Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনা পরীক্ষার আড়াই কোটি টাকা আত্মসাত

খোঁজ মেলেনি দু’মাসেও টেকনোলজিস্ট লাপাত্তা

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

খুলনার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে করোনা টেস্টের ২ কোটি ৫৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাতের ঘটনায় খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের তিন সদস্য কমিটি তদন্তের জন্য আরও ১০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পুনরায় এ সময় দেয়া হয়েছে। তদন্তে নানা অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসায় অনেক কর্মকর্তারা ফেঁসে যাচ্ছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে প্রায় দু’মাসেও (৫০ দিন) খোঁজ মেলেনি ওই আড়াই কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা ল্যাব টেকনোলজিস্ট প্রকাশ কুমার দাসের। তার বিরুদ্ধে যে কোনো দিন বিভাগীয় মামলা দায়ের হচ্ছে। এ জন্য মামলার সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
খুলনা বিভাগীয় (স্বাস্থ্য) পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মনজরুল মুরশিদ জানান, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন হচ্ছে না। যে কারণে আরও ১৫ দিনের সময় চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আবেদনের প্রেক্ষিতে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করেন। গত ৪ নভেম্বর পুনরায় এই তদন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। সদ্য বিদায়ী খুলনা বিভাগীয় (স্বাস্থ্য) পরিচালক ডা. জসিম উদ্দিন হাওলাদার এ নির্দেশনা প্রদান করেন। এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মনজরুল মুরশিদকে প্রধান করে তিন সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিতে অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম অন্যজন হচ্ছেন সহকারী পরিচালক (মেডিক্যাল সাব ডিপো) ডা. মো. রফিকুল ইসলাম গাজী।
খুলনা সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ জানান, টাকা আত্মসাতকারী প্রকাশ কুমার দাসের বিরুদ্ধে যে কোনো দিন বিভাগীয় মামলা দায়ের হচ্ছে। মামলার প্রস্তুতির জন্য সকল কাগজপত্র ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) খুলনার পক্ষ থেকে এখনো মামলা দায়ের বিষয়ে আমাদেরকে কোনো কিছু জানায় নি। প্রায়ই এ বিষয়ে তাদের সাথে কথাবার্তা হচ্ছে। প্যাথলজিস্ট ইনচার্জ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট প্রকাশ কুমার দাস আত্মগোপনে পর থেকে এখনো তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
এদিকে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরে গঠিত তিন সদস্য কমিটি তদন্তে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে প্যাথলজি বিভাগে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি ধরা পড়ছে। এ সব অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে ল্যাব টেকনোলজিস্ট প্রকাশ কুমার দাসসহ আরো অনেকেই জড়িত রয়েছেন। তদন্তে ফেসে যাচ্ছেন ফেঁসে যেতে পারেন হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা।
হাসপাতালে সূত্র মতে, হাসপাতালের ইউজার ফি সঠিকভাবে নিরুপনের জন্য গত ২২ আগষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। খুলনা সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদকে প্রধান করে ৫ সদস্য তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। গঠিত কমিটি গত ১৬ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করে। তদন্তে বেরিয়ে আসে ২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত করোনা পরীক্ষার ইউজার ফি বাবদ মোট ৪ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা আদায় হলেও সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে মাত্র ১ কোটি ৬৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। ল্যাব টেকনোলজিস্ট ও ল্যাব ইনচার্জ প্রকাশ কুমার দাস বাকি ২ কোটি ৫৭ লাখ ৯৭ হাজার টাকা জমা দেননি। ওই টাকা কেন সরকারি কোষাগারে জমা দেননি তার জবাব দেয়ার জন্য গত ২০ সেপ্টেম্বর কৈফিয়ত তলব করা হয়। কিন্তু দু’দিন অতিবাহিত হওয়ার পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুরের পর থেকে প্রকাশ কুমার দাস গা ঢাকা দেন। ওইদিনের পর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইলও বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় কেএমপির খুলনা থানায় জেনারেল হাসপাতালের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট প্রকাশ কুমার দাসের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ গত ২৭ সেপ্টেম্বর সোমবার রাতে একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন। এরপর গত ৫০ দিন অতিবাহিত হলেও তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। জানা যায়, করোনা শুরুর প্রথম দিকে করোনা টেস্টের জন্য সাধারণ মানুষদের বাসায় গিয়ে করোনা টেস্টের জন্য হাসপাতালের থেকে যাদের স্যাম্পল কালেকশনের পাঠাতেন তাদের দিতে হতো ১ হাজার টাকা করে এবং হাসপাতালে এসে করোনা টেস্টের করালে নেওয়া হতো ৫’শ টাকা। দীর্ঘ কয়েক মাস এভাবে চলার পর পরবর্তীতে নেয়া শুরু করে ৩’শ ও ৫’শ টাকা। এর কয়েক মাস পরে হাসপাতালে আসা সাধারণ মানুষের করোনা টেস্টের জন্য নেয়া হতো ১’শ টাকা। তখন বাসা বাড়িতে গিয়ে সাধারণ মানুষের করোনা টেস্টের স্যাম্পল নেয়া বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা থাকলেও গোপনে তা টাকার বিনিময়ে নেয়া হতো। এছাড়া বিদেশগামীদের সাড়ে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা করোনা টেস্টের জন্য নেওয়া হতো। এসব কিছুর দায়িত্বে ছিলেন ল্যাব ইনচার্জ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট প্রকাশ কুমার দাসের। পাশাপাশি তিনি হাসপাতালের হাসপাতালে প্যাথলজির ল্যাব ইনচার্জের দায়িত্ব পালন করতেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ