পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কুমিল্লার ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। যে ধর্মের হোক না কেন বিচার করা হবে। কুমিল্লার ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কুমিল্লার ঘটনায় ব্যাপক তদন্ত চলছে। এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটাবে, তাদের আমরা খুঁজে বের করবো। যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ঘটনায় জড়িত যেই হোক না কেন, যে ধর্মের হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে। এমন শাস্তি দেওয়া হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে সাহস না পায়। গতকাল শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের কেন্দ্রীয় পূজামন্ডপে ভক্তদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
মহানগর সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ মহারাজ, মহানগর সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মন্ডল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুমিল্লায় যে ঘটনা ঘটছে তার তদন্ত হচ্ছে। ব্যাপকভাবেই তদন্ত হচ্ছে। অনেক তথ্যই আমরা পাচ্ছি এবং অবশ্যই এই ধরনের ঘটনা যারা ঘটাবে, তাদের আমরা খুঁজে বের করবো। এটা আমরা করতে পারবো। প্রযুক্তির যুগে এটা বের করা যাবে। সেই যেই হোক না কেন, যে ধর্মের হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে। আমরা তা করেছি এবং করবো। কিছু মানুষের মধ্যে এই দুষ্ট বুদ্ধিটা আছে। যখন একটা জিনিস সুন্দরভাবে চলছে সেটাকে নষ্ট করা। বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের পথে দ্রæত এগিয়ে যাচ্ছে, এই যাত্রাটাকে ব্যাহত করা আর দেশের ভেতরে একটা সমস্যা সৃষ্টি করা, এ ধরনের কিছু লোক আছে। যারা জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে না, বিশ্বাস অর্জন করতে পারে না। যাদের রাজনীতি নেই, কোনও আদর্শ নেই, তারাই এ ধরনের কাজ করে। এটা অনেকটাই তাদের এক ধরনের দুর্বলতা। কিন্তু এর বিরুদ্ধে যদি সবাই সচেতন থাকেন, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, হিন্দু ধর্ম কল্যাণ ট্রাস্ট আইন আমরা করে দিয়েছি। এর তহবিলে ১০০ কোটি টাকা আমরা দিয়েছি। আপনাদের অনেকে অর্থ ও সম্পদশালী আছেন। তারা পূজামন্ডপ করতে গিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করেন। এত টাকা খরচ না করে আপনারা কল্যাণ ট্রাস্টে অনুদান দিতে পারেন। তাহলে ট্রাস্টের ফান্ড বেড়ে যাবে। এতে যার যা প্রয়োজন সেই সহযোগিতা দেওয়া সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালে ঢাকেশ্বরী মন্দির ধ্বংস করা হয়েছিল। আমরা ওই মন্দিরটি পরে তৈরি করে দেই। এই মন্দিরের উন্নয়ন কাজ এখনও চলমান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে এ বছর পূজায় তিন কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেখা যায় দুর্গাপূজার সময় সর্বজনীন পূজামন্ডপ হয়, আবার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক পূজামন্ডপ হয়। বছর বছর এই পূজামন্ডপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনারাই বলেছেন, ৩২ হাজার ১১৮টি মন্ডপে এবার দুর্গাপূজা হচ্ছে। এটা খুবই ভালো কথা। কিন্তু একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতিটি জায়গায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হয়। এক্ষেত্রে সর্বজনীন পূজামন্ডপগুলোতে কোনও অসুবিধা হয় না। কিন্তু অস্থায়ী মন্দিরগুলোতে পূজা হলে কিছু লোক সুযোগ পায় সেখানে সমস্যা সৃষ্টি করার। কাজেই এ ক্ষেত্রে আপনাদের পক্ষ থেকে কিছুটা বোধহয় নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। আর এই ব্যবস্থা কিন্তু ভারতে আছে। কলকাতায় আছে। সেখানে সরকারের অনুমোদন ছাড়া নতুন করে পূজামন্ডপ করতে পারে না।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে স্বাধীনতা আছে। আপনারা করতে পারেন। কাজেই বলবো এ ব্যাপারে আপনারাই পদক্ষেপ নেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে একটি নীতিমালা বা নির্দেশনা থাকা দরকার, কতটা পূজামন্ডপ হবে। এটা সীমিত হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে সুবিধা হয়। গতবার করোনার কারণে পূজা সীমিত হয়েছিল। এবার একটু উৎসাহ পেয়ে বেশি বেড়ে গেছে। এবার এক হাজার ৯০৫টি অতিরিক্ত পূজামন্ডপ তৈরি হয়েছে। পূজামন্ডপের নিরাপত্তা দিতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
পঁচাত্তরের পরে বিএনপি ধর্মের নামে বিভেদ ও দ্ব›দ্ব সৃষ্টি করেছিল অভিযোগ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘সারা বিশ্বে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস বৃদ্ধি পাওয়ায় তার একটি প্রভাব এসে পড়েছে। এ জন্য কেবল আমাদের নিজেদের দেশই নয়, প্রতিবেশী দেশকেও এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। আমি চাই, আমাদের দেশে মানুষ সুন্দরভাবে জীবনযাপন করবে। সব ধর্মের মানুষ তার ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা কখনোই নিজেদের সংখ্যালঘু ভাববেন না। আমরা আপনাদের সংখ্যালঘু নয়, নিজেদের আপনজন হিসেবে মানি। তিনি বলেন, ইসলাম ধর্ম কিন্তু বিভেদের কথা বলে না। ইসলাম ধর্মে সব ধর্মের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। আমাদের নবী করিম (সা.) সেটাই বিশ্বাস করতেন। কিন্তু আমাদের কিছু লোক ধর্মান্ধতায় ভোগে এবং সব সময় তারা একটি সা¤প্রদায়িক তান্ডব সৃষ্টি করতে চায়। এটা শুধু মুসলমানদের মধ্যে তা নয়, সব ধর্মেই কিন্তু এই ধর্মান্ধ শ্রেণি আছে। তারা সময় সময় একটা গোলমাল, একটা কিছু করার চেষ্টা করে। যদি সকলে আমরা এক হয়ে চলি, তাহলে তারা নিশ্চয়ই কোনও ক্ষতি করতে পারবে না।
বাংলাদেশ অসা¤প্রদায়িক চেতনার দেশ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। বাংলাদেশে সব সময় এই বিষয়টি আছে। প্রত্যেকে সব সময় শামিল হয়ে উৎসবে আনন্দ উপভোগ করে। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু কিছু দুষ্টচক্র কিছু ঘটনা ঘটিয়ে মানুষের ভেতরের এই চেতনাটাকে নষ্ট করতে চায়। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
গøাসগো, লন্ডন ও প্যারিস যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী : নভেম্বরে গ্লাসগো, লন্ডন ও প্যারিস সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন কপ-২৬-এ যোগদানের জন্য ১ থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত গøাসগোতে অবস্থান করবেন তিনি। এরপর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের জন্য লন্ডনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে তিনি সরাসরি প্যারিসে যাবেন ইউনেস্কো থেকে ‘বঙ্গবন্ধু ক্রিয়েটিভ পুরস্কার’ প্রদানের জন্য।
গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন এ তথ্য জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী কপ-২৬ শীর্ষ বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য ৩১ অক্টোবর গøাসগোর উদ্দেশে রওনা হবেন। তিনি সেখানে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) প্রেসিডেন্ট হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়া সাইডলাইনে কপ ২৬-সিভিএফের একটি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেখান থেকে তিনি লন্ডনে যাবেন। আমরা চেষ্টা করছি সেখানে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় একটি বৈঠকের জন্য। এ নিয়ে কাজ হচ্ছে। যুক্তরাজ্য দ্বিপক্ষীয় ওই বৈঠকটি গøাসগোতে করতে চাইছে, কিন্তু আমরা চাই এটি লন্ডনে হোক জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা বলেছি, এটি লন্ডনে হলে ভালো হয়।
ইউনেস্কো কর্তৃক প্রদেয় বঙ্গবন্ধু পুরস্কার দেওয়ার জন্য লন্ডন থেকে সরাসরি প্যারিসে যাবেন প্রধানমন্ত্রী বলে জানান আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, আমরা চাই এই পুরস্কার প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে দিক। আগামী ১১ নভেম্বর প্রদেয় ওই পুরস্কারটি কে পাচ্ছেন জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এটি আমরা জানি না। ইউনেস্কোর একটি নিরপেক্ষ কমিটি ঠিক করবে কে পুরস্কার পাবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।