Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাসের চাকায় পিষ্ট দুর্জয়ের পরিবারের স্বপ্ন

বিচারের দাবিতে মায়ের মামলা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম


এসএসসি পরীক্ষার্থী মো. মাইনউদ্দিন ইসলাম দুর্জয়। তার বাবা চা বিক্রেতা আব্দুর রহমান ভান্ডারী। বড় ভাই মনির হোসেন প্রাইভেট কার চালক। বড় বোন বাক প্রতিবন্ধি। ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিল সে। তাই সবাই স্বপ্ন দেখছিলো পড়াশোনা করে বড় কিছু হওয়ার। শুধু তাই নয়, লেখাপড়া শেষে করে পরিবারের হাল ধরারও স্বপ্ন ছিল দুর্জয়ের। কিন্তু সেই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিনত করেছে অনাবিল পরিবহনের একটি বাস! গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে কান্না জড়িত কণ্ঠে এসব তথ্য জানিয়েছেন নিহত দুর্জয়ের স্বজনরা।

এর আগে গত সোমবার রাত রাত ১০টার দিকে রামপুরা বাজার এলাকায় অনাবিল বাসের চাপায় প্রাণ হারায় এসএসসি পরীক্ষার্থী মাইনউদ্দিন ইসলাম দুর্জয়। সে ২০০২ সালের ২৯ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করে। ৩ ভাইবোনের মধ্যে সে ছিল সবার ছোট। গত সোমবার তার জন্মদিন ছিল। সে একরামুন্নেসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। বর্তমানে পূর্ব রামপুরা তিতাস রোড এলাকায় পরিবারের সাথে থাকতেন তিনি। তার বাবা পূর্ব রামপুরার মোল্লা বাড়ি এলাকায় চায়ের দোকানদার আব্দুর রহমান ভান্ডারী বলেন, গত সোমবার দুপুরে খাওয়ার পর ছেলে জানালো যে তার পরীক্ষা ভালো হয়েছে। সে ভালো কলেজে পড়তে চেয়েছিল। তাই ছেলের মৃত্যুর খবর কিছুতেই মানতে পারছেন না তিনি।
গতকাল পূর্ব রামপুরার তিতাস রোডের মোল্লাবাড়ির ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন নিহত দুর্জয়ের বাবা। জ্ঞান ফিরলেই বড় ছেলে মনির ও পাশে থাকা আত্মীয়স্বজনের উদ্দেশে বলছেন, তোরা আমার পুতরে ফোন দে। ফোন দিলেই আমার পুত বাসায় চলে আসবে। ভিক্ষা করে হলেও আমার পুতরে কলেজে পড়াব।

কিছুক্ষন কান্না বন্ধ করে ফের কান্নায় ভেঙে পড়েন আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, সোমবার সন্ধ্যা থেকে ছেলে রাত ৯টা পর্যন্ত চায়ের দোকানে ছিল। পরে আমি দোকানে আসার পর বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার কথা বলে বের হয় সে। যাওয়ার সময় ছোলা খাওয়ার কথা বলে ১০ টাকা আবদার করলে আমি টাকা দিই। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে খবর পাই, আমার ছেলে মারা গেছে।

একই অবস্থা নিহত দুর্জয়ের মা রাশেদা বেগমেরও। তিনিও বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জন্মদিনে আমার ছেলে এভাবে চলে যাবে, মানতে পারছি না।

নিহত মইনউদ্দিনের ভাই মনির বলেন, গত সোমবার আমার ভাইয়ের (মইনউদ্দিন) ১৮ তম জন্মদিন ছিল। সে রাতে রামপুরা পলাশবাগে শিক্ষকের বাসায় যায় দেখা করতে যায়। কিছুক্ষণ পরে ফোনে একজন জানান মাইনুদ্দিন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি আমার ভাইয়ের লাশ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

এদিকে, গতকাল দুপুর পৌনে ১টার দিকে দুর্জয়ের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল নাঈমা। পরে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স করে মইনউদ্দিনের লাশ দাফনের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান স্বজনরা।

স্বজনরা জানান, ময়না তদন্ত শেষ করে তার লাশ রামপুরা তিতাস রোড নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার জানাজা শেষে গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার হালুয়াপাড়া গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষ স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, জনতার দেওয়া আগুনে ১২টি বাস পুড়ে গেছে। আরও তিনটি বাসে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। খবর পেয়ে রামপুরা ও হাতিরঝিল থানার পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাত একটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের ডিসি আবদুল আহাদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বাস ও চালককে আটক করেছি। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা কয়েকটি বাসে আগুন দিয়েছে। জনতার সঙ্গে মিশে কেউ নাশকতা করেছে কি না, সেটাও তদন্ত করে দেখছি। তবে এ ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম।

এদিকে, ঘাতক বাসের হেলপার চান মিয়কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গতকাল সকালে রাজধানীর সায়দাবাদ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুর্ঘটনার সময় বেপরোয়া গতির কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ