পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় অংশীদার হতে ব্রিটিশ উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও বিদেশিদের সহযোগী হিসেবে বিনিয়োগে নিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার লন্ডনের কুইন এলিজাবেথ সেন্টারের চার্চিল হলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১ : বিল্ডিং সাসটেইনেবল গ্রোথ পার্টনারশিপ অ্যান্ড রোড শো’র উদ্বোধনকালে এ আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রতিনিধি দেশটির ট্রেড ও পলিসি প্রতিমন্ত্রী পেনি মরডাউন্ট বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশের পুজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকে উদ্বুদ্ধ করতে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিএসইসি) এই রোড শো’র আয়োজন করেছে। আগামী ৮ নভেম্বর যুক্তরাজ্যে ম্যানচেস্টারে এরকমই আরেকটি রোড শো’ অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জ্বালানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল, লাইন ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাগ্রো প্রসেসিং, ব্লু-ইকোনোমি, ট্যুরিজম, হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, তথ্য-প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় সেক্টরে সুবিধা নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অপেক্ষা করছে বাংলাদেশ। ব্রিটিশ উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের জন্য এসব সেক্টর বা এর বাইরে যে কোনো সেক্টর বেছে নিতে পারেন।
বিনিয়োগের জন্য ব্রিটিশ উদ্যোক্তাদের একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বেছে নেয়ার আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে, যেখানে বিশেষ কোনো একটি দেশের কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করতে পারে। যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারীরা তাদের জন্য সেরকম কোনো একটি অঞ্চল বেছে নিতে পারেন। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল, ২৮টি হাইটেক পার্ক প্রস্তুত করার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুবিধার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, দ্রæত নগরায়ন, মানুষের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সক্ষমতা বৃদ্ধি, মধ্যম আয়ের ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি, দক্ষিণ এশিয়ার বিশাল বাজারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি আঞ্চলিক কানেকটিভিটি বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ এখন আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের জনসম্পদের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রতিযোগিতামূলক মজুরিতে দক্ষ মানবসম্পদ পাওয়া নিশ্চিত করতে সরকার গুরুত্ব দিয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ব্যবসার অনুক‚ল পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে জানিয়ে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনুক‚ল ব্যবসা পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সরকারের এজেন্সিগুলো সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেবে। বিনিয়োগের সর্বোত্তম সম্ভাব্য রিটার্ন পেতে ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা সরবরাহ করা হবে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে সফলভাবে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এভাবে আরও কোম্পানিকে বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসার এবং বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেও বিনিয়োগ করার আমন্ত্রণ জানান তিনি।
প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও নিজের দেশে বিনিয়োগ নিয়ে আসার আহবানজানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বিদেশে আছেন, এখন নিজের দেশে আসেন, বিনিয়োগ করেন। আর এখানে যারা ব্যবসা করছেন তাদের জন্য সুবিধা, আপনারা বাংলাদেশে ইন্ডাস্ট্রি করতে পারেন। বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশি যারা তাদের বিশেষভাবে আহবান করি। আপনারা আসেন এবং ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের পার্টনার করে নিয়ে আসেন। তাদের সঙ্গে আপনারা বাংলাদেশে এসে ব্যবসা করেন। সবরকম সুযোগ-সুবিধা আপনারা পাবেন। কারো যদি কোনো অসুবিধা থাকে, সেটা আমরা দেখব। যারা বাংলাদেশের আছেন তারা যদি আসেন তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা দেয়া হবে।
প্রবাসীদের খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পে বিনিয়োগ করার আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলেন তাহলে আমি মনে করি আরও বেশি ভালো তাজা শাক-সবজি, মাছ, ফল-মূল সব নিয়ে আসতে পারবেন। আমাদের কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে। সারা বছরই আমরা সব ধরনের সবজি সব কিছু উৎপাদন করতে পারি। গবেষণার মাধ্যমে সেটা আমরা অর্জন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মের পর থেকে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উপভোগ করছে। শুধু তাই নয়, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ায় যারা এগিয়ে এসেছে যুক্তরাজ্য তাদের মধ্যে অন্যতম। তখন থেকে দুই দেশের সম্পর্ক শক্তিশালী থেকে আরও শক্তিশালী হচ্ছে। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রফতানি গন্তব্য এবং যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের মাধ্যমে দুই দেশের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সম্পর্ককে আরও ফলপ্রসূ হবে বলে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোডশোটি ব্যবসা ও বিনিয়োগে বাংলাদেশের সম্ভবনাগুলোকে তুলে ধরবে।
গত এক দশকে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নতি করেছে। দেশকে উন্নত করতে সরকারের প্রচেষ্টার ফলে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা দিয়েছে।
পদ্মাসেতু, মেট্রোরেলসহ যোগাযোগ ও অবকাঠামো ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেক্টরে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। শক্তিশালী নেতৃত্ব, সুশাসন, স্থিতিশীল সরকার, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন অগ্রাধিকারের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ৩১তম বৃহত্তম অর্থনীতি।
সভাপতির বক্তব্যে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের অনেক উন্নতি হয়েছে। এশিয়ার শেয়ারবাজারের মধ্যে সর্বোচ্চ রিটার্ন বা মুনাফা দিয়েছে।
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে বিনিয়োগে আহবান করার কারণ হিসেবে বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রæত এগিয়ে যাচ্ছে, বৈশ্বিক অস্থিরতা শোষণ ক্ষমতা রয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার স্ট্যাবল, সুদ হার অনুক‚লে, বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পূর্বানুমতি দরকার পড়ে না, নিটা অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সহজেই বিনিয়োগ করা যায়, মুনাফাসহ রিটার্ন ফেরতের ক্ষেত্রেও অনুমতি নিতে হয় না। সুতরাং খুব সহজেই বিদেশিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ অনুক‚লে ও ব্যবসাবান্ধব সরকার রয়েছে বলে জানান তিনি। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যবাসীকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহবান করেন তিনি। এতে উভয় পক্ষ লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। এরইমধ্যে পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মৃত্যুহার কমে এসেছে, শিক্ষার হার ও জিডিপি বেড়েছে। দেশের উন্নয়নে ডিজিটালাইজেশনে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলেও জানান বিএসইসি’র চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। এছাড়া মেট্রোরেল, স্যাটেলাইট উদ্বোধনের মতো মেগা প্রজেক্টের কাজ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। একই সঙ্গে মেধাবীরা নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে স্টার্ট আপস কোম্পানি পরিচালনা করছে বলে যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারকে নিয়মিত উন্নত করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ারবাজার সর্বোচ্চ রিটার্ন দিচ্ছে। ফলে এখন বিনিয়োগের জন্য খুবই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে এম আব্দুল মোমেন, ভ‚মিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ, যুক্তরাজ্যের ট্রেড অ্যান্ড পলিসি মন্ত্রী পেনি মরডাউন্ট, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার, আইএমওতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি সাইদা মুনা তাসনিম, বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম, এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মাহতাবুর রহমান, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক গ্রæপের চেয়ারম্যান ড. জোসে ভিনালস, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সেরাজুল ইসলাম প্রমূখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহাম্মদ রহমতুল মোনিম প্রমূখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।