পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর থেকেই গণপরিবহন ও সড়কে শুরু হয়েছেন নতুন করে বিশৃঙ্খলা। টানা তিন দিন পরিবহন ধর্মঘটের পর বাড়ানো হয় ভাড়া। সরকার ঘোষিত বাড়তি ভাড়ার চেয়ে পরিবহনে আরও বেশি ভাড়া আদায় নিয়ে যাত্রী-শ্রমিকদের মধ্যে চলছে বাক-বিতণ্ডা, হাতাহাতি। শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিয়েও চলছে আন্দোলন। রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনই রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করছেন।
এদিকে ডিজেলের দাম ও ভাড়া বৃদ্ধির সুযোগে রাতারাতি রাজধানীর সব গণপরিবহন ডিজেল চালিত পরিবহনে পরিণত হয়েছে। প্রথম দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা এবং ডিজেল ও সিএনজি চালিত পরিবহনে স্টিকার বসানোর উদ্যোগ নেয়া হলেও থমকে গেছে সেটি। ফলে এখন ঢাকার সড়কে সিএনজি চালিত গণপরিবহন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। প্রায় প্রতিটি পরিবহনেই কোন কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর বা সত্যায়ন ছাড়া সাদা কাগজে ‘ডিজেল চালিত’ লেখা লাগিয়ে চলছে বাড়তি ভাড়া আদায়। যদিও রাতে শহরের সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাস নেয়ার জন্য থাকে এসব পরিবহনের দীর্ঘ লাইন।
এছাড়া সড়কে বিশৃঙ্খলা, বাড়তি ভাড়া ও নজরদারির অভাবে ডাম্পিংয়ে থাকা লক্কড়-ঝক্কড় পুরোনো গাড়িও রাস্তায় নামিয়েছেন মালিকরা। একদিকে ভাড়া বৃদ্ধি অন্যদিকে পুরোনো গাড়িতে চলাচল, দুর্ভোগ বাড়ছে যাত্রীদের। গণপরিবহনের এসব কারণে যন্ত্রণার যেন শেষ নেই।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঢাকা শহরে কথিত সিটিং ও গেটলক সার্ভিসের নামে ওয়েবিলে যাত্রীর মাথা গুণে ৫ কিলোমিটারের জন্য আদায় করা হচ্ছে ২৫ কিলোমিটারের ভাড়া। স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার ৩-৪ গুণ বাড়তি আদায়ের ফলে নাগরিক জীবন দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিশ্চিত করার পাশাপাশি সব ধরণের গণপরিবহনে দাঁড়ানো যাত্রীদের অর্ধেক ভাড়ার সুযোগ দিতে সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী থেকে গাবতলী ও সদরঘাট থেকে গাজীপুরসহ সব রুটেই দিন-রাত চলছে লক্কড়-ঝক্কড় ফিটনেসবিহীন বাস। লক্কড়-ঝক্কড় এসব বাসে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করে পুরোটাই। সিটিং সার্ভিস বন্ধ থাকবে এমন নির্দেশনা থাকলেও মানছেন না বাসের চালক ও হেলপাররা। এতো আন্দোলন, প্রতিবাদ তবুও স্বস্তি ফেরেনি সড়কে।
শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিয়ে গতকালও রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে বেশ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা হাফ ভাড়ার দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে। শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগে তরঙ্গ প্লাস পরিবহনের দুইটি বাস ঢাকা কলেজ এলাকায় আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা। হাফ ভাড়া দেয়ায় বদরুন্নেছা কলেজের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের হুমকি দেয় পরিবহনের সহকারী। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর ঠিকানা পরিবহনের চালক ও সহকারীকে গ্রেফতারও করা হয়। এর আগে ঢাকা কলেজের সামনে কলেজটির শিক্ষার্থীরা, মিরপুরে বেশ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থী এবং রামপুরা সড়কেও শিক্ষার্থীরা হাফ ভাড়ার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে।
জানা যায়, ২০১৫ ও ২০১৯ সালের ১ জুলাই প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সময় নগরীর যানবাহনগুলো গ্যাস চালিত দাবি করে বাড়তি ভাড়া আদায় করে। তখন বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন বা শ্রমিক ফেডারেশন অনেকটা জোর গলায় বলেছিল, তাদের অধিকাংশ বাস সিএনজিতে চলে। সিএনজির দাম বেড়েছে, ফলে ভাড়া বাড়াতে হবে।
জার্মানভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যমের বাংলা সংস্করণের প্রতিবেদনে বিআরটিএর বরাত দিয়ে দাবি করা হয়েছে, ঢাকায় ৯৫ শতাংশ বাসই এখন সিএনজিচালিত। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিআরটিএর হিসাব অনুযায়ী, ঢাকার ভেতরে মোট বাস ১২ হাজার ৫২৬টি। তার মধ্যে গ্যাসে চলে ১১ হজার ৯০০টি। ডিজেলে চলে ৬২৬টি।
তবে বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকাসহ সারা দেশে এখন ডিজেল ও সিএনজিতে কত বাস চলছে, সে বিষয়ে কোনো পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই।
বিআরটিএ-এর পরিচালক (সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি) মাহবুব ই রাব্বানী বলেন, কোন কোন কোম্পানির বাস গ্যাসে চলে সেই ডেটাবেজও নেই। ২০০৮-২০০৯ সালের দিকে যখন ডেটাবেজ তৈরির কাজ শুরু হয়, তখন বেশির ভাগ বাস সিএনজিতে রূপান্তর করা হয়েছিল। পরে রূপান্তরিত গাড়ির সমস্যার কারণে অনেকে আবার তেলে ফিরে আসে। এরপরে আর গ্যাসের বাস নামেনি। বিআরটিএর বরাতে ঢাকার ৯৫ শতাংশ গাড়ি গ্যাসে চলার তথ্য নাকচ করে তিনি বলেন, গ্যাসের বাস পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশের বেশি আছে বলে আমার মনে হয় না।
যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, দৈনন্দিন আয় বাড়েনি। কিন্তু ভাড়া বেড়েছে। অন্যান্য খরচ বেড়েছে। এটি তাদের ওপর একটি বিশাল চাপ তৈরি করেছে। অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে কথা বললে যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে বাসের হেলপার-চালকরা। এখন সব বাসই ডিজেলচালিত দাবি করে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে। আর কোনো বাস ডিজেলচালিত না সিএনজিচালিত সেটি বোঝা সম্ভব না। ধামরাই থেকে আসা এক যাত্রী জানান, আগে গুলিস্তান পর্যন্ত ভাড়া ছিলো ৬০ টাকা এখন নেয়া হচ্ছে ৮০টাকা।
এদিকে, রাজধানীর সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব রঙচটা ফিটনেসবিহীন বাস। আসন সংখ্যা বাড়াতে পরিবর্তন করা হচ্ছে গাড়ির নকশা। ঝুঁকিপূর্ণ এসব যানবাহনের কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ৬ নম্বর বাস, অনাবিল, ছালছাবিল, বিকল্প, শিখর, শিকড়, তুরাগ, গ্রেট তুরাগ, তরঙ্গ পরিবহন, বলাকা, গাজীপুর পরিবহন, প্রভাতী বনশ্রী, ভিক্টর, আশিয়ান পরিবহনের বেশকিছু লক্কড়ঝক্কড় বাস চোখে পড়ে। এ ছাড়া পুরান ঢাকার বাবুবাজার থেকে কেরানীগঞ্জ, নয়াবাবাজর-গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে কাঁচপুর সেতু পর্যন্ত রুটের বাসগুলোর বেশিরভাগই ফিটনেসবিহীন। কোনটির এক অংশ খুলে পড়েছে কোনোটা দুমড়ানো মোচড়ানো। রঙ চটে গেছে অনেক আগেই। নেই সাইড ইনডিকেটর কিংবা পিছনের লাইট। ভেতরে বসার আসনগুলোও নড়বড়ে ও ছেঁড়া। বডি ভেঙে বাঁকা হয়ে থাকা, সামনে পেছনে বাম্পার নেই। চলার অযোগ্য বাসগুলোকে রঙ করে আবার নামানো হয় রাস্তায়। যাত্রাবাড়ী এলাকায় ওয়ার্কশপগুলোতে দেখা যায়, ভাঙা ও মেয়াদ উত্তীর্ণ যানবাহনগুলো হাতুরি পিটিয়ে ঘসা মাজা করে ঠিক করা হচ্ছে। নকশা পরিবর্তন করে বাড়ানো হচ্ছে বাসের আসন। পুরাতন গাড়িতে দেয়া হচ্ছে চকচকে রঙ। গাড়িগুলোকে রঙের কারসাজিতে ২০ বছরের পুরোনো বাস পরিনত করা হয় নতুন রূপে।
যাত্রীদের অভিযোগ, ভাঙাচোরা বাস থাকলেও ভাড়ার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই। বরং সময়-সুযোগ বুঝেই আদায় করছে বাড়তি ভাড়া। বাসের যে অবস্থা তা দেখে ভয় লাগে। মনে হয় যেকোনো সময় ভেঙে যাবে। বাসের সিটগুলো খুবই সঙ্কীর্ণ। ভেতরে সিটের ভাঙা অংশে অনেকের জামা-কাপড় ছিঁড়ে যায়। নজরদারীর অভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামছে। গণপরিবহনগুলোতে ফিটনেস সার্টিফিকেট রয়েছে, কিন্তু আসলে ফিটনেস নেই। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন বহু মানুষ। পঙ্গুত্ববরণ করছেন অনেকে। এসব দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ ফিটনেসবিহীন ঝুঁকিপূর্ণ এসব যানবাহন।
বাসযাত্রী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ভাঙা বাসগুলোতে ঝুঁকি নিয়েই চলতে হয়। কাজের প্রয়োজনে প্রতিদিন এসব বাসে যাতায়াত করি। মাঝে মাঝে পুলিশ রাস্তায় থামিয়ে কাগজপত্র দেখে। কিন্তু পুলিশের সাথে বাসের ড্রাইভার ও হেলপার কথা বলে আবার ছেড়ে দেয়। কখনো কখনো মামলাও দেয়। তারপরও এসব ফিটনেসবিহীন বাস চলছেই।
আনোয়ার হোসেন নামের আরেক যাত্রী বলেন, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে ভাড়া বাড়ানোর কারণে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আগে যে ভাড়া ২০ টাকা ছিলো এখন তা ২৫-৩০ টাকা। কোন কোন বাসে যাত্রী ও চালকের সহকারীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। আবার গুলিস্তান থেকে মিরপুরের ভাড়া ছিল ২৫ টাকা। এখন ৪০ টাকা নেয়া হচ্ছে। ফার্মগেট থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ পর্যন্ত বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল আগে ৫ টাকা। এখন সেটি করা হয়েছে ১০ টাকা। ডিজেল ও গ্যাসচালিত গাড়িতে একই ভাড়া নেয়া হচ্ছে।
সায়দাবাদ টার্মিনালের এক বাস কাউন্টারের পরিচালক ওয়াদুদ হোসেন বলেন, ঘোষণার পর থেকেই বাস ভাড়া কিছুটা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগে যেখানে ১৪০ টাকা ভাড়া ছিলো এখন সেটা ১৭০ টাকা করা হয়েছে। আর ১০০ টাকার ভাড়া ১৩০ টাকা। তবে আমাদের পরিবহন সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কমই নিচ্ছে। অন্যান্য পরিবহন এর চেয়ে ভাড়া বেশি নেয়ার কথাও শুনেছি।
ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট হাবিবুর রহমান জানান, আমরা নিয়মিত ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। ফিটনেসবিহীন কিছু গাড়ির কারণে রাস্তায় অন্য গাড়িরও চলাচল করতে সমস্যা হয়। কোনো গাড়ির ফিটনেস না থাকলে ওই গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা-জরিমানা আদায় করছি। এমনকি ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়। আর সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নেয়ার সুযোগ নেই। অনেক যাত্রী আমাদের কাছে ভাড়া বেশি নেয়ার ব্যাপারে অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেয়ে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। নির্ধারিত তালিকার বাইরে কেউ বেশি ভাড়া নিতে পারবে না।
বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বাস চালক ও মালিকদের একচেটিয়া দৌরাত্ম্যের করণে এই নৈরাজ্য বন্ধ হচ্ছে না। ভাড়া বাড়ানোর টাকা এবং চাঁদা আদায়ের টাকা কোন কোন খাতে যায় এটা পরিস্কার করতে হবে। বিআরটিএও দ্বায় এড়াতে পারেনা। আর বাস ভাড়া বাড়ানোর তালিকা চালকের সিটের নিচে রাখা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাইলে দেখায়। কিন্তু এই তালিকার নির্ধারিত ভাড়াও মানা হয় না। পুরোনো ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল বন্ধ হচ্ছে না। এটা বন্ধ করতে হবে। তা নাহলে এই বিশৃঙ্খলা থামানো যাবে না।
এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কিছু কিছু বাসকে লক্কড়ঝক্কড় হিসেবেই অনেকে দেখে। কিন্তু লক্কড়ঝক্কড় এসব বাসের বিষয়ে কাজ করছে বিআরটিএ। আর আমরা দেখছি বাসের ফিটনেস ঠিক আছে কিনা, রেজিস্ট্রেশন, রেকর্ড ও ডকুমেন্টস ঠিক আছে কিনা। যেসব বাসের এগুলো ঠিক নেই সেসব বাসের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।