পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সম্পূর্ণ ভূমি সেবাকে দেশের জনগণের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসার মাধ্যমে ভোগান্তি লাঘবে সরকার সম্পূর্ণ ভূমি ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। মানুষ যেন ভোগান্তির শিকার না হতে হয়, দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়াতে না হয়। ভূমি সেবা যেন হাতের মুঠোয় পায় সেই ব্যবস্থাই আমরা করতে চেয়েছি।
সরকার প্রধান ভূমি মন্ত্রণালয়ের সেবাদানকারী সকল দপ্তর ও সংস্থাকে একই ছাদের নীচে এনে জনগণকে এক জায়গা থেকে সকল সেবা প্রদানের মাধ্যমে ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’ নিশ্চিত করতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ‘ভূমি ভবন’ উদ্বোধনকালে একথা বলেন।
তিনি গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ভূমি মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠান থেকে ভূমি ভবন ছাড়াও উপজেলা ও ইউনিয়নের ভূমি অফিস, অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ কার্যক্রম এবং ভূমি ডাটা ব্যাংকের উদ্বোধন করেন।
শেখ হাসিনা অনুষ্ঠান থেকে ৯৯৫টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস এবং ১২৯টি উপজেলা ভূমি অফিস উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে শতভাগ মিউট্রেশন সম্পন্ন করার মাধ্যমে ভূমি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কেননা, মানুষ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হন। মানুষ যেন ভোগান্তির শিকার না হতে হয়, দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়াতে না হয়। ভূমি সেবা যেন হাতের মুঠোয় পায় সেই ব্যবস্থাই আমরা করতে চেয়েছি।
তিনি বলেন, হাতের মুঠোয় ভূমি সেবা নিশ্চিত করতে অনলাইনে খতিয়ান সংগ্রহ, উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর, অনলাইন ডাটাবেজসহ ভূমিসেবার সকল ক্ষেত্রে অধিকতর ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ই-মিউটেশন বাস্তবায়নের স্বীকৃতিস্বরূপ ভূমি মন্ত্রণালয় জাতিসংঘের ‘ইউনাইটেড নেশন্স পাবলিক সার্ভিস এ্যাওয়ার্ড-২০২০’ অর্জন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের এ পুরস্কার বাংলাদেশে এই প্রথম। এ স্বীকৃতি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয়কে আরও গতিশীল করেছে এবং বিশ্ব দরবারে আমাদের মর্যাদা অধিকতর সুসংহত হয়েছে। ভূমি সচিব মোস্তাফিজুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন এবং ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম এবং প্রকল্পগুলোর ওপর পৃথক ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত ভূমি সংস্কার বোর্ড, ভূমি আপিল বোর্ড এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর ঢাকা শহরের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় অবস্থিত। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা ছাড়াও ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যালয় ও একটি আধুনিক রেকর্ড রুমের সংস্থান এ ভূমি ভবন কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। উক্ত অফিসগুলো একই ভবনে অবস্থানের ফলে ভূমি সংক্রান্ত সেবাদান ও সেবাগ্রহণ প্রক্রিয়া সহজতর হবে।
ভূমি ভবন কমপ্লেক্সে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, বঙ্গবন্ধু কর্নার ও কর্মজীবী মায়েদের সুবিধার্থে একটি ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় প্রায় ১৮৪ কোটি টাকা। নির্মিত ভবনটি ২টি বেজমেন্টসহ মোট ১৩ তলা বিশিষ্ট মূল ভবনটির নির্মাণ এরিয়া প্রায় ৩২ হাজার ২শ’ বর্গ মিটার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আরো উন্নত করতে চায়। কেননা, অতীতে এক একটা ভূমি অফিসের জীর্ণ দশা ছিল। তিনি বলেন, আমাদের আগে তো অনেকেই ক্ষমতায় এসেছে। কেন এই ব্যাপারে কোন সংস্কার করা হয়নি সেটাই বড় প্রশ্ন।
এ সময় তিনি ২০১৩ এবং এর পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য, আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা এবং ভুমি অফিস পুড়িয়ে রেকর্ড বিনষ্টের তীব্র সমালোচনা করেন। ভূমি অফিস পোড়ানো বন্ধে তার কঠোর হুশিয়ারির পর সেটা বন্ধ হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্মকর্তা সংকটের কারণে জনগণের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা এক সময় দুরূহ ছিল যেটা সরকার দূর করেছে। তিনি বলেন, প্রায় শতভাগ উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদায়ন এবং তাদের যানবাহনের সুবিধা প্রদান করায় বর্তমানে ভূমি প্রশাসনে গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। জনগণকে কাক্সিক্ষত সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ইতোমধ্যে অনলাইনে খতিয়ান সংগ্রহ করার সিস্টেম বাস্তবায়ন করেছে। জমির মালিক ঘরে বসেই খতিয়ান সংগ্রহ করতে পারছে। এ প্রসঙ্গে সারাদেশে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন এবং পোষ্ট অফিসগুলোকে সরকারের ডিজিটাইজড করে দেওয়ার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনাকে উন্নত ও বিশ্বমানের করার লক্ষ্যে ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ করার জন্য ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালনা সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ প্রকল্প এবং মৌজা ও প্লট ভিত্তিক জাতীয় ডিজিটাল ভূমি জোনিং প্রকল্প- আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। এই ৩টি প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী ও আমূল পরিবর্তন সাধিত হবে। আর মানুষও এর সেবা পাবে।
আজ ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়িত ৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি প্রকল্প ভূমিসেবা প্রদান সহজীকরণের মাধ্যমে জনগণের দোড়গোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ প্রক্রিয়া সহজীকরণ অর্থাৎ ঘরে বসেই যাতে জমির মালিক ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের ডিজিটাল পদ্ধতি। এর মাধ্যমে কর পরিশোধে জনগণের ভোগান্তি আর থাকবে না।
সারা বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি হোল্ডিংয়ের মধ্যে প্রায় ১ কোটি হোল্ডিংয়ের ডাটা এন্ট্রির কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং অবশিষ্ট হোল্ডিং এন্ট্রির কাজ চলমান রয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে একজন নাগরিক যে কোন স্থান থেকে যে কোন সময় ভূমি উন্নয়ন কর সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জানতে পারবেন। অনলাইনে তা পরিশোধ করতে পারবেন এবং অনলাইনে দাখিলা পেয়ে যাবেন। এতে তাদের সময়, খরচ বাঁচবে এবং জনগন হয়রানি থেকে রক্ষা পাবেন।
তিনি বলেন, অতীতে ভূমি উন্নয়ন কর সরাসরি জমার বিধান না থাকায় ‘কিছু যেত কিছু যেতনা। এখন আর সেটা হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সায়রাতমহাল অর্থাৎ জল মহাল, বালু মহাল, চা বাগান, লবন মহাল, চিংড়ি মহাল, হাটবাজার; খাসজমি এবং অধিগ্রহণকৃত জমির ডিজিটাল ডাটাবেজ না থাকার কারণে যে কোন তথ্য প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হতো। অনেক সময় আমরা জানতেই পারতাম না যে কি পরিমাণ জমি এ মহালের অন্তর্ভুক্ত। সরকার সকল প্রকার সায়রাতমহল ও অধিগ্রহণকৃত জমির অনলাইন ডাটাবেজ তৈরির কাজ সম্পন্ন করেছে। এর ফলে ভবিষ্যতে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন আরো সহজতর হবে। পাশাপাশি অনলাইন ডাটাবেজ থাকার কারণে অধিগ্রহণকৃত ভূমি ব্যবহারেও আর কোন সমস্যা থাকবে না।
তিনি বলেন, মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন পর্যায়ে ১ হাজার ৪৯৮টি ভূমি অফিস নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৯৯৫টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে একদিকে গ্রামের মানুষের সেবা প্রদানের যথাযথ দাপ্তরিক পরিবেশ তৈরি হবে, অন্য দিকে রেকর্ডসমূহ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।