Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

আটকে গেল কক্সবাজারে প্রশাসন অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা

বনভ‚মির সাতশ’ একর জমি বরাদ্দ হাইকোর্টে স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণ করতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন ঝিলংজা বনভ‚মির ৭শ’ একর জমি বরাদ্দের প্রক্রিয়া স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বন বিভাগ ও সংসদীয় কমিটির আপত্তি উপেক্ষা করে অকৃষি খাসজমি দেখিয়ে বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে এই বনভ‚মিতে প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপনের জন্য বরাদ্দ দেয়া কেন বেআইনি ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে রুল জারি করেছেন আদালত। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিঞা এবং বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার ভার্চুয়াল ডিভিশন বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। গত সোমবার দেয়া এ রুলের বিষয়টি গতকাল মঙ্গলবার নিশ্চিত করেন রিটের পক্ষের কৌঁসুলি শেখ একেএম মনিরুজ্জামান কবীর। সরকারপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার শুনানিতে অংশ নেন।

‘৭০০ একর বনভ‚মি প্রশাসন একাডেমির জন্য বরাদ্দ’ শীর্ষক প্রতিবেদন যুক্ত করে আদালতের দৃষ্টিতে আনেন ওই আইনজীবী। গত ৩ অক্টোবর তিনি রিট ফাইল করেন। শুনানি শেষে হাইকোর্ট সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের লক্ষ্যে কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভের পাশে রক্ষিত বনভ‚মির ৭শ’ একর জায়গা বরাদ্দের আদেশ স্থগিত করেন। একইসঙ্গে ওই বরাদ্দের আদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে রুল জারি করেন।
অ্যাডভোকেট শেখ একেএম মনিরুজ্জামান কবীর বলেন, যার জমি সে দিচ্ছেন না আরেকজন এসে দিচ্ছে, এই অবস্থায় দেখুন কী করা যায়। আর ২১০০ বিঘা জমি কেন নষ্ট হবে। বন ও প্রাণি দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বন সংরক্ষণ আইনে তো পরিষ্কার বলা আছে বন মন্ত্রণালয়ের যত সম্পত্তি আছে বনের ভেতরে থাকবে। এখানে বন্যপ্রাণি থাকবে। তাদের চলাচলের পথ পরিষ্কার থাকবে। তাদের অবাধ বিচরণে কোনোরকম বাধা দেয়া যাবে না। এটা তো আইনে বলা আছে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন ঝিলংজা বনভ‚মির ওই এলাকা প্রতিবেশগতভাবে সঙ্কটাপন্ন। বন বিভাগ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির আপত্তি উপেক্ষা করে গত ৫ সেপ্টেম্বর ভ‚মি মন্ত্রণালয় এই জমি বরাদ্দ দিয়েছে। তবে বন বিভাগের দাবি, এই জমি তাদের।

১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ সরকার একে রক্ষিত বন ঘোষণা করে। বন বিভাগ এত বছর ধরে এটি রক্ষণাবেক্ষণ করছে। বিপন্ন এশীয় বন্য হাতিসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্য প্রাণির নিরাপদ বসতি এই ঝিলংজা বনভ‚মি। বন আইন অনুযায়ী, পাহাড় ও ছড়াসমৃদ্ধ এই বনভ‚মি ইজারা দেয়া বা না দেয়ার এখতিয়ার কেবলমাত্র বন বিভাগের।
কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই জমি বরাদ্দ নিয়েছে ভ‚মি মন্ত্রণালয় থেকে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, প্রতিবেশগতভাবে সঙ্কটাপন্ন এ বনভ‚মিতে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা নিষেধ। এ কারণে বন বিভাগ থেকে ‘এই ভ‚মি বন্দোবস্তযোগ্য নয়’ উল্লেখ করে বিভিন্ন দফতরে চিঠি দেয়া হয়।
ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দপত্রে দেশের অন্যতম জীববৈচিত্র সমৃদ্ধ বনভ‚মিকে অকৃষি খাসজমি হিসেবে দেখানো হয়েছে। ভ‚মি মন্ত্রণালয় বলেছে, বরাদ্দ দেয়া জমির ৪০০ একর পাহাড় ও ৩০০ একর ছড়া বা ঝরনা। তারা জমির মূল্য ধরেছে ৪ হাজার ৮০৩ কোটি ৬৪ লাখ ২৩ হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু একাডেমির জন্য প্রতীকী মূল্য ধরা হয়েছে মাত্র ১ লাখ টাকা। ভ‚মি মন্ত্রণালয় এলাকাটিকে অকৃষি খাসজমি দেখালে বন বিভাগ বন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দিয়ে আপত্তি তোলে। ২০০১ সালে দেশের বনভ‚মির যে তালিকা করা হয়, তাতেও ঝিলংজা মৌজা বনভ‚মি হিসেবে আছে। সরকারের এই বিভাগ বিসিএস বন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ