পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সকলকে দুর্যোগের ঝুঁকি বিষয়ে সতর্কতার সাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যতই ঝুঁকি আসুক দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশটা আমাদের, কাজেই যত ঝুঁকি আসুক দেশের উন্নয়ন আমাদেরকে অব্যাহত রাখতে হবে। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে। দারিদ্রের হাত থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে হবে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা জাতির পিতার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ থেকে সেই বিখ্যাত উক্তি ‘আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবানা’র উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলেন, যত দুর্যোগই আসুক বাঙালিকে, বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবেনা-এটাই হচ্ছে আমাদের কথা।
গতকাল শেখ হাসিনা ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি’র (সিপিপি) ৫০ বছর পদার্পন ও আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০২১ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত মুল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানের অপরপ্রান্তে মুক্তিযোদ্ধা মাঠ কক্সবাজার প্রান্তও সংযুক্ত ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সাড়াবিশে^ আজকে দুর্যোগ ঝুঁকি মোকবেলায় একটি আদর্শ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। আমাদের এই সম্মান যাতে বজায় থাকে সেজন্য ভবিষ্যতে সে বিষয়েও সকলকে সচেতন থাকতে হবে এবং এই ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে।
তিনি এ সময় ’৯১ সালের ঘুর্ণিঝড়ের পর আওয়ামী লীগের সংসদে এই নিয়ে কথা তোলার প্রেক্ষিতে সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উক্তি ‘যত মানুষ মরার কথা ছিল তত মানুষ মারা যায় নাই’ উল্লেখ করে বলেন, এই কথা জীবনে যেন আর শুনতে না হয় সেজন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে এবং মানুষকে সচেতন করতে হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে চারটি ইউনিটেরও উদ্বোধন করেন। এগুলো হচ্ছে- দ্রুত সাড়াদান ইউনিট, পানি থেকে উদ্ধার ইউনিট, অতি জোয়ার মনিটরিং ও সাড়াদান ইউনিট এবং খেলায় খেলায় দুর্যোগ প্রস্তুতি ইউনিট (স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে জনসচেতনতামূলক)। এছাড়া, ‘দুর্যোগ সহনশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণে শেখ হাসিনা’ শীর্ষক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন তিনি এবং দুর্যোগ প্রশমন বিষয়ক আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচেষ্টা সম্পর্কিত ভিডিও চিত্র ‘দুর্যোগ প্রশমনের ৫০ বছর বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা’ শীর্ষক ভিডিও চিত্র ও অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়।
সিপিপি’র ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ৩ জন সংগঠক এবং ৬ জন স্বেচ্ছাসেবক নারী-পুরুষকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ডা.এনামুর রহমান অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস গণভবন প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
সিপিপি’র স্বেচ্ছাসেবকদের দলে নারী স্বেচ্ছাসেবক অন্তর্ভূক্ত করায় এই কর্মসূচি অতীতের থেকে আরো বেশি কার্যকর হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগের ঝুঁকি থেকে যাতে আমরা মুক্ত হতে পারি সেই ব্যবস্থা আমরা সবসময় নেব।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের পাশে আছে। দুর্যোগে আর কেউ না থাকুক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সবসময় পাশে রয়েছে। তিনি এই সময় করেনাকালিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা স্মরণ করে বলেন, অন্য কোন দলকে এভাবে এগিয়ে আসতে আমি দেখি নাই।
জাতির পিতা ১৯৭৩ সালের ১ জুলাই দুর্যোগ ঝুঁঁকিহ্রাসে ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)’ গ্রহণ করেন, যা আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ঘূর্ণিঝড় থেকে জনগণের জানমাল রক্ষায় সেই সময় ১৭২টি উঁচু মাটির কিল্লা তৈরি করেন যা পরবর্তীকালে জনগণ ‘মুজিব কিল্লা’ নামকরণ করেন।
তিনি বলেন, আমরা পূর্বের মুজিব কিল্লাসমূহ সংস্কারসহ নতুন করে আরও ৩৭৮টি মুজিব কিল্লা নির্মাণ করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল গঠন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন প্রণয়ন করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভ্যন্তরীণ বাস্তুহারা মানুষের দুর্দশার বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সরকার ২০১৫ সালে একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করে এবং জাতীয় রিজিলিয়েন্স পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যা সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক ও এসডিজি’র সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এই ব-দ্বীপ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ৮০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ সরকার শুরু করেছি। তিনি বলেন, আমরা ২০২২ সালের মধ্যে ৫১০ কিলোমিটার নদী ড্রেজিংয়ের পরিকল্পনা নিয়েছি এবং গ্রীষ্মকালে সেচের পানি সংরক্ষণের জন্য জলাধার নির্মাণ, ৪ হাজার ৮৮৩ কিলোমিটার খাল খনন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ, সংস্কারসহ নানাবিধ প্রকল্প গ্রহণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ ঝুঁঁকিহ্রাসে আমাদের সময়ে সারাদেশে ২৩০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ও ৩২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ২২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও ৪২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। ৬৪ জেলায় ৬৬টি জেলা ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্র স্থাপন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বন্যায় অসহায় মানুষ ও গৃহপালিত পশুপাখি নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তরের জন্য নৌবাহিনীর সহায়তায় ৬০টি মাল্টিপারপাস রেসকিউ বোট তৈরি ও হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলমান আছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় না আসলে এসব আর কেউ করতো বলে মনে হয়না। কারণ অন্যদের মানুষের সম্পর্কে কোন দায়বদ্ধতা নেই। আর আওয়ামী লীগের রাজনীতিই হচ্ছে মানুষের জন্য।
রাশিয়ার বিনিয়োগকে স্বাগত জানাবে বাংলাদেশ:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়ার সাথে সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, বাংলাদেশ পাট শিল্পে রুশ বিনিয়োগকে স্বাগত জানাবে। গতকাল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বাংলাদেশে নবনিযুক্ত রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভিকেন্তিয়েভিচ ম্যান্টিটস্কি সাক্ষাত করতে এলে তিনি এ কথা বলেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা জানান।
তিনি আরো জানান, উভয়ে বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তৃত করার ওপর গুরুত্বরোপের পাশাপাশি কৃষিখাতের সুযোগসমূহ অন্বেষণে সম্মত হন। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন খাতে বিশেষ করে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সহযোগিতার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধকালে যে দেশ আমাদের দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছে তারা আমাদের হৃদয়ের বিশেষ জায়গায় রয়েছে। শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, অনেক ছাত্রই রাশিয়ায় পড়াশুনা করেছিল, বিশেষ করে চিকিৎসা বিজ্ঞানে।
তিনি আরো বলেন, রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভøালাদিমির পুতিন বাংলাদেশ সফরে এলে আমরা খুশি হবে। রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভিকেন্তিয়েভিচ ম্যান্টিটস্কি বলেন, তিনি ২০ বছর আগে ঢাকা এসেছিলেন। কিন্তু দেশের বর্তমান অগ্রগতি ও উন্নয়ন ‘ব্যাপক ও উল্লেখযোগ্য’। দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য ব্যাপকভাবে বেড়েছে। রুশ দূত রুপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পর বাংলাদেশে দ্বিতীয় পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে তার দেশের আগ্রহ ব্যক্ত করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।