Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টিকা তৈরি করে অন্য দেশকে দেয়ার সক্ষমতা আছে

বঙ্গবন্ধুর নামে পুরস্কার চালু করায় সংসদে ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আমাদের যে সাফল্য আমরা তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছি। জলবায়ু সম্মেলনে গিয়ে আমি এটাও বলে এসেছি, আমরা নিজেরা ভ্যাকসিন তৈরি করতে চাই। আমাদের সেই সক্ষমতা আছে। আমাদের সুযোগ দিলে আমরাও ভ্যাকসিন উৎপাদন করব। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধী ভ্যাকসিন উৎপাদন করে অন্য দেশকে দেয়ার মতো সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে। ভ্যাকসিন তৈরির যে বাধাগুলো আছে, সেগুলো আপনাদের সরিয়ে দিতে হবে, উন্মুক্ত করতে হবে। এটা জনগণের প্রাপ্য। জনগণের সম্পদ হিসেবে দিতে হবে। সারাবিশ্বের কোনো মানুষ যেন ভ্যাকসিন থেকে দূরে থাকতে না পারে।

গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে তিনি এ কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ইন দ্য ফিল্ড অব ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ প্রবর্তন করায় এর ওপর আনীত প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
এর আগে কার্যপ্রণালি বিধির ১৪৭ ধারা অনুযায়ী উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ এ প্রস্তাব আনেন। প্রস্তাবে তিনি উল্লেখ করেন, সংসদের অভিমত এই যে, জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ইন দ্য ফিল্ড অব ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ প্রবর্তন করায় জাতীয় সংসদে বিশেষ আলোচনার মাধ্যমে ইউনেস্কোকে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ হতে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানানো হোক।

সংসদে প্রস্তাবটির ওপর অনেক এমপি-মন্ত্রী আলোচনা করেন। বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদেরও বক্তব্য দেন। বিএনপির এমপি হারুনুর রশীদও আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি ভোটে দিলে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

বঙ্গবন্ধুর নামে পুরস্কার চালু করায় সংসদের আলোচনায় ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। সাধারণ আলোচনায় স্বাধীনতার পর দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে জাতির পিতার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন।

বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নিহতদের স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, মাত্র সাড়ে তিন বছরে তিনি একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলেছিলেন। আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ। পৃথিবীর কোনো দেশ স্বাধীনতার পর এত অল্প সময়ে এত স্বীকৃতি আদায় করতে পারেনি, যেটা বাংলাদেশ পেরেছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আমাদের ছিল বলেই সেটা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, এ দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক মুক্তির জন্য, স্বাধীনতা অর্থবহ করার জন্য, স্বাধীনতার সুফল বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার জন্য তিনি যখন অর্থনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা দিলেন, দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির ঘোষণা দিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে তাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। এ হত্যাকাণ্ড শুধু প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু বা শেখ মুজিবকে নয়, বরং আমাদের পরিবার ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনকেও হত্যা করা হলো।

শেখ হাসিনা বলেন, ওদের মনে হয় একটাই চিন্তা ছিল। জাতির পিতাকে পরিবারসহ হত্যা করলে বাংলাদেশ যে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিল, বিজয়ী জাতি হিসেবে যেভাবে মাথা তুলে বিশ্ব দরবারে চলছিল, সেই জায়গাটা নষ্ট করা। স্বাধীনতার সুফল যেন বাংলাদেশের ঘরে না পৌঁছায়, স্বাধীনতা যেন ব্যর্থ হয়, ওই বিজয় যেন ব্যর্থ হয়, এটাই বোধহয় প্রচেষ্টা ছিল। যেটা আমরা দেখেছি ২১ বছর। সেভাবেই দেশ পরিচালনা করা হয়েছে। অন্যথায় বাংলাদেশের মানুষের যে উন্নয়ন করা যায় সেটা আজ আমরা প্রমাণ করেছি, প্রমাণ করতে পেরেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সব সময় উদ্যোগ রয়েছে। জাতির পিতা আমাদের সংবিধান দিয়েছেন। আমাদের চার মৌলিক নীতি দিয়েছেন। পাশাপাশি মানুষের মৌলিক অধিকারের কথাগুলো বলেছেন। বাংলার ভূমিহীন মানুষদের ঘরবাড়ি তৈরি করে দেয়া, চিকিৎসাসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া, শিক্ষার ব্যবস্থা করা, শিক্ষাকে অবৈতনিক করা।

তিনি বলেন, একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ। কোনো কারেন্সি নোট নেই। এ অবস্থায় প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করে দেড় লক্ষাধিক সরকারি চাকরি দেয়া, এমনকি যেসব পত্রপত্রিকায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল, যেগুলো তারা চালাতে পারছিল না। সেই সাংবাদিকদের পর্যন্ত সরকারি চাকরির মর্যাদা দিয়েছেন তিনি। প্রত্যেকটি শিল্প-কারখানা, পরিত্যক্ত কারখানা বা ফেলে দেয়া বা বন্ধ করে দেয়া কলকারখানাগুলো তিনি জাতীয়করণ করে চালু করেন।

সংসদ নেতা বলেন, বেসরকারি খাত ধীরে ধীরে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন এবং আমাদের সংবিধানে অর্থনৈতিক নীতিমালায় সেটা বলা আছে। সেই সঙ্গে তিনি সেই যুগেই আমাদের কৃষি যান্ত্রিকীকরণের চিন্তা করেছিলেন। আমাদের ফসল দ্বিগুণ-তিনগুণ বাড়াতে হবে। দেশের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা দিতে হবে। তিনি সবসময় বলতেন, ভিক্ষুক জাতির কোনো ইজ্জত থাকে না। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন- বাংলাদেশ যেনো আত্মমর্যাদার সঙ্গে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে। কিন্তু পঁচাত্তরের পরে আমরা দেখেছি, হাজার হাজার সামরিক বাহিনীর অফিসার, বিমানবাহিনীর অফিসার, সৈনিক, সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। কারাগারে ফেলে রাখা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশের প্রেক্ষাপটের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এসে দেখেছি বিজ্ঞান কেউ পড়ে না। বিজ্ঞানের ক্লাস হয় না। বিজ্ঞানের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। গবেষণা তো ছিলই না। এজন্য বিশেষ বরাদ্দ ছিল না। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা পিছিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু এখন আর পিছিয়ে নেই। আমি ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশের জনগণকে। আমাদের তারা বারবার ভোট দিয়েছেন। সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। এই এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে এখন আর বাংলাদেশের কাউকে বাইরে গিয়ে কথা শুনতে হয় না। ভালো কাজটা কেউ চোখে না দেখলে আমাদের কিছু বলার নেই।

তিনি বলেন, আমরা ইয়াং বাংলা স্টার্টআপ শুরু করেছি এবং এজন্য কিছু বরাদ্দ দিয়েছে। আমার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, রেহানার ছেলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিকসহ আমাদের কিছু ইয়াং সংসদ সদস্য সবাই কিন্তু এই প্রোগ্রাম নিয়েছে। একটা জিনিস একদিনে তো হয় না, ধাপে ধাপে করতে হয়।



 

Show all comments
  • Mustaque Ahmed Ruhi ১৬ নভেম্বর, ২০২১, ১:০৫ এএম says : 2
    · সময়পযোগী চিন্তার জন্য ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Mashud Perveg Rinku ১৬ নভেম্বর, ২০২১, ১:০৫ এএম says : 2
    এটা একমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Mozammel Haque ১৬ নভেম্বর, ২০২১, ১:০৫ এএম says : 2
    মানবতার মা জননী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ভ্যাকসিনের যথেষ্ট উৎপাদনের ব্যবস্থা করবেন
    Total Reply(0) Reply
  • Alaudden Palash ১৬ নভেম্বর, ২০২১, ১:০৫ এএম says : 0
    তাহলে উৎপাদন শুরু করে বাহিরে বিক্রি করা শুরু করেন না কেন?
    Total Reply(0) Reply
  • Shibli Rahman ১৬ নভেম্বর, ২০২১, ১:০৬ এএম says : 2
    যতদিন দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাতে থাকবে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ
    Total Reply(0) Reply
  • K.M. Mahfuz ১৬ নভেম্বর, ২০২১, ১:০৬ এএম says : 2
    Yes, your efficient & dynamic pharmaceuticals will do it very soon. We have all capabilities.
    Total Reply(0) Reply
  • Tuhin Hossan ১৬ নভেম্বর, ২০২১, ১:০৬ এএম says : 2
    করোনার টিকা উৎপাদন করে রপ্তানী করার সক্ষমতা বাংলাদেশ আছে । জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু , জয় শেখ হাসিনা
    Total Reply(0) Reply
  • Farzan Hossain ১৬ নভেম্বর, ২০২১, ১:০৬ এএম says : 0
    ব্যান কোভিড নিয়ে আমরা আশাবাদী ছিলাম। গ্লোব বায়োটেক এর উচিৎ বন্ধুপ্রতিম কোনো দেশের সাথে (ভারত, চীন বাদে) যৌথভাবে টিকা উদ্ভাবন করা।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Didar Hossain ১৬ নভেম্বর, ২০২১, ১:০৭ এএম says : 0
    ভালো উদ্যোগ। কিন্তু আগে আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠান গুলো দেশের বাজারে বাজে মানের যে ঔষধ সরবরাহ করে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ