পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমরা সোনার বাংলাদেশ গড়তে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গতকাল রোববার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের সমাপনী’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল। আমরা এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। আমরা বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছি। দেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছি। আমরা স্বল্প উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী প্রজন্মের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্নের আত্মমর্যাদাশীল, উন্নত এবং সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার দর্শন ছিল সুদূর প্রসারী। তিনি শান্তির পক্ষে সুদৃঢ় ভ‚মিকা পালন করেছিলেন। শান্তি চাইতেন বলেই আমার দেখা নয়া চীন বইতে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘যেই শান্তি চাক, সেটা আমেরিকা হোক, চীন হোক, রাশিয়া হোক, আমরা তার সাথে আছি’। তিনি বলেন, সারা বিশ্বের নিপীড়িত জনগণের পক্ষে সুস্পষ্টভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। দুনিয়ায় যে কোনো স্থানে শান্তির পক্ষে ছিলেন তিনি। আমরা পাহাড়ে শান্তিচুক্তি সম্পন্ন করেছি। একই সঙ্গে বিশ্বে শান্তির সংস্কৃতির সূচনা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে। আমরা সোনার বাংলাদেশ গড়তে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠার পক্ষে অবস্থান নিয়েছি। একই সঙ্গে সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও মানবতার জন্য বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। আমরা শান্তির জন্য জবাবদিহিমূলক বিশ্ব চাই। জবাবদিহিমূলক বিশ্ব গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, দীর্ঘ একুশ বছরের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করি। একই বছর ১২ নভেম্বর দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিচারহীনতার সংস্কৃতি নিরসন করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করি। জাতির পিতার হত্যার বিচার শুরু করি। ১৯৯৮ সালের ২ ডিসেম্বর পাহাড়ি উপজাতিদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটিয়ে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করি। ১৯৯৭ সালে আমরাই প্রথম জাতিসংঘে শান্তির সংস্কৃতি বিকাশের কর্মসূচি গ্রহণের লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করি এবং এটা ১৯৯৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর গৃহীত হয়। সেই অনুযায়ী জাতিসংঘ ২০০০ সালকে শান্তির সংস্কৃতির আন্তর্জাতিক বছর এবং ২০০১ থেকে ২০১০-কে শান্তির সংস্কৃতির অহিংস দশক হিসেবে ঘোষণা করে। তিনি বলেন, আমরা ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়লাভের পর জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর করি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করি। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে মীমাংসা করি। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে আমরা গর্ববোধ করি। আমরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি গ্রহণ করেছি। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনুষ্ঠানে যোগদানকারী অতিথিদের স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী। এতে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেইন হাক্কানী। আরও বক্তব্য রাখেন সিঙ্গাপুরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গোহ চোক তং, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন।
জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা-২০২১ উদ্বোধন : এদিকে নবম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা-২০২১ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদার জোগান দিতে সরকার দেশের কৃষি জমি রক্ষা করতে চায়। ফলে যত্রতত্র শিল্প প্রতিষ্ঠান করা যাবে না। তিনি আরো বলেন, আমরা সারা দেশে ১০০টি শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলেছি। জাতির পিতা যে বিসিক শিল্প নগরী গড়ে তুলেছিলেন, সেগুলোও স¤প্রসারণ করছি। তাই সুনির্দিষ্ট জায়গায় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে, যাতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ ঠিক থাকে। পরিবেশের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে এসএমই ফাউন্ডেশনকে নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, আপনারা এ ক্ষেত্রে বিশেষ দৃষ্টি দেবেন। কেউ যদি উদ্যোক্তা হয় তাহলে কোথায় তার এই কাজগুলো করতে পারবেন, সেই নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করে দেয়া। নিজস্ব জমি কিংবা নিজের ঘরে করলে সেখানেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কীভাবে করবে, কীভাবে করলে তা বাজারজাত করতে পারবে; সেটা ভালোভাবে দেখতে হবে।
দেশের জনসংখ্যার ঘনত্বের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শিল্পায়নের ক্ষেত্রে বড় শিল্পের সঙ্গে ক্ষুদ্র, মাঝারিসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্প গড়ে তোলার তাগিদ দেন। তিনি বলেন, এতে একদিকে কর্মসংস্থান বাড়বে। আবার মানুষ যেন অল্প পুঁজি দিয়ে কিছু উৎপাদন করতে পারে, বাজারজাত করতে পারে, আর্থিকভাবে সচ্ছলতা লাভ করতে পারে; সেই অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। তিনি বলেন, দেশের ৯৯ দশমিক ৭৫ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দেব সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষে, এটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য আমরা অর্জন করব। পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করে দিয়েছি। এতে পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে কোনো সমস্যা থাকে না। সেই বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্যের বাজার চিরদিনই থাকবে। দেশের মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বাড়ছে। খাদ্য ও পুষ্টিজ্ঞান সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। আরও সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি আমরা খাদ্যপণ্য বিদেশে রফতানি করতে পারব। পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে পৃথিবীর কোন দেশে কী চাহিদা আছে, সেই মোতাবেক আমাদের দেশে কোন পণ্য বা কাঁচামাল পাওয়া যেতে পারে; সেগুলো বিবেচনা করে আমরা সহজে শিল্প গড়ে তুলতে পারি। তাতে আমাদের দেশের বাজার স¤প্রসারণ হবে। বিদেশেও পণ্য রফতানি করতে পারব।
এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উৎপাদিত পণ্যের প্রসার, প্রচার ও বাজারজাতকরণের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নারী উদ্যোক্তারা একসময় পিছিয়ে ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নারীদের মাঝে খুব একটা উদ্যোক্তা ছিল না। এখন তারা এগিয়ে আসছে। নারী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে এসএমই ফাউন্ডেশন তাৎপর্যপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে। আশা করি সামনের দিকে আরো বেশি নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে।
সারা দেশে ৭৮ লাখ এসএমই শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে একজন করে মানুষের কাজের সুযোগ হলে ৭৮ লাখ বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। এই খাতের উন্নয়নের জন্য আমরা সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাব।
বদলে যাওয়া বাংলাদেশ হলো বাস্তবতা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৭-০৮ সালে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ছিল ১৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে ৩৪ দশমিক ৯৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। শুধু জিডিপি বৃদ্ধি না, অর্থনৈতিক অনেক সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এখন এই খাতে জাতীয় আয়ে ২৪ শতাংশ অবদান রাখছে। আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে ৩২ শতাংশে উন্নতি করতে চায়। সারাদেশে যাতে শিল্পায়ন হয়, সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য দেশটাকে উন্নত করতে হবে। দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের লক্ষ্য দারিদ্র্য বিমোচন, মানুষের আয় বৃদ্ধি করা। দারিদ্র্যের হার থেকে দেশের মানুষকে মুক্ত করা। পাশাপাশি নারী সমাজ যাতে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছলতা অর্জন করতে পারে। যেটা তার সংসার ও দেশের কাজে লাগবে। সেই অনুযায়ী অনেক উদ্যোগ নিয়েছি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিশেষ অতিথি শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন জাতীয় এসএমই পুরস্কার ২০২১ বিজয়ী চার উদ্যোক্তার হাতে ক্রেস্ট, সনদ ও চেক তুলে দেন।
বিশেষ অতিথি এবং আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা, এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ড. মো. মাকসুদুর রহমান বক্তৃতা করেন। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।