Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

‘এশিয়া-প্যাসিফিক এবং বাংলাদেশ : অর্থনৈতিক সম্ভাবনা’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত

ব্যবসা ও বিনিয়োগ আকর্ষণ আঞ্চলিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে গুরুত্বারোপ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০২১, ৭:৩৯ পিএম | আপডেট : ৭:৫১ পিএম, ২৯ অক্টোবর, ২০২১

ভৌগোলিক দিক থেকে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে কৌশলগত স্থানে বাংলাদেশের অবস্থান এবং এখানকার বাণিজ্য সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক নীতিমালার সংষ্কার ও সহায়ক নীতি প্রণয়ন, পণ্য বহুমুখীকরণ, কর ও শুল্ক কাঠামোর আধুনিকায়ন, অবকাঠামোখাতের উন্নয়ন, ক্রড বর্ডার বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি একান্ত অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেছেন ‘এশিয়া-প্যাসিফিক এবং বাংলাদেশ : অর্থনৈতিক সম্ভাবনা’ শীর্ষক ওয়েবিনারের আলোচকরা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) যৌথভাবে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলনের ৪র্থ দিন অদ্য শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) ‘এশিয়া-প্যাসিফিক এবং বাংলাদেশ : অর্থনৈতিক সম্ভাবনা’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া প্রধান অতিথি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নায়োকি সম্মানিত অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।

ওয়েবিনারের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বাংলাদেশের মোট আমদানির প্রায় ৫০ ভাগই আসে এ অঞ্চলের দেশসমূহ হতে। তিনি উল্লেখ করেন, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সিঙ্গাপুর থেকে ২০২১ সালে ২৩৯.৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বিনিয়োগ এসেছে এবং মূলত খাদ্য, কৃষি, ফিশারীজ, কেমিক্যাল, টেক্সটাইল, তৈরি পোষাক, সিমেন্ট, নির্মাণ, টেলিকম, ইন্স্যুরেন্স ও ব্যাংকিং প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, নন-ট্যারিফ প্রতিবন্ধকতা, টেকনিক্যাল ও টেষ্টিং সুবিধার অপর্যাপ্ততা এবং পিটিএ ও এফটিএ’র অনুপস্থিতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিদ্যমান সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রবেশদ্বার বাংলাদেশ এবং এই সুযোগকে কাজে লাগাতে আমাদেরকে এখনই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি জানান, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমাদের বেসরকারীখাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং বেসরকারীখাত হতে উত্থাপিত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক প্রতিবন্ধকতাসমূহ সম্পর্কে সরকার অবগত রয়েছে, সেগুলো দ্রুত নিরসনে সরকার বন্ধ পরিকর। তোফাজ্জল হোসেন বলেন, সরকার দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানিক সংষ্কার করেছে, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে শিল্প-কারখানার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা সম্ভব হবে। তিনি টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নে জোরারোপ করেন।

ফাতিমা ইয়াসমিন বলেন, সরকারের ক্রমাগত নীতি সহায়তার ফলে দেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত হচেছ এবং সামনের দিনগুলোতে তা অব্যাহত থাকবে। ইআরডি সচিব জানান, দেশের অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে ইতোমধ্যে মেগা প্রকল্পসমূহ সহ অন্যান্য প্রকল্পে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ১টি দেশের সাথে পিটিএ স্বাক্ষর করেছে এবং ১০টি দেশের সাথে পিটিএ এবং এফটিএ স্বাক্ষরের জন্য প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং আশা প্রকাশ করেন, অতি দ্রুতই ২টি দেশের সাথে পিটিএ স্বাক্ষর হবে।

ইতো নায়োকি বলেন, আগামী ৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৩০০০ মার্কিন ডলারের পৌঁছাবে, যার ফলে আভ্যন্তরীন বাজারে চাহিদা বাড়বে এবং বাণিজ্য ও সেবার খাতের সম্প্রসারণের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, বিনিয়োগের জন্য অবকাঠামো খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই বাংলাদেশের চলমান অবকাঠামো প্রকল্পসমূহের কাজ যথাযথ সময়ের মধ্যে সম্পন্নকরণ এবং বিশেষকরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে সকল ধরনের সেবা প্রপ্তির বিষয়টি নিশ্চিতকরণের উপর জোরারোপ করেন।

তিনি উল্লেখ করেন, করোনা মহামারী সত্বেও গত অর্থবছরে জাপানে বাংলাদেশের রফতানি ১০ শতাংশ বেড়েছে এবং আশা প্রকাশ করেন সামনের দিনগুলোতে তা আরো বৃদ্ধি পাবে। রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নয়নে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স, পণ্য আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ার সহজীকরণ, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের উপর জোরারোপ করা আবশ্যক। তিনি জানান, নীতিমালা সংষ্কার ও সহজীকরণের মাধ্যমে বর্হিবিশে^ বাংলাদেশের ইমেজ বৃদ্ধি পাবে, যার মাধ্যমে বৈদেশিক বিনিয়োগও বৃদ্ধি পাবে। রাষ্ট্রদূত বলেন, ঢাকার অদূরে আড়াইহাজারে স্থাপিত ‘জাপান ইকোনোমিক জোন’-এ ১০০টি কোম্পানীর শিল্প-কারখানা স্থাপনের সুযোগ রয়েছে এবং আশা প্রকাশ করে এ শিল্প অঞ্চলটি পুরোপুরি চালু হলে বাংলাদেশ আরো বেশি হারে বিনিয়োগ আকর্ষন করতে পারবে, সেই সাথে বর্হিবিশে^ দেশের ইমেজ বৃদ্ধি পাবে।

ওয়েবিনারে নির্ধারিত আলোচনায় পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ, এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআই’র প্রাক্তন সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমেদ, এমসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবির এবং ইউএনএ্যাসক্যাপ-এর ডেপুটি হেড ও সিনিয়র ইকোনোমিক অফিসার ড. রজন সুরেশ রতœা প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।

ইউএনএ্যাসক্যাপ’র ডেপুটি হেড ও সিনিয়র ইকোনোমিক অফিসার ড. রজন সুরেশ রতœা বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটি পণ্য ও এক অঞ্চলের উপর বেশি মাত্রায় নির্ভরতা এলডিসি উত্তোরণের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশেকে চ্যালেঞ্জ-এর মুখোমুখি ফেলতে পারে, তাই রফতানি পণ্য ও বাজার সম্প্রসারণ অতীব আবশ্যক। তিনি বলেন, ইউরোপের বাজারে পণ্য রফতানিতে প্রচুর খরচ বহন করতে হয়, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ এশিয়া-অঞ্চলের দেশসমূহে আরো বেশি হারে পণ্য রফতানির উপর নজর দেয়া আবশ্যক। আঞলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে তিনি অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন, ক্রস বর্ডার যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং তথ্য-প্রযুক্তি খাতের সম্প্রসারণ ও ব্যবহার বৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয়সমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মত প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় প্রয়োজনীয় অনুমোদন পত্র প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা ও জটিলতা নিরসনের উপর তিনি জোরারোপ করেন।

এমসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, বৃহৎ জনগোষ্ঠীই আমাদের প্রধান শক্তি, যা কাজে লাগতে সর্বাতœক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে সরকারের ধারাবাহিকতা ও নীতি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি সাধিত হয়েছে। বাংলাদেশে বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সূত্রিতা, জটিল কর ও শুল্ক কাঠামো, ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ব্যবসায় ব্যয় বাড়ছে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে এফটিএ এবং পিটিএ স্বাক্ষরের সরকারের আরো উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান এমসিসিআই সভাপতি, সেই সাথে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং স্বাস্থ্যসেবা উন্নতকরণের উপর জোরারোপ করেন।

এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলো হতে বিনিয়োগ আকর্ষনে আরো মনোযোগী হতে হবে, সেই সাথে বাংলাদেশী কোম্পানীগুলোকে বিদেশে বিনিয়োগ করার সুযোগ দিতে হবে। তিনি যথাসময়ে নীতিমালার বাস্তবায়ন ও নীতিমালার সহজীকরণ, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে এনবিআর পক্ষ হতে সহযোগিতা প্রদান, ঢাকা বিমানবন্দরে পণ্য আদান-প্রদানে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও দ্রুতকরণ এবং বিমান বাংলাদেশের সেবার আধুনিকায়নের উপর জোরারোপ করেন।

এফবিসিসিআই’র প্রাক্তন সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমেদ বলেন, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাণিজ্যের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে, তবে তা কাজে লাগাতে পার্টনারশীপ ও গ্লোবাল ভ্যালু চেইনে উন্নয়ন দরকার, যার মাধ্যমে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে ও পণ্য উৎপাদনে আমাদের সক্ষমতা বাড়বে।

পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ বলেন, সারা পৃথিবীর ৬০ শতাংশ জনগোষ্ঠী এ অঞ্চলে বসবাস করে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে বিশে^র মোট জিডিপি’র ৫০% আসবে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল হতে, এমতাবস্থায় এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের বৃহৎ ও সম্ভাবনাময় বাজার ধরতে আমাদের সরকার ও উদ্যোক্তাদের আরো কৌশলী হতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ