Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাহাড়ে মারমা সম্প্রদায়ের নবান্ন উৎসব পালন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

নেচে-গেয়ে আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে মারমা সম্প্রদায় পালন করল ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব। পাহাড়ে রীতিমত শীতের আমেজ আর পাহাড়ি পল্লীতে নতুন ধানের সুবাস। হেমন্তের কুয়াশাচ্ছন্ন দিনে ব্যতিক্রমী আয়োজন চলছে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা বাজার ও বান্দরবানে। এখানে নবান্ন বাঙালির উৎসবে মেতেছেন মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীরা। নবান্ন বাঙালির উৎসব হলেও স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাসিন্দারা মিলে উদযাপন করল অন্যরকম নবান্ন উৎসব।

খাগড়াছড়ি জেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল সকালে স্থানীয় শিশুদের জন্য গড়ে উঠা ‘পাঠশালা বিন্দু থেকে’ এর আয়োজনে দিনভর ছিল পিঠা উৎসব, গ্রামীণ খেলাধুলা, স্থানীয় শিল্পীদের নাচগান, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং সন্ধ্যায় ছিল ফানুস উড়ানো। ভিন্নধর্মী এই আয়োজনে দুই শতাধিক মানুষ যোগ দেয়। উৎসবে মারমা তরুণ-তরুণীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী বিলুপ্তপ্রায় গান, নৃত্য, পালা গান, কবিতাসহ নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাÐ উপস্থাপন করে। গ্রামের মারমা নারীরা ছেছমা পিঠা, ভাপা পিঠা, কলাপিঠা,বাঁশ পিঠা, সাইন্যা পিঠা, শামুকপিঠাসহ অন্তত ১০ ধরনের পিঠা বানায়।
নবান্ন উৎসবে যোগ দিতে এসেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সবুর্ণা মজুমদার। তিনি বলেন, পাঠশালার উদ্যোগে নবান্ন উৎসবে পুরো পাড়ার মানুষ এখানে অংশ নিয়েছে। উৎসবে একাবারেই আদিম কোনো কৃত্রিমতা ছিল না। সাধারণ পাহাড়ি পল্লীর মানুষেরা এখানে সমাবেত হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে আসা আবু জাফর জানান, এটি প্রত্যন্ত এলাকা। এখানকার স্থানীয় মানুষের এমন আয়োজন সত্যিই মুগ্ধকর। গ্রামের সব মানুষেরা মিলে একসঙ্গে পিঠা বানিয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি হবে। পিঠা উৎসবের পাশাপাশি কোমড় তাঁত বুনে স্থানীয় মারমা জনগোষ্ঠী।
নবান্ন উৎসবের আয়োজক ও ‘পাঠশালা বিন্দু থেকে’ সমন্বয়ক জাহেদ আহমেদ টুটুল জানান, এখানে শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি। শিশুদের জন্য বিকল্প পাঠশালা গড়ে তোলা হয়েছে। সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে এখানে পাঠশালার আয়োজনে নবান্ন উৎসব করা হয়। স্থানীয় গ্রামবাসী সমন্বিতভাবে এই আয়োজন করেছে। সবাইকে বিনামূল্যে পিঠা খাওয়ানো হয়। প্রতিবছরই এমন আয়োজন করা হয়। মূলত পাহাড়ে জুমের ফসল উঠে যাওয়ার পর পাহাড়ি গ্রাামগুলোতে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করে থাকে বিভিন্ন সম্প্রদায়। কালের বিবর্তনে এখন এই উৎসব অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে।
বান্দরবান থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানায়, জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিরবীজি বলেছেন, বর্তমান সরকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির ঐতিহ্য রক্ষায় আন্তরিক। যেকোনো মানুষের প্রতি যথাযথ সম্মান দিয়ে যাচ্ছে এ সরকার। পাহাড়ের দীর্ঘ বছরের ঐতিহ্য-কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ ও বিস্তারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানা উদ্যোগ নিয়েছে। আর এরই অংশ হিসেবে সরকারি ভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির জুমের ফসল তোলার পর নবান্ন উৎসবকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে উদযাপন করছে। গতকাল শনিবার সকালে বম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির ফাথার বুহ্ তেম (নবান্ন) ও লোক সাংস্কৃতিক উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক এসব কথা বলেন।
সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের বেথেন পাড়া লালজুয়াম বম এর জুম মাঠের পাশে এ উৎসব আয়োজন করা হয়। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট (কেএসআই), বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও সংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য সিংইয়ং খুমীর সভাপতিত্বে এতে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুরাইয়া আক্তার সুইটি, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবরিয়া আফরিন মোস্তফা, কেএসআই পরিচালক মংনুচিং প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ