Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাস টার্মিনালে ধূমপান নিয়ন্ত্রণে অভিযোগ বাক্স স্থাপন ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৪১ পিএম

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর বিশ্বে ৬ কোটি মানুষ ধূমপানজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করে যার মধ্যে ৬ লক্ষ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ২০১৭ সালে প্রকাশিত গেটস’র প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধ হওয়ার পরও প্রতিবছর গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় প্রায় আড়াই কোটি মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন।

পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে জনস্বাস্থ্য রক্ষা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ-২০৪০’ বাস্তবায়নে বর্তমান আইন অনুযায়ী সকল পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ধূমপানমুক্ত সাইনেজ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক এবং জনসমাগমস্থলে ধুমপান করা নিষিদ্ধ। এ আদেশ অমান্য করলে আইন অনুযায়ী জরিমানার বিধানও রয়েছে।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রয়োগের বিষয়ে ডাস্ পরিচালিত ২০২০ সালের জরিপ অনুযায়ি ৩৮৬ জন মানুষের মধ্যে ৫২% মানুষ গণপরিবহণে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়েছে। পাবলিক পরিবহণে ধূমপানের কারণে শাস্তির বিধান থাকলেও ৮৪% যাত্রীকে কখনও মোবাইল কোর্টের সম্মুখীন হতে দেখা যায়নি।

উল্লেখ্য যে, তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক আর্ন্তজাতিক চুক্তি Framework Convention on Tobacco Control (FCTC) তে বিশ্বের স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম। বাংলাদেশ তাৎক্ষনিকভাবে চুক্তিটি অনুস্বাক্ষর করার পর ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করে এবং ২০১৩ সালে তা সংশোধিত আকারে প্রকাশ করে। এরপর থেকেই সারাদেশ জুড়ে আইনটি বাস্তবায়নে বেসরকারি সংস্থাগুলো বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তা'সত্বেও বাংলাদেশে প্রতিবছর তামাক সেবন জনিত কারণে ১৬১,২৫৩ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করছে (Bangladesh (2009) Tobacco factsheet 2018 R4- (WHO)। অথচ সরকারিভাবে এ বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি বললেই চলে। তাই বলা যায়, আমাদের হাতে আইন আছে কিন্তু বাস্তবায়ন নাই।

বিআরটিএ এবং বাংলাদেশ যাত্রী কল্যান সমিতির মতে ঢাকা থেকে সারাদেশে প্রায় ৩০,০০০ আন্তঃজেলা বাস চলাচল করে যার মাধ্যমে প্রতিদিন প্রচুর যাত্রী বাস টার্মিনালগুলো দিয়ে যাতায়াত করছে। রাজধানী ঢাকায় ১৬৮টি রুটে ৪৫০০টি পাবলিক বাস চলাচল করে যার মাধ্যমে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ যাত্রী রাজধানীর একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যাওয়া আসা করে। ফলস্বরূপ ধূমপায়ীদের দ্বারা প্রতিনিয়ত অসংখ্য অধূমপায়ী ব্যক্তি পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাবের শিকার হচ্ছে। এঅঞঝ সার্ভে-২০১৮ অনুযায়ী প্রায় ৪৪% (২৫ মিলিয়ন) প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি পাবলিক পরিবহনে ভ্রমনকালে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন।

ডাস কর্তৃক পরিচালিত জরিপে দেখা যায় যে, গণপরিবহনের ড্রাইভার ৬৬%, কন্ডাকটর/হেল্পার ৩২.৪% এবং যাত্রী ১.৬% এবং পরিবহন শ্রমিক কর্মচারীদের ৬৬.১% তাদের কর্মস্থলে ধূমপান করে থাকে। প্রায় ৫২% মানুষ কখনও কখনও গণপরিহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়েছেন। অথচ ৬১% উত্তরদাতা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ব্যাপারে জানেন তবে, পাবলিক প্লেসে ধূমপানকারীর বিরুদ্ধে কোথায় এবং কিভাবে অভিযোগ জানাতে হবে সেগুলো তারা জানেন না। তাই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগে জানানোর জন্য গাড়িতে ও টার্মিনালগুলোতে অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা একান্তভাবে জরুরী। এতদসত্বেও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের কোনো প্রকার নজর নেই।

গণপরিবহণসহ পাবলিক প্লেসে ধূমপান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হলে জনসচেতনতার পাশাপাশি আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় এসব জায়গায় পাবলিক নির্দ্বিধায় ধুমপান করে যাচ্ছে। কোনো সাধারণ পাবলিক এ বিষয়ে কোনোরূপ মৌখিক প্রতিবাদ করলে বাস কর্তৃপক্ষ দ্বারা তাদেরকে মারধরসহ নানারকম হয়রানী ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তাই পাবলিক প্লেসে বা পরিবহনে যারা পরোক্ষ ধূমপানের স্বীকার হচ্ছেন তাদের প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে বাসে এবং টার্মিনালগুলোতে অভিযোগ বাক্স স্থাপন এবং মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা একান্তভাবে প্রয়োজন। এই বাক্সের মাধ্যমে অধূমপায়ীরা তাদের প্রতিবাদের কথাগুলি লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট মহল বরাবর জানাতে পারবেন। মনিটরিং এর দায়িত্বে যারা থাকবেন তাদের কাজ হবে নিয়মিতভাবে অভিযোগ বাক্সগুলো মনিটরিং করা এবং অভিযোগ প্রাপ্তি সাপেক্ষে অভিযুক্ত ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরকে অভিযোগগুলো জানানো।

উল্লেখ্য যে, বাস টার্মিনালে বা পাবলিক প্লেসে ধূমপানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রদানের জন্য কোথাও কোন অভিযোগ বাক্সের ব্যবস্থা নেই। তাই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না পাওয়ার কারণে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে শাস্তি দেয়াও সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে দিনদিন বেড়েই চলছে এসব অপরাধ।
অতএব, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য সরকারসহ সকল সংশ্লিষ্ট মহল এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনগুলো যারা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে নানামূখী ভূমিকা রেখে চলেছে তাদের প্রতিও অনুরোধ করছি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ