পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশ প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের মধ্যে ব্যবসায়িক যোগোযোগের সেতুবন্ধন হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেসব ব্যবসায়ী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আসবেন তারা এখান থেকে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বাজার ধরারও একটা সুযোগ পাবেন। সরকার সেভাবেই দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছে। সরকার সড়ক পথ, নৌ পথ, রেল পথ এবং আকাশ পথ-সবগুলো যাতে উন্নত হয় সেই ব্যবস্থা নিচ্ছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের মধ্যে ব্যবসায়িক যোগোযোগের একটি সেতুবন্ধন হিসেবেই গড়ে উঠবে।
শেখ হাসিনা গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সপ্তাহব্যাপী ‘বাংলাদেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২১’ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এই আন্তর্জাতিক ভার্চুয়াল সম্মেলন আয়োজন করেছে। সপ্তাহব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশে^র ৩৮টি দেশের ৫৫২টি উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (বিআইসিসি) হল অব ফেমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রহমান।
প্রধানমন্ত্রী উদ্যেক্তা এবং অংশগ্রহণকারিদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ৭ দিনব্যাপী এই সম্মেলন আমাদের দেশের জন্য সম্ভাবনাময় ৯ টি খাত যেমন- অবকাঠামো, তথ্য-প্রযুক্তি ও ফিনটেক, চামড়া, ঔষধ, স্বয়ংক্রিয় ও ক্ষুদ্র প্রকৌশল, কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাট-বস্ত্র শিল্পসহ অতি চাহিদা সম্পন্ন ভোগ্যপণ্য উৎপাদন এবং ক্ষুদ্রব্যবসাকে অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করেছে যা সময়োপযোগী।
তিনি বলেন, এর সাথে সাথে আমি এও বলবো নতুন নতুন আর কী কী পণ্য আমরা উৎপাদন করতে পারি এবং রপ্তানি করতে পারি সেটাও গবেষণা করে বের করতে হবে। কোন কোন দেশে কী কী পণ্যের চাহিদা রয়েছে সেটা অনুধাবন করে সেই পণ্য আমরা বাংলাদেশে উৎপাদন করতে পারি কি-না সেটাও আমাদেরকে বিবেচনা করতে হবে। সরকার প্রধান বলেন, কাজেই আমাদের যারা ব্যবসায়ী বন্ধু রয়েছেন বিশেষ করে বেসরকারি খাতে-তাদের প্রতি আমি অনুরোধ জানাবো আপনারা এই বিষয়টার দিকে বিশেষভাবে নজর দিবেন। কারণ, আমাদের রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিশ্বাস করি এই সম্মেলনের মাধ্যমে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য দেশি-বিদেশি শিল্প উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীগণ বাংলাদেশের ব্যবসায়ী খাতের সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। ফলে, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশী পণ্যের নব নব দ্বার উন্মোচিত হবে। রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশ কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ আকর্ষণে সক্ষম হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগ সংক্রান্ত সকল সেবা সমন্বিত করে একই প্ল্যাটফর্ম হতে প্রদানের জন্য ২০১৯ সাল হতে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ (ওএসএস) পোর্টাল ব্যবস্থার প্রচলন করা হয়। সেই থেকে বিভিন্ন সংস্থার বিনিয়োগ সংক্রান্ত সেবাসমূহ উক্ত পোর্টালে পর্যায়ক্রমে যুক্ত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বাণিজ্যিক কূটনীতি জোরদার করার জন্য আমাদের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলোতে ২৩টি বাণিজ্যিক উইং খুলেছে। দ্বি-পাক্ষিক (বিপিটিএ) ও আঞ্চলিক অগ্রধিকার বাণিজ্য চুক্তি (আরপিটিএ), মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সিইপিএ) সম্পাদনের লক্ষ্যে ২৩টি দেশের সঙ্গে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভুটানের সঙ্গে পিটিএ স্বাক্ষর করা হয়েছে।
বাংলাদেশ বিশে^র ৩৮টি দেশে একতরফা শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পাচ্ছে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্যিক জোটের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি- যেমন আঙ্কটাড, ইউএন-এস্কাপ, ইউরোপিও কমিশন, ডি-৮, বিমসটেক, আফটা ইত্যাদি।
শেখ হাসিনা বলেন, গত প্রায় তের বছরে তাঁর সরকার দেশের প্রতিটি খাতে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ‘রোল মডেল’।
তিনি বলেন, সাড়ে ৪ কোটির বেশী মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় এনেছি। ‘প্রযুক্তি বিভেদমুক্ত’ বাংলাদেশ গড়ায় অনন্য অগ্রগতি অর্জন করেছি। আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ১২ কোটি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহাকাশে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উৎক্ষেপণ করেছি এবং দ্বিতীয় স্যাটেলাইট ও তৈরি শুরু হয়ে গেছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সমাপ্তির পথে। ঢাকায় মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে এবং বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল এবং পায়রায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ কাজেও আমরা বহুদূর অগ্রসর হয়েছি। সরকার এই ছোট্ট ভূখন্ডের বৃহৎ জনসংখ্যার দেশটাতে যোগাযোগ ও কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০ থেকে ২০২০ সফলভাবে বাস্তবায়নের পর রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এসডিজি-২০৩০ এর সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা ২০ বছর মেয়াদী দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আমরাই বিশ্বে প্রথম শত বছরের ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু করেছি। ফলে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার। মানুষের গড় আয়ু হয়েছে ৭৩ বছর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।