Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাপান বাংলাদেশের পরীক্ষীত অকৃত্রিম বন্ধু - অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০২১, ৬:২২ পিএম

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, জাপান বাংলাদেশের পরীক্ষীত অকৃত্রিম বন্ধু দেশ। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৩ সালের ঐতিহাসিক জাপান সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপিত হয়। এটি ছিল অংশীদারিত্বের সূচনা যা দিনে দিনে শক্তিশালী হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সড়ক ও যমুনা নদীর উপর রেল সেতু, ঢাকা শহরের মেট্রো রেল নেটওয়ার্ক, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনাল, মাতারবাড়ি পাওয়ার প্লান্ট ও মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দরসহ চলমান বেশ কয়েকটি আইকনিক মেগা প্রকল্পে জাপান সরকারের সম্পৃক্ততার জন্য জাপান সরকার অবশ্যই আমাদের কাছ থেকে কৃতজ্ঞতার দাবিদার।

সোমবার (২২ নভেম্বর) বাংলাদেশ সরকার এবং জাপান সরকারের মধ্যে ২টি বিনিয়োগ প্রকল্প এবং ১টি বাজেট সহায়তা সংক্রান্ত ঋণের জন্য মোট ২ দশমিক ৬৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের (২৯২ দশমিক ২৭৯ বিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন) বিনিময় নোট ও ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের মান্যবর রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি’র সাথে বিনিময় নোট এবং বাংলাদেশস্থ জাইকা অফিসের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইওহো হায়াকাওয়া’র সাথে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেন। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের এনইসি-২ কনফারেন্স কক্ষে এ ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত থেকে তিনি এসব কথা বলেন।

 

 

অনুষ্ঠানে অর্থ, বিদ্যুৎ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক, স্বাস্থ্য সেবা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ, সিপিজিসিবিএল, সড়ক ও জনপদ অধিদফতর, পিজিসিবি, ডিএমটিসিএল, জাপান দূতাবাস এবং জাইকা বাংলাদেশ অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।


অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, করোনা মহামারীর শুরুতে জাপান বাজেট সহায়তার আহ্বানে খুবই দ্রুত ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। জাপান সরকার গত বছর বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো ৩২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজেট সহায়তা ঋণ প্রদান করেছে এবং সেই সামঞ্জস্যতায় বর্তমানে ৩৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ‘কোভিড-১৯ ক্রাইসিস রেসপন্স ইমার্জেন্সি সাপোর্ট লোন ফেজ-২’ স্বাক্ষরিত হচ্ছে। পাশাপাশি এটাও খুবই আনন্দের, ৪২তম ইয়েন লোন প্যাকেজের ১ম ধাপের অধীনে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের দুটি ঋণ চুক্তি মাতারবাড়ি আলট্রা সুপার ক্রিটিকাল কোল-ফ্রাইড পাওয়ার প্রজেক্ট (৬ষ্ঠ ট্রান্চ) এবং ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন ১) (২য়) এদিন স্বাক্ষরিত হয়।

জাপান সরকারের ৪২তম ওডিএ লোন প্যাকেজ (১ম ব্যাচ) এর আওতাধীন বিনিয়োগ প্রকল্প দুইটির জন্য স্বাক্ষরিত ঋণের বাৎসরিক সুদের হার নির্মাণ কাজের জন্য শূণ্য দশমিক ৬০ শতাংশ, পরামর্শক সেবার জন্য শূণ্য দশমিক ০১ শতাংশ, ফ্রন্ট ইন্ড ফ্রি (এককালীন) শূণ্য দশমিক ২ শতাংশ। এ ঋণ ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধযোগ্য। বাজেট সাপোর্ট ঋণের বাৎসরিক সুদের হার শূণ্য দশমিক ৫৫ শতাংশ, ফ্রন্ট ইন্ড ফ্রি (এককালীন) (এককালীন) শূণ্য দশমিক ২ শতাংশ। এ ঋণ ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধযোগ্য।

ঋণচুক্তির আওতায় যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে- মাতারবাড়ি আলট্রা সুপার ক্রিটিকাল কোল-ফ্রাইড পাওয়ার প্রজেক্ট (৬ষ্ঠ ট্রাঞ্চ) : অব্যাহত বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার জেলার মহেশখালি উপজেলায় মাতারবারি ১২০০ মেগাওয়াট (৬০০ মেগাওয়াটনের ২টি ইউনিট) আলট্রা সুপার ক্রিটিকাল কোল-ফায়ার্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ চলছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৫ হাজার ৯৮৪ দশমিক ৪৬ কোটি (জিওবি ৪ হাজার ৯২৬ দশমিক ৬৬ + জাইকা ২৮ হাজার ৯৩৯ দশমিক ০৩ + সিপিজিসিবিএল ২ হাজার ১১৮ দশমিক ৭৭ কোটি) টাকা । প্রকল্পের মেয়াদকাল জুলাই ২০১৪ থেকে জুন ২০২৩ পর্যন্ত। অক্টোবর ২০২১ পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ৪৯ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৫১ শতাংশ। জাইকা পর্যায়ক্রমে ঋণ সহায়তা প্রদান করবে। ইতোপূর্বে ৫টি পর্যায়ে মোট ৩ লাখ ৫০২ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েনের (২ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ৪২তম ওডিএ লোন প্যাকেজ (১ম ব্যাচ) এর আওতায় ৬ষ্ঠ পর্যায়ে ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৫২ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন প্রদান (১ দশমিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) করা হবে।

ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন ১) (২য় ট্রাঞ্চ) ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-১ দুটি অংশে বিভক্ত। অংশ দুটি হল- বিমানবন্দর রুট (বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর) এবং পূর্বাচল রুট (নতুন বাজার থেকে পিতলগঞ্জ ডিপো)। বিমানবন্দর রুটের মোট দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৮৭২ কিলোমিটার এবং মোট পাতাল স্টেশনের সংখ্যা ১২টি। এ রুটেই বাংলাদেশে প্রথম পাতাল বা আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল নির্মিত হতে যাচ্ছে। পূর্বাচল রুটের মোট দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৩৬৯ কিলোমিটার। সম্পূর্ণ অংশ উড়াল এবং মোট স্টেশন সংখ্যা ৯টি। নতুন বাজার স্টেশনে ইন্টার-চেঞ্জ থাকবে। উভয় রুটের সকল বিস্তারিত স্টাডি, সার্ভে ও ব্যাসিক ডেসাইন সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে ডিটেইলড ডিসাইন এর কাজ চলমান আছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৫২ হাজার ৫৬১ দশমিক ৪৩ কোটি টাকা (জিওবি ১৩ হাজার ১১১ দশমিক ১১+ জাইকা ৩৯ হাজার ৪৫০ দশমিক ৩২ কোটি)। প্রকল্পের মেয়াদকাল সেপ্টেম্বর ২০১৯ থেকে ডিসেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত। জাইকা পর্যায়ক্রমে ঋণ সহায়তা প্রদান করবে। ইতোপূর্বে ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসের জন্য ৫ হাজার ৫৯৩ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন এবং নির্মাণ কাজের জন্য ১ম পর্যায়ে ৫২ হাজার ৫৭০ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েনের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ৪২তম ওডিএ লোন প্যাকেজ (১ম ব্যাচ) এর আওতায় ২য় পর্যায়ে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৭ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন (১ দশমিক ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) প্রদান করা হবে।

কোভিড-১৯ ক্রাইসিস রেসপন্স ইমারজেন্সী সাপোর্ট লোন পেস-২ : এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো কার্যকর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বাস্তবায়ন, কোভিড-১৯ অতিমারি সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা এবং কোভিড-১৯ অতিমারির কারনে বাংলাদেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দা উত্তরণে বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাজেট সাপোর্ট প্রদান করা। এর আওতায় জাপান সরকার ৪০ বিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন (৩৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঋণ সহায়তা প্রদান করবে। এ ঋণের বাৎসরিক সুদের হার শূণ্য দশমিক ৫৫ শতাংশ, ফ্রন্ট ইন্ড ফ্রি (এককালীন) শূণ্য দশমিক ২ শতাংশ। এ ঋণ ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধযোগ্য। ইতিপূর্বে ২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাজেট সাপোর্ট হিসাবে জাপান সরকার ১ম পর্যায়ে ৩৫ বিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন (৩২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঋণ সহায়তা প্রদান করেছে।

দ্বি-পাক্ষিক পর্যায়ে জাপান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী দেশ। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত জাপান সরকার বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন সেক্টরে উল্লেখযোগ্য সহায়তা প্রদান করেছে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ সরকারের অগ্রাধিকারের সাথে সামাঞ্জস্য বজায় রেখে জাপান সরকার অবকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন, পল্লী উন্নয়ন, পরিবেশ উন্নয়ন এবং মানব সম্পদ উন্নয়ন খাতের প্রকল্পে ঋণ ও বিভিন্ন প্রকার অনুদান সহায়তা হিসেবে জুন ২০২১ পর্যন্ত ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ