পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীতে অ্যাপসভিত্তিক মোটরসাইকেল চালকরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই চালিয়ে যাচ্ছে যাত্রী পরিবহন। নিয়ম অনুযায়ী তাদের নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমেই যাত্রী ওঠা-নামা করার কথা। যেখানে সংরক্ষিত থাকবে চালক ও যাত্রী উভয়ের তথ্য। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ নিয়ম মানছেন না চালকরা। আর ঝুঁকি নিয়ে হলেও দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য চুক্তিভিত্তিক ভাড়ায় যেতে রাজি হচ্ছেন যাত্রীরা। এতে যেমন ঘটছে দুর্ঘটনা তেমনি বাড়ছে নানা অপরাধ। এছাড়াও দিন দিন নগরবাসীর মধ্যে বাড়ছে আতঙ্ক। এছাড়া অ্যাপ ছাড়া চলাচলকারীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়াও আদায় করছেন চালকরা। এতে চালকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন যাত্রীরা। এমনকি ট্রাফিক আইন অমান্য করা, দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো, বারবার লেন পরিবর্তন করা, পথচারীকে সম্মান না করা, প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব- এমন নানা অভিযোগ রয়েছে চালকদের বিরুদ্ধে।
তবে চালাকদের অভিযোগ, গাড়ি, জ্বালানি ও শ্রমের বিনিময়ে যে টাকা পাওয়া যায়, তা থেকে কোম্পানিগুলো ২৫ শতাংশেরও বেশি কমিশন কেটে নিচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকরা পেমেন্ট করায় ভাড়া হিসেবে কত থাকছে কিংবা কত শতাংশ কোম্পানি কেটে নিচ্ছে তা তারা জানেন না। তাছাড়া বিনা অজুহাতে অ্যাপ বন্ধ করে দেওয়ায় অনেক রাইডার বেকার হয়ে পড়ছে। এছাড়াও রাস্তায় বের হলেই তাদের পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হয়, অনেক ক্ষেত্রে তাদের যে মামলা দেওয়া হয় সেটা সপ্তাহখানেকেও কাটিয়ে উঠতে পারেন না রাইডাররা। এসব হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে তারা ছয়টি দাবি উপস্থাপর করেছেন। এগুলো হলো- পুলিশি হয়রানি, অ্যাপসনির্ভর শ্রমিকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি, কর্ম-সময়ের মূল্য দেওয়া, সব ধরনের রাইডে কমিশন ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা, মিথ্যা অজুহাতে কর্মহীন করা বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি পার্কিংয়ের জায়গা নির্ধারণ, তালিকাভুক্ত রাইড শেয়ারকারী যানবাহনকে গণপরিবহনের আওতায় নিয়ে আগাম কর কেটে রাখা বন্ধ করতে হবে। ওইসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনের আয়োজন করে ঢাকা রাইড শেয়ারিং ড্রাইভারস ইউনিয়ন।
এর আগে গত সোমবার রাজধানীর বাড্ডায় শওকত আলী নামের এক রাইডার তার মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন। তার আগে ট্রাফিক সার্জেন্ট এসে শওকতের কাগজপত্র নিয়ে যান। মামলা না দেওয়ার জন্য শওকত পুলিশের কাছে অনুরোধ করেন। তিনি গাড়ির কাগজপত্র ফেরত চান। কিন্তু কাগজপত্র ফেরত না পেয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে নিজের মোটরসাইকেলে আগুন দেন শওকত। এ ঘটনার প্রতিবাদে পুলিশি হয়রানি বন্ধসহ ছয় দফা দাবিতে গত সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেয় অ্যাপভিত্তিক ড্রাইভারস ইউনিয়ন অব বাংলাদেশ। কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন রাইড শেয়ারের চালকরা। মানববন্ধন থেকে ছয় দফা দাবি জানান ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বেলাল আহমেদ।
মানববন্ধনে বলা হয়, রাইড শেয়ারের চালকের বাইক পুড়িয়ে ফেলা তারা সমর্থন করেন না। কিন্তু কোনো বাইকার কোন পরিস্থিতিতে এমন কাজ করতে বাধ্য হলেন, তা সরকারকে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানানো হয়। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বাইকাররা বলেন, তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। উবারসহ বিভিন্ন কোম্পানি তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। তারা বেশিরভাগ টাকা কেটে নিচ্ছে। ফলে বাইকারদের সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তাই তারা বাধ্য হয়ে ২৪ ঘণ্টার কর্মবিরতির কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
জানা যায়, ২০০৯ সালের মার্চে যাত্রা শুরু হয় উবারের। বর্তমানে বিশ্বের ৬৬৩টি শহরে এই সেবা দিচ্ছে অ্যাপভিত্তিক উবার। সারা বিশ্বে প্রতিদিন গড়ে ৫০ লাখের বেশি মানুষ উবার ব্যবহার করে সেবা নিচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। অ্যাপের নামে চলছে যাত্রী হয়রানি। শুধু তাই নয়, পাঠাও-উবার অ্যাপের কথা বলে যাত্রী পরিবহন করে চুরি, ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে একটি চক্র।
সরেজমিনে ঘুরে কয়েকজন যাত্রীর সাথে কথা বলে জানা যায়, চালকরাই কারণে-অকারণে চুক্তিতে রাইড শেয়ার করতে চান। এতে করে তাদের কাউকে কমিশন দেয়া লাগে না। নির্দিষ্ট অ্যাপ ব্যবহার করলে তাদের আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ দিয়ে দিতে হয় রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা জাবেদ সরকার। গতকাল তিনি ইনকিলাবকে বলেন, সম্প্রতি তিনি বাড্ডা থেকে উবারে করে পুরান ঢাকায় যাচ্ছিলেন। কিন্তু মালিবাগ আসার আগেই চালকের ব্যবহারে আমি বুঝতে পারি তিনি ছিনতাইকারী দলের সদস্য। এক পর্যায়ে মৌচাকে নামতে চাইলে উবার চালক আমাকে নামাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে চিৎকার দিলে আমাকে নামিয়ে দেন। তিনি আরো বলেন, মোটরইকেলে উঠানোর পর ফোনের মাধ্যমে অপর প্রান্তের একজনকে দা, কুড়াল নিয়ে রেডি থাকতে বলেন। মূলত এরপরই আমি ভয়ে মোটরসাইকেল থেকে নেমে যাই।
উবার ইউজার মখলিছুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, সম্প্রতি আরামবাগ মোড় থেকে উবার কল করলাম। দুজনের কাছে রিকোয়েস্ট যাওয়ার পর কেটে দিল। আরেকজনকে কল করলাম, তাকে ম্যাপে দেখাচ্ছিল মতিঝিলে। তবে তিনি বললেন, আমি যাব না। আরেকজনকে ফোন দিলাম, তিনি কাছাকাছি থাকলেও যাবেন না বলে দিলেন। এরপর আরো একজন রাইড গ্রহণ করেন। পরে তিনি রাউড কেটে দিতে বলেন। তার কথা মতো রাইট কেটে বাধ্য হয়েই চুক্তির মাধ্যমে রামপুরায় যাই।
মিলাদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি ইনকিলাবকে বলেন, আমি উবারের সেবা নেই প্রায়ই। একবার বুয়েট থেকে জিগাতলা আসার জন্য উবার নেই। প্রথমে ডিসকাউন্টসহ ভাড়া দেখায় ৮৫ টাকা। কিন্তু ওই ভাড়ায় চালক গন্তব্যে যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে বাধ্য হয়ে ১২০ টাকা দিয়ে জিগাতলা যাই।
তবে চালকরা বরং যাত্রীদের উপরেই দোষ চাপাচ্ছেন। তারাই দ্রুত গন্তব্যে যাওয়ার জন্য তাড়া দেন বলে অভিযোগ করলেন কয়েকজন চালক। মনিরুল নামের একজন উবার চালক ইনকিলাবকে বলেন, অনেক সময় যাত্রীরাই বলে যে আমার অফিস ধরতে হবে একটু তাড়াতাড়ি যান। এটা নিয়ে রিপোর্ট কখনো আসে না যে যাত্রীরা তাড়া দেয়। সবসময় আসে আমাদের রাইডারদের দোষ।
এদিকে, সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক ও দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় শীর্ষে বাংলাদেশ। প্রতি ১০ হাজার মোটরসাইকেলের মধ্যে বাংলাদেশে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে ২৮ দশমিক ৪টি। বাংলাদেশের পর কম্বোডিয়ায় ১১ দশমিক ৯, লাওসে ১১ দশমিক ৫, থাইল্যান্ডে ১১ দশমিক ২, ভারতে ৯, মিয়ানমারে ৮ দশমিক ৬, মালয়েশিয়ায় ৪ দশমিক ৪, ভিয়েতনামে ৪ দশমিক ১, ইন্দোনেশিয়ায় ২ দশমিক ৫ এবং ভুটানে ২ দশমিক ১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, রাজধানীতে কয়েক বছরে মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এই খাতের কোম্পানিগুলোর নিবন্ধনের বাইরে অনেকে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করেন। চালকদের অধিকাংশই প্রশিক্ষিত নন। তারা ঠিকভাবে ট্রাফিক সিগন্যাল না মেনে রাস্তায় মোটরসাইকেল চালান। যাত্রীদের জন্য নিম্নমানের হেলমেট রাখেন। এছাড়া ফাঁক গলে আগে যাওয়ার প্রবণতাও প্রবল। এসব কারণে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটে বলেও তারা মনে করেন। এছাড়া অ্যাপ ছাড়া যাত্রী পরিবহন, বেপরোয়া গতিসহ নানা অনিয়মের কারণেই দুর্ঘটনার পরিমাণ বাড়ছে বলে মনে করছেন তারা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমানে দেশের দুর্ঘটনায় ৪৫ শতাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এছাড়া রাজধানীতে দিন দিন মোটরসাইকেলের সংখ্যা বাড়ছে। এটা একটা নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে মোটরসাইকেল চালালে দুর্ঘটনাও অনেক কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, অ্যাপের মাধ্যমে চলাচল করলে ভাড়ার একটি অংশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দিতে হয়। তাই তারা অ্যাপ ব্যবহার করতে চায় না। তবে অ্যাপ ব্যবহার না করলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। তাই সবাইকে অ্যাস ব্যবহার করে চলাচল করার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
চালকদের হয়রানি বা মামলার ব্যাপারে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, সব সময় যে তাদের মামলা দেয়া হয় তা সঠিক নয়। যদি কেউ অতিরিক্ত আইন ভঙ্গ করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। চালকরা নিয়ম মেনে সেবা দেয়া এবং যাত্রীরা যাতে নিরাপদে সেবা গ্রহণ করে এটাই আমাদের উদ্দেশ্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।