Inqilab Logo

শনিবার, ০১ জুন ২০২৪, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

এতো উন্নয়নের পরও সমালোচনা কেন

জনগণকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবার আহ্বান পাঁচ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হলে আরো বেশি সংখ্যক জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার মাধ্যমে গ্রাম ও শহরের বৈষম্য আরো কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে সরকারের উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখার জন্য অশুভ কোন শক্তি যাতে এদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে দেশকে যেন আবার সেই দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে পিছিয়ে দিতে না পারে সে ব্যাপারেও দেশবাসীকে সতর্ক করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতো উন্নয়ন করছি তারপর সমালোচনা কেন। জনগণকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবার পরামর্শ দিয়ে বিদ্যুৎ খাতে তার সরকারের দেয়া ভর্তুকির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

গতকাল রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭৭৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঁচটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধনকালে তিনি একথা বলেন। গণভবন থেকে তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ভবনে বিদ্যুৎ বিভাগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বিদ্যুৎ গ্রাহক ৪ কোটি ৯ লাখ। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ার ফলে গ্রাম পর্যায়েও তার সরকার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে পারায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর নাগরিক সুবিধা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের মাঝে বৈষম্য কমিয়ে আনাই ছিল সেই স্বপ্ন, এই সুযোগ তার সরকার সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ যারা ব্যবহার করেন তাদেরকে সাশ্রয়ী হতে হবে। কারণ আমরা যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি তার খরচ কিন্তু অনেক বেশি। কিন্তু আমরা গ্রাহকদের সেবা নিশ্চিত করার জন্য সেখানে ব্যাপকহারে ভর্তুকি দিচ্ছি। উৎপাদনের যে খরচ সেটা কিন্তু বিদ্যুৎ বিল হিসেবে আপনাদের দিতে হচ্ছে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক কম টাকা বিল নেয়া হয়। সেক্ষেত্রে সকলকে একটু অনুরোধ করবো বিদ্যুৎ ব্যবহারে আপনারা সচেতন হবেন। যখন লাগবেনা নিজের হাতেই নিজের ঘরে বিদ্যুতের সুইচগুলো বন্ধ করে রাখবেন। তাতে বিলটাও কম আসবে, আপনাকেও টাকা কম দিতে হবে। আর আমাদের বিদ্যুৎও সাশ্রয় হবে। এ বিষয় একটু নজর দিতে আমি সবাইকে অনুরোধ করবো। আগামীতে দেশে বিদ্যুৎ চালিত মেট্রোরেল চালু হবে, পর্যায়ক্রমিকভাবে ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ চালিত যানবাহনের ব্যবস্থা সরকার করবে। বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি উৎপাদন হবে দেশে। রেল খাতকে ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ চালিত খাতে নিয়ে আসাসহ এরকম ভবিষ্যতের বহুপরিকল্পনা তার সরকারের রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, কাজেই বিদ্যুৎ সবসময় আমাদের লাগবে। অতীতের ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে দৈনিক ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট হয়েছে। এখন একেবারে গ্রামের মানুষও টেলিভিশন, ফ্রিজ ব্যবহার করে। এমনকি এসিও ব্যবহার করে। অন্তত সেই সক্ষমতা আস্তে আস্তে বেড়ে উঠছে। সেটা আরো বেড়ে উঠুক সেটাই আমি চাই। গ্রাম এবং শহরের বৈষম্যটা যেন আর না থাকে এবং গ্রামের মানুষ যাতে সবধরণের সুযোগ-সুুবিধা পায়। শেখ হাসিনা বলেন, আমি ঘর থেকে বের হবার সময় যেখানে দেখি অপ্রয়োজনীয় সেখানকার বিদ্যুতের সুইচগুলো নিজের হাতেই অফ করি। গণভবনে বাস করলেও আমার নিজের অংশে বিদ্যুতের সুইচগুলো আমি অফ রেখে অভ্যাসটা ঠিক রাখি। সব সময়তো আর প্রধানমন্ত্রী থাকবো না। কারণ ক্ষমতার মেয়াদকাল মাত্র ৫ বছর। কাজেই যখন ক্ষমতায় থাকবো না তখনতো আবার নিজের মতই চলতে হবে। তাই অভ্যাসটা যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে তিনি লক্ষ্য রাখেন বলেও উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, সবাইকে বলবো মিতব্যয়ী হন যেটা সাশ্রয় হবে সেটা দিয়ে আমরা হয়তো আরেকটা গরিব মানুষকে সহায়তা দিতে পারবো এবং দেশ এগিয়ে যাবে। আর এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের অবকাঠামো ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ১৯৭২-পিও জারির মাধ্যমে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড গঠন করেন। তিনি গ্রামে গ্রামে বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং পল্লী বিদ্যুতের ব্যবস্থাটাও তার হাতেই শুরু। শেখ হাসিনা বলেন, আমি এত উন্নয়ন করার পরেও কিছু কিছু লোকের মুখে কিছু কথা যখন শুনি মনে হয় যেন সেই সব সুরে কথা বলার প্রতিধ্বনিটাই আমি শুনতে পাই। সেই সব শ্রেণীর লোকেরা কিন্তু সমালোচনা করেই যায়। যদিও আমি এর পরোয়া করি না। কারণ দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য আমার কাজ করতে হবে এবং জাতির পিতার যে স্বপ্ন এদেশকে ঘিরে, তা পূরণ করতে হবে। সীমাহীন লোডশেডিং কাটিয়ে উঠে ভেঙ্গে পড়া বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে পুনবিন্যাস করার এবং উন্নত করার প্রয়াস পায় তখনই যখন ৯৬ সালে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় আসে। বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য আইন ও নীতিমালা করলাম এবং ছোট্ট ছোট্ট বিদ্যুৎ কেন্দ্র যাতে নির্মিত হতে পারে সে ব্যবস্থা করলাম। এটাকে বেসরকারি খাতে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করলাম এবং বিদেশি বিনিয়োগের চেষ্টা করলাম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেসরকারিখাতে দেশে প্রথম হরিপুর ৩৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র পাওয়ার সেলে’র মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয় এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করি। শিল্প মালিকদের ডেকে নিজস্ব উদ্যোগে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকে সে সময় তার উৎসাহিত করা। শুধু তাই নয়, বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবার জন্য বিশেষ আইনও আমরা করলাম। যে জন্য তাকে ব্যাপক সমালোচনার পাশাপাশি ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর এক ডজন মামলাও খেতে হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আসলে তারা মানুষকে কিছু দিতে পারে না। মানুষের জীবন নিতে আর কেবল ধ্বংস করতে পারে, এটা হচ্ছে বাস্তবতা। কিন্তু, আমরা বাংলাদেশের মানুষ অনেক কিছুই ভুলে যাই। শেখ হাসিনা বলেন, যে কটা ভাল কাজ করেছেন তার জন্যই তাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মামলা খেতে হয়েছে বা হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। তাই বলে তিনি থেমে থাকেননি। কারণ আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছে দেব, আলো জ¦ালাবো। আমরা প্রায় লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি এবং শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রকাশনা হান্ড্রেড এর মোড়ক উন্মোচন করেন। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।



 

Show all comments
  • Zubair Hossain ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৪৬ এএম says : 11
    মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন শেখ হাসিনা কে দীর্ঘায়ু দান করুন আমীন।
    Total Reply(0) Reply
  • Nazrul Islam ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৪৬ এএম says : 7
    শেখ হাসিনার উন্নয়ন সর্বক্ষেত্রে তাই আল্লাহর কাছে দোয়া করি ওনাকে সুস্হ রাখুক।
    Total Reply(0) Reply
  • Kamrul Hassan ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৪৬ এএম says : 0
    Electricity is now available hundred percent at every corner of Bangladesh by the right decision of our honourable prime minister jana natree sheikh Hasina.
    Total Reply(0) Reply
  • Rupa Khandaker ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৪৬ এএম says : 6
    সফল রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে সোনার বাংলাদেশ।
    Total Reply(0) Reply
  • মেহেদী হাসান রিমন ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৪৭ এএম says : 1
    সকল জায়গায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের স্থান দেয়া হউক এবং বয়স বাড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের নিয়োগ দেয়া হউক, কারন মীরজাফর থেকে খন্দকার মোশতাক এদের রক্ত আজও বিদ্যমান,, সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য মুক্তিযোদ্ধার সসন্তানদের বিকল্প নেই,,,
    Total Reply(0) Reply
  • Anisur Rahman Chowdhury VI ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৪৭ এএম says : 0
    স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে হলে তেলবাজি চামচামি চাপাবাজি দূর্নীতি অনিয়ম দূর করে সোনার মানুষ হতে হবে তার পর হবে সোনার বাংলাদেশ। ধন্যবাদ। আবার বলছি তেলবাজি চামচামি চাপাবাজি দূর্নীতি অনিয়ম দূর করতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Nur Mohammad ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৪৮ এএম says : 1
    অভিনন্দন প্রিয় বাংলাদেশ গরিব দুঃখ মানুষ নেএী জননেত্রী শেখ হাসিনার
    Total Reply(0) Reply
  • M Nizam Foraizi ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৪৮ এএম says : 0
    বাংলাদেশ বিদ্যুৎক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় উন্নতি করেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • J Abdin ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৪৯ এএম says : 0
    গ্রাহক ভোগান্তি কমাতে না পারলে বিদ্যুৎ বিভাগের সকল অর্জনই বৃথা যাবে
    Total Reply(0) Reply
  • Shanto ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৯:৫১ এএম says : 0
    বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে অপরাধ প্রবণ, অভিশপ্ত, দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ। এই দেশে বেশিরভাগ রাজনৈতিক নেতা, সরকারী ব্যক্তি, ব্যবসায়ী সহ বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। এ সকল দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান তাদের লোভ, স্বার্থ, শয়তানি ক্ষমতা,অবৈধ / অসৎ অর্থ / ঘুষ এর জন্য অধিক লোকের যে কোন ধরনের ক্ষতি করতে কোন কৃপণতা করে না। কারণ মিথ্যুক/ চোর/ বাটপার/ ভন্ড / অমানুষ না শুনে ধর্ম / নীতি / মানবতার কাহিনী !
    Total Reply(0) Reply
  • Dadhack ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:২১ পিএম says : 0
    স্বাধীনতার পর থেকে এই 50 বছরে তাদের উন্নতি হয়েছে আমরা সব জানি সব নিজের চোখে দেখেছি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ