পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী

ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ড্যান্স কামরুল ২০০১ সালে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করে। ২০১৬ সালে এফডিসি ও বিভিন্ন শুটিংস্পটে আসা-যাওয়া শুরু করে। এরপর প্রতিষ্ঠা করে ‘ড্যান্স ক্লাব’। এই ড্যান্স ক্লাবের আড়ালে তরুণীদের নাচ-গান শেখানোর কথা বলে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে বিভিন্ন অনৈতিক কাজে বাধ্য করাতো। এ ক্লাবের মাধ্যমেই চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে শতাধিক নারীকে ভারতে পাচার করে কামরুল। এরকম ২৩ নারীকে সম্প্রতি উদ্ধার করেছে র্যাব। একই সাথে মানবপাচারের অভিযোগে চক্রের মূল হোতা মো. কামরুল ইসলাম ওরফে জলিল ওরফে ডিজে কামরুল ওরফে ড্যান্স কামরুলসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গতকাল শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব জানায়, গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা, তেজগাঁও এবং চুয়াডাঙ্গা থেকে বিদেশে পাচার হতে যাওয়া ২৩ জন নারীকে উদ্ধার করে র্যাব। র্যাবের অভিযানে যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তারা হলো-ভারতে নারী পাচারচক্রের মূলহোতা কামরুল ইসলাম জলিল ওরফে ডিজে কামরুল, রিপন মোল্লা, আসাদুজ্জামান সেলিম, নাইমুর রহমান, মধ্যপ্রাচ্যে নারী পাচারচক্রের সদস্য নুর নবী ভুইয়া রানা, আবুল বাশার, আল ইমরান, মনিরুজ্জামান, শহিদ শিকদার, প্রমোদ চন্দ্র দাস ও টোকন। অভিযানের সময় ৫৩টি পাসপোর্ট, ২০টি মোবাইল, বিদেশি মদ, ২৩ ক্যান বিয়ার, দুটি মোটরসাইকেলও উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন বলেন, ভারতে মানবপাচারকারী চক্রের মূলহোতা ড্যান্স কামরুল চক্রের ১৫-২০ জন সদস্য রয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে চক্রটি সক্রিয়ভাবে মানবপাচার অপরাধে জড়িত। চক্রটি দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কমবয়সী তরুণীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে এবং প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাচার করে। প্রথমে চক্রটি ভিকটিমদের নাচ শেখানোর নামে প্রত্যন্ত অঞ্চলের থেকে সুন্দরী মেয়েদের ঢাকায় নিয়ে আসত। পরে তাদের বেপোয়ারা জীবনযাপনে অভ্যস্ত করত। পরবর্তীতে তাদের পার্শ্ববর্তী দেশে বিভিন্ন চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করত। এভাবে চক্রটি তিন বছরে শতাধিক নারীকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করেছে। তিনি বলেন, ভিকটিমদের পার্শ্ববর্তী দেশে মার্কেট, সুপারশপ, বিউটি পার্লারসহ লোভনীয় চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করা হকো। মূলত পার্শ্ববর্তী দেশে অমানবিক এবং অনৈতিক কাজ করানোর উদ্দেশ্যে তাদের পাচার করা হতো। চক্রটি রাজাধানী ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় সক্রিয় রয়েছে।
ভিকটিমদের সীমান্তের অরক্ষিত এলাকা দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করে জানিয়ে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন জানান, এই চক্রের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশের সিন্ডিকেটের যোগসাজশ রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশের চক্রের সদস্যরা ভিকটিমদের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে। এরপর বিপুল অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন শহরে/প্রদেশে অনৈতিক কাজ করানোর উদ্দেশ্যে বিক্রি করে দিত। এরপর থেকে ভিকটিমদের আর কোন সন্ধান পাওয়া যায় না।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসে বাড্ডা এলাকায় রিকশাচালক হিসেবে জীবিকা শুরু করেন কামরুল। কিছুদিন পর একটি কোম্পানির ডেলিভারি ভ্যানচালক হিসেবে কাজ নেন। এরপর ড্যান্স গ্রুপের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে হাতিরঝিল এলাকায় ‘ডিজে কামরুল ড্যান্স কিংডম’ নামে একটি ড্যান্স ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। সাম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশে বাংলাদেশের তরুণীকে পৈশাচিক নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর পার্শ্ববর্তী দেশে মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা বস রাফিসহ চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এছাড়াও একজন মহিয়সী ‘মা’ জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে নিজে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার হয়ে মেয়েকে পাচারকারীদের কাছ থেকে উদ্ধারের ঘটনা ভাইরাল হয়।
র্যাব আরও জানায়, কামরুলের মাধ্যমে এক নারীকে ভারতে পাচারের ঘটনায় তার বোন বাড্ডা থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেন। সেই মামলায় ২০১৯ সালের মাঝামাঝি পুলিশ তাকে আটক করে। তিন মাস পর কারাগার থেকে বের হয়ে পুনরায় নারী পাচারে জড়িয়ে পড়ে। এসব নারীদের সীমান্তবর্তী জেলায় অবস্থিত সেফ হাউজে অবস্থান করাত। পরবর্তীতে সেফ হাউজে থাকা অবস্থায় তাদের মোবাইল নিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হতো। এরপর সুবিধাজনক সময়ে চক্রের সদস্যরা নারীদের অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করে। এই চক্রের গ্রেপ্তার রিপন, সেলিম এবং শামীম নারী পাচারের অবৈধ কাজে মূলহোতাকে সহায়তা করত বলে স্বীকার করেছে।
র্যাবের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এ চক্রটি মধ্যপ্রাচ্যে পাচার চক্রের সাথেও জড়িত। গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মধ্যপ্রাচ্যে এ চক্রে দেশে ১০-১২ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। ৫/৭ বছর যাবত এই চক্রটি সক্রিয়ভাবে নারী ও পুরুষ মানব পাচার করে আসছিল। হাউজকিপিং, নার্স, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি পেশায় নারী কর্মীদের বিনা অর্থে প্রেরণের প্রলোভন দেখিয়ে উঠতি বয়সী তরুণী ও মধ্যবয়স্ক নারীদের প্রলুব্ধ করত চক্রটি। মূলত বিদেশে পাচারের মাধ্যমে ভিকটিমদের বিক্রি করে দেওয়া হত। এ পর্যন্ত চক্রটি ইতিমধ্যে ৩০-৩৫ জন নারী’কে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে। পাচারকারীরা ঢাকায় কয়েকটি সেফ হাউজ পরিচালনা করে। বেশ কয়েকদিন সেফ হাউজে ভিকটিমদের আটকে রেখে পরবর্তীতে মধ্যপ্রাচ্যে পাচার করা হয়। তবে মধ্যপ্রাচ্যে মানব পাচারকারী চক্রের মূলহোতা নুর-নবী ভুইয়া রানা। তার সাথে ড্যান্স কামরুলের সর্ম্পক রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, নুর-নবী ভুইয়া রানা লহ্মীপুরের স্থানীয় একটি কলেজ থেকে ১৯৯৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৯৬ সালে ঢাকায় এসে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি দিয়ে কর্মজীবন শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সাল হতে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ওমানে প্রবাসী হিসেবে কাজ করেন। ওমানে থাকা অবস্থায় মানব পাচারকারী একটি চক্রের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তখন থেকেই মানবপাচার কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে ২০২০ সালে ওমান থেকে দেশে ফিরে মানবপাচারের সঙ্গে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়ে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।