এখনো বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের বাইরে থাকা চর এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষগুলোকে দ্রæত বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রয়োজনে নতুন প্রকল্প নেয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। জাতীয় গ্রিড এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেলের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৯৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে সরকার। শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্য পূরণের পথে এখনো বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের বাইরে থাকা মানুষগুলোর জন্য দ্রæত বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, চর-প্রত্যন্ত অঞ্চলের পরিবারগুলোকে দ্রæত বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রয়োজনে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে বলেছেন তিনি। সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন কোনো বাড়ি বা পরিবার অন্ধকারে থাকবে না। তার নির্দেশনা অনুযায়ী শতভাগ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনার যে লক্ষ্য সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি।
রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের কয়েক হাজার পরিবার এখনো বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে- বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এলে এ নির্দেশনা দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর দ্রুততম সময়ে চর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের অবশিষ্ট মানুষগুলোকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে কাজ শুরু হয়েছে। ২০০৯ সালে দেশে ৪৭ শতাংশ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধা পেত। ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট। যেখানে ২০০৯ সালে এ সক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৮ লাখ। বর্তমানে এ সংখ্যা বেড়ে ৪ কোটি ১৪ লাখে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া ২০০৯ সালে সেচ সংযোগ ছিল ২ লাখ ৩৪ হাজার, বর্তমানে সেচ সংযোগ সংখ্যা ৪ লাখ ৪৬ হাজার। ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে সরকার ২৮ হাজার ৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে এখন পর্যন্ত ৬২ লাখ হোম সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। এসব সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ২৬৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। নামমাত্র মূল্যে বিতরণ করা এসব সোলার প্যানেল সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে ২ কোটি মানুষ। শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। লক্ষ্য অর্জনের পথে এখন পর্যন্ত জাতীয় গ্রিড এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সরকার ৯৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এনেছে।
পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের বিদ্যুৎবিহীন প্রত্যন্ত এবং চর এলাকায় সৌরশক্তির উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রংপুর জেলার রংপুর সদর ও গঙ্গাচড়া উপজেলা এবং লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলায় মোট ১২ হাজার ১৭০টি সোলার হোম সিস্টেম বসানোর কথা ছিল। সেখানে ৯ হাজার ৮৪৫টি সোলার সিস্টেম স্থাপন করতে সক্ষম হয় বাস্তবায়নকারী সংস্থা পিডিবিএফ।
গঙ্গাচড়ায় সর্বশেষ নির্বাচিত ৪৫০৪ জনের মধ্যে থেকে যারা কন্ট্রিবিউশনের অর্থ ও এনআইডি জমা করা এবং অন্যান্য শর্ত পূরণ করেন, চলতি বছরের জুন মাসে তাদের ৭১২ জনকে সোলার হোম সিস্টেম বিতরণ করা হয়। ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে তালিকাভুক্ত ৯০ পরিবারের মধ্যে সোলার হোম সিস্টেম বিতরণ করতে পারেনি পিডিবিএফ। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে এলে তার নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে একটি বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করে সেই ৯০ জনের বাড়িতে সোলার হোম সিস্টেম বসানো হয়। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে থাকা অন্য পরিবারগুলোকেও দ্রæত বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের আওতায় আনার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে থাকা গঙ্গাচড়া উপজেলার অবশিষ্ট ৩ হাজার ৭০৮ পরিবারকেও দ্রæত বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার কাজ শুরু করেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহম্মদ মউদুদউর রশীদ সফদার বলেন, রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার চরাঞ্চলের ৩ হাজার ৭০৮ পরিবারকে কিভাবে বিদ্যুতের আওতায় আনা যায় সে লক্ষ্যে আমরা পল্লী বিদ্যুতের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছি।