পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মালদ্বীপে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন হৃদয় হাসান। সেখানকার একটি ভবন থেকে পড়ে হাত-পা ভেঙে যায় তার। নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করালেও চিকিৎসার খরচ দেয়নি। অনিবন্ধিত (অবৈধ) শ্রমিক হওয়ায় এ নিয়ে অভিযোগ করারও উপায় ছিল না তার। পরে স্থানীয় প্রবাসীরা চাঁদা দিয়ে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেন। পরে শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসেন তিনি।
আরেক শ্রমিক মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, তিনি একটি রিসোর্টে কাজ করতেন। করোনাভাইরাসের বিস্তার শুরু হওয়ার পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক মাস মালিক, শ্রমিকদের বেতন না দিলেও খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন। পরে সবাইকে বিদায় করে দেয়া হয়েছে। মহিউদ্দিন অবৈধ শ্রমিক হওয়ায় বাংলাদেশে এসে আর মালদ্বীপে ফিরতে পারছেন না।
দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপে অবস্থান করা বাংলাদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হৃদয় হাসান ও মহিউদ্দিনের মতো অবৈধভাবে যারা দেশটিতে আছেন তারা নানা বিপদের মুখে পড়ছেন। অনেকের কাজ জুটছে না। অনেকে কাজ পেলেও নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না। আবার গ্রেফতার আতঙ্কেও থাকতে হয়। আর সেই আতঙ্ক বেড়েছে ২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে। এর আগে খুব ভালোই কাটছিল মালদ্বীপে থাকা বাংলাদেশি শ্রমিকদের দিনকাল।
সূত্র মতে, ভারত মহাসাগরের ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর অপ্রত্যাশিত জয় পায় ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ। তিনি দায়িত্ব নিয়েই ভারত প্রীতিতে জড়ান। আর ভারতও দীর্ঘদিন বাংলাদেশের দখলে থাকা মালদ্বীপের শ্রম বাজারকে নিজেদের করে নেয়ার কূটচাল শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রতি বৈরি আচরণ শুরু করে মালদ্বীপ সরকার। যদিও ইব্রাহিম সলিহ ভারতীয় সেনাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বলেই ভারত সরাসরি মালদ্বীপে হস্তক্ষেপ করতে পারছে বলে মনে করেন প্রবাসী শ্রমিকরা।
আর ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ দায়িত্ব নেয়ার দিন থেকেই শুরু হয় ওই দেশে থাকা বাংলাদেশি শ্রমিকদের নতুন যুদ্ধ। মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনের সময় মালদ্বীপের শ্রম বাজারের অন্যতম আস্থার নাম ছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুরাবস্থা বাড়ে ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রæয়ারি যখন অর্থ পাচারের অভিযোগে মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে আবারও সুদিন ফিরবে বলে আশায় আছেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা। কারণ মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনের সাজা সে দেশের সুপ্রিমকোর্ট গত ৩০ নভেম্বর বাতিল করে তাঁকে মুক্তি দেয়। আবদুল্লাহ ইয়ামিন মুক্তির পর গত ৬ ডিসেম্বর প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম রাজনৈতিক সমাবেশে মালদ্বীপে ভারতীয় সেনাদের অপসারণের আহŸান জানান।
সূত্র মতে, প্রায় ৫ লাখ জনসংখ্যার দ্বীপবেষ্টিত দেশটিতে প্রায় এক লাখ বাংলাদেশি রয়েছে। তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশই অবৈধ। যারা অবৈধ (অনিয়মিত) তাদের নিয়মিত করতে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে অবৈধ কর্মীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দেয় মালদ্বীপ। তখন ৪০ হাজার অনিয়মিত প্রবাসী কর্মী রেজিস্ট্রেশন করেন। ওই সময় রেজিস্ট্রেশন করলে আটক করে দেশে পাঠিয়ে দিতে পারে এমন আশঙ্কায় ২০ হাজার কর্মী রেজিস্ট্রেশনই করেননি। রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলেও এখন পর্যন্ত আবেদনকারীদের কাউকে ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করেনি সরকার।
এতে বৈধ হওয়ার অপেক্ষায় আছেন প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক। যদিও ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আনা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় দেশটি। এরপর করোনায় দেশটির অবকাঠামো নির্মাণকাজ প্রায় বন্ধই ছিল।
ঢাকায় হযরত শাহজালাল (রাহ.) বিমানবন্দরের কল্যাণ ডেস্কের সহকারি পরিচালক ফখরুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, করোনায় কাজ হারিয়ে প্রায় ১৬ হাজার কর্মী মালদ্বীপ থেকে দেশে ফেরত এসেছে। যারা এখনও মালদ্বীপে ফিরতে পারেননি।
তবে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মালদ্বীপের শ্রমিকদের সমস্যার বিষয়টি তাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। বাংলাদেশে হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে তারা কাজ করছেন। দেশটিতে বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপে আরও কর্মসংস্থান তৈরির বিষয়ে কাজ করছেন তারা।
মালদ্বীপে বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান বলেছেন, মালদ্বীপে সব মিলিয়ে বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা প্রায় এক লাখ। এদের মধ্যে ৫০ হাজারই এখন অনিয়মিত। তারা এখানে কাজ করলেও ওয়ার্ক পারমিট নেই। অন্য দিকে ২০১৯ সালে মালদ্বীপ সরকার একটি সিদ্ধান্ত নেয়। সেটি ছিল তারা এক বছর বাংলাদেশ থেকে কোনো কর্মী নেবে না। এক বছর পার হয়ে গেলে এই সিদ্ধান্ত স্বাভাবিকভাবেই বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা, তবে আমরা জানতে পারছি, তারা নতুন করে বাংলাদেশ থেকে কাউকে এখানে ওয়ার্ক পারমিট দিচ্ছে না।
নাজমুল হাসান বলেন, এ নিয়ে দেশটির সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা কথা বলছি। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের সা¤প্রতিক ঢাকা সফরে এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীও তুলেছিলেন।
বাংলাদেশের হাইকমিশনার বলেন, শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মালদ্বীপ সফরের কথা রয়েছে। সফরের সূচি এখনও চ‚ড়ান্ত হয়নি। তবে এটি হয়তো দুই-এক মাসের মধ্যেই হবে। সেই সফরে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে যখন নানা ইস্যুতে কথা উঠবে, এটি নিয়েও কথা হবে। শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক থেকে একটি সুখবর আসবে বলে আশা করছি।
মালদ্বীপে বাংলাদেশিদের কাজের সুযোগের বিষয়ে নাজমুল হাসান বলেন, এখানে যে বাংলাদেশিরা আছেন তারা দেশটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। এটা মালদ্বীপ সরকারও স্বীকার করে। তাদের অবকাঠামো, ফিসিং, পর্যটনসহ সব খাতেই বাংলাদেশি কর্মীরা কাজ করছেন। অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশিরা এখানে যেসব কাজ করেন, সেটা অন্য দেশের কর্মীরা করতে চান না। মালদ্বীপে সামনে অবকাঠামো খাতে অনেক প্রকল্প শুরু হবে। আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশি কর্মীদের বিকল্প নেই। করোনার পর এখন নতুন করে মালদ্বীপের পর্যটন খাত খুলতে শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রেও তাদের অনেক বিদেশি কর্মী লাগবে, যার ভালো জোগান আসতে পারে বাংলাদেশ থেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মালদ্বীপে বাংলাদেশের হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, ভারতের ষড়যন্ত্রে ২০১৯ সালে মালদ্বীপ সরকার এক বছর বাংলাদেশ থেকে কোনো কর্মী না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এক বছর পার হয়ে গেলে এই সিদ্ধান্ত স্বাভাবিকভাবেই বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ভারত কোনভাবেই চাইছে না নতুন করে বাংলাদেশ থেকে কাউকে এখানে ওয়ার্ক পারমিট দেয়া হোক। তাই এখনো মালদ্বীপে বাংলাদেশের শ্রম বাজার আটকে আছে।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।