সক্ষমতা অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত, স্বয়ংসম্পূর্ণ, চৌকস এবং পেশাগতভাবে দক্ষ।
আওয়ামী লীগ সরকার নারীর ক্ষমতায়ন এবং উন্নয়ন কর্মকান্ডেও নারীর অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন নারীদের নিয়োগ ও পদোন্নতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারই ২০০০ সালে সর্বপ্রথম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে নারী অফিসার নিয়োগ এবং ২০১৩ সালে সর্বপ্রথম নারী সৈনিক ভর্তির যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। নেতৃত্ব ও যোগ্যতার ধারাবাহিকতায় আর্মি মেডিক্যাল কোরের একজন নারী অফিসারকে ‘মেজর জেনারেল’ পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি কোর্সের নারী কর্মকর্তাদেরও ‘লে. কর্নেল’ পদে পদোন্নতি প্রদান, কমান্ডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব প্রদান এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করা হচ্ছে। এছাড়াও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তিন জন নারী অফিসার ‘কন্টিনজেন্ট কমান্ডার’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে দেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছেন। বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিকে একটি অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একাডেমিতে পরিণত করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি জানান, এখানে ক্যাডেটদের অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণের সকল প্রকার অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’ নির্মাণ করা হয়েছে।
নবীন অফিসারদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমাদের মনে রাখতে হবে, তোমরা এদেশের সন্তান; জনগণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই তোমাদের সকলকেই সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্নার সমান অংশীদার হতে হবে। যে কোনও দুর্যোগ ও দুঃসময়ে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। তোমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি অনুগত এবং অধীনস্থদের প্রতি সহমর্মী হতে হবে। মনে রাখবে, অনেক রক্ত আর ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের এই স্বাধীনতা। কষ্টার্জিত এই স্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিত করা তোমাদের পবিত্র দায়িত্ব।
সোনার বাংলা গড়তে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে সদাপ্রস্তুত সেনাবাহিনী: সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমি আরও দৃঢভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য সোনার বাংলা গড়ার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে সদাপ্রস্তুত থাকবে। রোববার চট্টগ্রামে ‘প্রেসিডেন্ট প্যারেড-২০২১’ এ প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন কালে তিনি এ কথা বলেন।
শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ বছরের প্যারেড অচ্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এ বছর আমরা একসঙ্গে উদযাপন করছি আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। এমন একটা শুভ সময়ে যারা কমিশন্ড লাভ করলো তারা সত্যি খুব ভাগ্যবান। তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত আপনার(প্রধানমন্ত্রী) মূল্যবান দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য আজকের নবীন অফিসারদের দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ এবং স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করবে। সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (বিএমএ) এর ৮১তম দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সের অফিসার ক্যাডেটদের কমিশন প্রাপ্তি উপলক্ষে আয়োজিত প্রেসিডেন্ট কুচকাওয়াজ গতকাল চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিস্থ বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়। এ কুচকাওয়াজের মাধ্যমে ৯৫ জন বাংলাদেশী, ৭ জন ফিলিস্তিনি এবং ১ জন শ্রীলংকান ক্যাডেটসহ সর্বমোট ১০৩ জন ক্যাডেট কমিশন লাভ করলেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন প্রাপ্ত অফিসারগণের মধ্যে ৮৮ জন পুরুষ ও ৭ জন মহিলা ক্যাডেট রয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।