Inqilab Logo

শনিবার, ০৮ জুন ২০২৪, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

জলবায়ু অভিবাসীদের দায়িত্ব বিশ্বকে নিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

কপ-২৬ সম্মেলন বরিস জনসন ও প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, নদীভাঙন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, বন্যা ও খরার মতো প্রাকৃতিক ঘটনায় প্রভাবিত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া জলবায়ু অভিবাসীদের দায়িত্ব বিশ্বকে অবশ্যই ভাগ করে নিতে হবে। ক্ষতির বিষয়টি অবশ্যই সঠিকভাবে সমাধান করতে হবে।

স্কটিশ পার্লামেন্টে ‘কল ফর ক্লাইমেট প্রসপারিটি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ‘অ্যা বাংলাদেশ ভিশন ফর গ্লোবাল ক্লাইমেট প্রসপারিটি’ শিরোনামে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন শেখ হাসিনা। এসময় বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা এবং প্রধানমন্ত্রীর কন্য সিভিএফ দূত সায়মা ওয়াজেদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। স্কটিশ পার্লামেন্টে পৌঁছুলে স্পিকার অ্যালিসন জনস্টোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে ইতোমধ্যে জলবায়ু বাস্তুচ্যুত ৬০ লাখ মানুষ রয়েছে। আরও অতিরিক্ত ১.১ মিলিয়ন মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বোঝা যোগ হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা এক্ষেত্রে অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কার্যকর ও পর্যাপ্ত জলবায়ু অর্থায়ন এ সময়ে সমৃদ্ধি অর্জনের মূল চাবিকাঠি। তিনি তার ভাষণে এমসিপিপি (মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান) সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাবনা পেশ করেন।

ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) এবং ভালনারেবল২০ (ভি২০) সভাপতি শেখ হাসিনা তার প্রস্তাবে বলেন, প্রধান কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলেকে অবশ্যই ব্যাপক ভিত্তিক এনডিসি (জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান) পেশ এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। উচ্চাভিলাষী প্রভাব প্রশমন প্রয়াস ছাড়া, শুধুমাত্র অভিযোজন ব্যবস্থা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবগুলোকে ধীর, বন্ধ এবং পাল্টানোর জন্য যথেষ্ট নয়। অপর এক প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সাশ্রয়ী মূল্যে সবুজ প্রযুক্তির প্রসারের পরামর্শ দেন, যাতে মুজিব জলবায়ু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়। এছাড়াও উন্নত দেশগুলোকে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ওপর বিশেষ মনোযোগ দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার ব্যাপারে করা অঙ্গীকার পূরণেরও তিনি পুনরায় আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মানবজাতির সবচেয়ে গুরুতর বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বিশ্বনেতারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবের অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি মোকাবিলায় তাদের বৈশ্বিক সম্মিলিত প্রচেষ্টার সমন্বয়ে জলবায়ু কর্মসূচির বিষয়ে তাদের সংকল্প ও উচ্চাকাক্সক্ষা প্রকাশ করতে গ্লাসগোতে সমবেত হয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে কোনো দেশই মুক্ত নয়।

তিনি বলেন, চরম তাপমাত্রা, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, বন্যা ও খরা, অধিকতর তীব্র গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঋতু পরিবর্তন, নদী ভাঙ্গন বাংলাদেশ ও অন্যান্য জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিকে বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুতর হুমকি। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বেড়ে গেলে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর বাংলাদেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবে নষ্ট হয়ে যায় এবং আগামী দশকে তা নয় শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। যদিও আমরা জলবায়ু প্রভাবের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ, একই সময়ে আমরা আমাদের সহিষ্ণুতার জন্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।

এ প্রসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটিএফ) প্রতিষ্ঠা করেছে। এ তহবিলের আওতায় বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৪৮০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগসহ ৮০০টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে যা প্রধানত অভিযোজন, প্রভাব প্রশমন এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা একটি নিরাপদ, জলবায়ুসহিষ্ণু এবং সমৃদ্ধ ব-দ্বীপ অর্জনের জন্য অভিযোজিত ব-দ্বীপের ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি ব্যাপক ভিত্তিক ১০০ বছরের কৌশলগত পরিকল্পনা ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ গ্রহণ করেছি। বর্তমানে দেশ অগ্রসর হচ্ছে এবং একটি জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (এনএপি) প্রণয়ন করছে, যা আমাদের অভিযোজন উচ্চাকাঙ্খাকে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে নেবে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস থেকে শক্তি উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশের পরিকল্পনার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আনন্দের সাথে জানাচ্ছে যে, ৬.৫ মিলিয়ন পরিবারে গার্হস্থ্য ব্যবহারের জন্য সৌর শক্তি রয়েছে, যা সারা বিশ্বের অফ-গ্রিড সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের সবচেয়ে বড় একটি অংশ।

তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের লক্ষ্য রয়েছে আমাদের ৪০ শতাংশ শক্তি নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপন্ন করার। আমরা আমাদের মাস ট্রানজিট সিস্টেমের জন্য বৈদ্যুতিক লোকোমোটিভও সংগ্রহ করছি। এতে আমাদের কার্বন নির্গমন আরও হ্রাস পাবে। বাংলাদেশ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বৈদ্যুতিক গাড়ি চালু করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনকালে সরকার সারাদেশে ৩ কোটি বৃক্ষরোপণ করছে। উপরন্তু, বজ্রপাতে মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে সরকার ৫.৪ মিলিয়ন তাল গাছ রোপণ করেছে, যা কার্বন হ্রাসে আরও অবদান রাখছে।

শেখ হাসিনা বলেন, অভিযোজন ব্যবস্থার অংশ হিসেবে বর্তমান সরকার উপকূলীয় অঞ্চলের পাশাপাশি নদীভাঙন প্রবণ এলাকায় বাঁধ পুনর্র্নিমাণ ও শক্তিশালী করারও পরিকল্পনা করছে। আমরা এ বাঁধগুলোতে সোলার প্যানেল এবং বায়ু টারবাইন স্থাপন করার আশা করছি। নেট মিটারিং সিস্টেম এমনকি বসতবাড়িতে স্থাপন করা সোলার প্যানেল জাতীয় গ্রিডে অবদান রাখতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা সবুজ বিনিয়োগের জন্য বৈশ্বিক তহবিল থেকে অর্থায়ন পাবো এবং আমাদের তরুণদের শিক্ষার মান ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে বলে আশা করি। দ্রুত একটি উন্নত দেশের মর্যাদা লাভের লক্ষ্যে পৌঁছাতে এটি আমাদের সাহায্য করবে।

বরিস জনসন ও প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। উভয় প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় ও পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। গত মঙ্গলবার স্কটিশ এক্সিবিশন সেন্টারে কপ-২৬ ভেন্যুর ইউকে মিটিং রুমে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উভয়ের আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় ও পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় স্থান পায়। এছাড়াও তিনি গত সোমবার মার্কিন ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটসের সঙ্গে কপ-২৬-এর সাইডলাইনে জলবায়ু পরিবর্তন ও উন্নয়ন ইস্যুতে আলোচনা করেন।

প্রধানমন্ত্রীর দিনের কর্মব্যস্ততার বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, দুই বৈশ্বিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ, উদ্যোগ ও চাহিদা তুলে ধরেন।



 

Show all comments
  • Saiful Islam Razim ৪ নভেম্বর, ২০২১, ১২:৪৯ এএম says : 0
    বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত, গনতন্ত্রের মানসকন্যা, দুস্থ দুর্গত অসহায় মানুষের আপনজন, দেশরত্ন, জননেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Shariful Islam Pinu ৪ নভেম্বর, ২০২১, ১২:৪৯ এএম says : 0
    Congratulations & Best Wishes Honorable Prime Minister Sheikh Hasina...জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
    Total Reply(0) Reply
  • Nozmul Islam ৪ নভেম্বর, ২০২১, ১২:৫০ এএম says : 0
    বিশ্ব মঞ্চে আপনার নেতৃত্ব সুদৃঢ় হউক মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Year Ali Sikder ৪ নভেম্বর, ২০২১, ১২:৫০ এএম says : 0
    স্বাধীনতা থেকে সমৃদ্ধির পথে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু থেকে জয়তু মুকুট মনি মাননীয় মানবিক প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে দূর্নীতি মুক্ত পারস্পরিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে দূর্বার সমৃদ্ধির অদম্য অগ্রযাত্রায় আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল ইনশাআল্লাহ, জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু জয় শেখ হাসিনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Shahanaj Parvin ৪ নভেম্বর, ২০২১, ১২:৫০ এএম says : 0
    মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আপা আপনার জন্য রইলো অনেক অনেক শুভকামনা। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahbubur Rahman Saddam ৪ নভেম্বর, ২০২১, ১২:৫২ এএম says : 0
    এগিয়ে জান জয়তু শেখ হাসিনা
    Total Reply(0) Reply
  • প্রভাকর পাল ৪ নভেম্বর, ২০২১, ১২:৫৩ এএম says : 0
    সারা বি‌শ্বের ম‌ধ্যে সৎ সফল ও সেরা রাষ্ট্র নায়ক‌দের ম‌ধ্যে অন‌্যতম একজন হ‌চ্ছেন বাংলা‌দে‌শের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হা‌সিনা
    Total Reply(0) Reply
  • মামুন রশিদ চৌধুরী ৪ নভেম্বর, ২০২১, ১২:৫৩ এএম says : 0
    অভিনন্দন জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • Engr Faruk ৪ নভেম্বর, ২০২১, ১২:৫৪ এএম says : 0
    প্রিয় এই বাংলার গরীব অসহায় মানুষের এবং এতিম শিশুদের মমতাময়ী মা আপনার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ