Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত সশস্ত্র বাহিনী জাতির অহঙ্কার

সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি বিশ্বাস করি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত সশস্ত্র বাহিনী আমাদের জাতির অহঙ্কার। গতকাল রোববার সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে বৈকালিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল দেশের সব সেনানিবাস, নৌঘাঁটি এবং বিমানবাহিনী ঘাঁটির মসজিদে দেশের কল্যাণ, সমৃদ্ধি এবং সশস্ত্র বাহিনীর উন্নতি কামনায় ফজরের নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। পরে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালিত হয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিকালে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে ভার্চুয়ালি যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল সকালে ঢাকা সেনানিবাসে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ।

এছাড়া গতকাল সকালে সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২১ উপলক্ষে সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সকালে ঢাকা সেনানিবাসে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তিনি মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী সশস্ত্র বাহিনীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় বিউগেলে করুণ সুর বাজানো হয়। পরে শিখা অনির্বাণ প্রাঙ্গণে রাখা দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন।

বৈকালিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা সচেষ্ট থাকবেন যেন শৃঙ্খলা, পেশাগত দক্ষতায় সর্বত্র প্রশংসিত হতে পারেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি উন্নয়নমূলক কাজে অবদান রেখে দেশের গৌরব সমুন্নত রাখতে পারেন। সশস্ত্র বাহিনী আমাদের জাতিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলব। তিনি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে আজকের দিনটি (২১ নভেম্বর) গৌরবময় স্থান করে আছে। যুদ্ধের বিজয়কে তরান্বিত করতে ১৯৭১ সালের এই সশস্ত্র বাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে দখলদারদের বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের সূচনা করে। ডিসেম্বরের শুরুতে সম্মিলিত বাহিনীর সঙ্গে মিত্রবাহিনীর ঐক্যবদ্ধ আক্রমণে পর্যুদস্ত পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক। আত্মীয় সম্পর্ক। আমার দুই ভাই সেনাবাহিনীর সদস্য। যদিও শেখ কামাল অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের জন্য চাকরি ছেড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল। জামাল তার প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখে, স্যান্ডহার্স্ট পাস করে নিয়মিত সেনাবাহিনীতে যোগদান করে। ছোট্ট রাসেলের সবসময় একটা শখ ছিল সে বড় হয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে ঘাতকের বুলেটে আমি সবাইকে হারাই। এ সময় স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছি। যুগোপযোগী প্রতিরক্ষা নীতিমালা-২০১৮ প্রণয়ন করেছি। গত ১৩ বছরে সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছি। সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। এই পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করেই কাজ করে যাচ্ছি। ফলে আজকে সমগ্র বিশ্বে সবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, মাতৃভূমির সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখার পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দেশের যেকোনো ক্রান্তি লগ্নে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগে সদা প্রস্তুত। এই বাহিনীর সদস্যরা করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। করোনা, মানব সৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার পাশাপাশি আমাদের সশস্ত্র বাহিনী দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

সশস্ত্র বাহিনীর কল্যাণে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাসহ শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং শান্তি নিশ্চিত করার দায়িত্ব দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমর্যাদা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি জাতিসংঘের প্রশংসা অর্জন করেছে। বর্তমানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমরা আবারও সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রদানকারী দেশ হিসাবে গৌরবের স্থানটি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। অবকাঠামোগত উন্নয়নের সেনাবাহিনীর কাজের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান অন্যান্যের মধ্যে সেনাকূঞ্জে উপস্থিত ছিলেন।

আইএসপিআর জানায়, সংবর্ধনায় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ সদস্য, প্রাক্তন প্রধান উপদেষ্টা, মন্ত্রী ও মন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি, প্রতিমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি, ডেপুটি স্পিকার, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান, স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ঢাকা এলাকায় বসবাসরত খেতাবপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও তাদের উত্তরাধিকারী, উচ্চপদস্থ অসামরিক কর্মকর্তা এবং তিন বাহিনীর চাকুরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। অন্যদিকে মহান স্ব^াধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও কিলো ফ্লাইটের বৈমানিক এবং তাদের উত্তরাধিকারীদের গতকাল সংবর্ধনা প্রদান করেছে বিমান বাহিনী। সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২১ উদযাপন উপলক্ষে নৌবাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত ১৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদেরকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ২০২০ সালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ৩৮ জন নৌ-সদস্যদের শান্তিকালীন পদকে ভূষিত করা হয়েছে। এ উপলক্ষে রোববার বনানীস্থ নৌ সদর সাগরিকা হলে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল শাহীন ইকবাল এই সম্মাননা ও শান্তিকালীন পদক তুলে দেন।



 

Show all comments
  • শফিকুল ইসলাম দুলু ২২ নভেম্বর, ২০২১, ১২:৪৮ এএম says : 0
    জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক, জয়তু জননেত্রী শেখ হাসিনা
    Total Reply(0) Reply
  • Tanjim Shahriyer ২২ নভেম্বর, ২০২১, ১২:৪৮ এএম says : 0
    জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, তিন বাহিনীর সকল সদস্যদের জানাই শুভেচ্ছা
    Total Reply(0) Reply
  • Yousuf Howladar ২২ নভেম্বর, ২০২১, ১২:৪৯ এএম says : 0
    মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আপনাকে অভিনন্দন শুভ কামনা রইল জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু
    Total Reply(0) Reply
  • শেখ মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ২২ নভেম্বর, ২০২১, ১২:৪৯ এএম says : 0
    বঙ্গবন্ধুর উত্তরসুরির হাত ধ‌রে বাংলা‌দেশ এ‌গি‌য়ে যাক ।জয় বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু।
    Total Reply(0) Reply
  • প্রভাকর পাল ২২ নভেম্বর, ২০২১, ১২:৪৯ এএম says : 0
    বিনম্র শ্রদ্ধা হাজার বছ‌রের শ্রেষ্ঠ বাঙা‌লি জা‌তির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মু‌জিবুর রহমান
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ রমিজ ২২ নভেম্বর, ২০২১, ৭:১৬ এএম says : 0
    আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে আরও আধুনিকায়ন করা দরকার।
    Total Reply(0) Reply
  • নাজমুল হাসান ২২ নভেম্বর, ২০২১, ৭:১৭ এএম says : 0
    অবশ্যই আমাদের অহংকার
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ