Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

আগস্টে পণ্য রফতানি বেড়েছে ১৪ শতাংশ

তৈরী পোশাকে প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

করোনার মধ্যেও গত আগস্ট মাসে ৩৩৮ কোটি ডলারের বা ২৮ হাজার ৭৩০ কোটি টাকার পণ্য রফতানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি। গত আগস্টে ২৯৭ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছিল। পণ্য রফতানিতে আগস্টে ভালো করলেও সামগ্রিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই—আগস্ট) রফতানি আয় কিছুটা কমেছে। এই সময়ে ৬৮৬ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ৩১ শতাংশ কম। গত বছরের এই সময়ে রফতানি হয়েছিল ৬৮৮ কোটি ডলারের পণ্য। রফতানি আয়ের এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে হিমায়িত খাদ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, হস্তশিল্প, টেরিটাওয়েল, হোম টেক্সটাইলের রফতানি আয় বেড়েছে। অন্যদিকে তৈরী পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং প্রকৌশল পণ্যের রফতানি কমেছে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১—২২ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই—আগস্ট) মাসে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে ৬৮৫ কোটি ৬৫ লাখ (৬ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। দুই মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৭৪৪ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে রফতানির পরিমাণ ছিল ৬৮৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এ হিসেবেই প্রবৃদ্ধি কমেছে শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ। আর লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এদিকে করোনা নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেধের কারণে জুলাইয়ে ধস নেমেছিল পোশাক রফতানিতে। কিন্তু সেখান থেকে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আগস্টেই ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে রফতানির প্রধান খাতটি। গত বছরের একই মাসের তুলনায় চলতি বছরের আগস্টে তৈরী পোশাক রফতানি ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে। চলতি অর্থবছরের আগস্টের ১—৩০ তারিখ পর্যন্ত মোট ২৭৫ কোটি ডলার মূল্যের পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। গত বছরের আগস্টে যা ছিল ২৪৬ কোটি ডলার।

রফতানির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১—২২ অর্থবছরে প্রথম দুই মাসে ৫৭১ কোটি ২৯ লাখ (৫ দশমিক ৭১ বিলিয়ন) ডলারের তৈরী পোশাক পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ, যা মোট রফতানি আয়ের ৮১ দশমিক ১৬ শতাংশ। গত দুই মাসে তৈরী পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা দুটোই কমেছে। তবে একক মাস হিসেবে গত আগস্টে তৈরী পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। গত দুই মাসে নিট পোশাক রফতানি হয়েছে ৩২৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি কমেছে ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ। ওভেন পোশাক রফতানি হয়েছে ২৩৮ কোটি ১৭ লাখ ডলার। এ খাতে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কমেছে। ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা কমেছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)—এর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, রফতানি কমার একমাত্র কারণ জুলাই মাসে গার্মেন্টস বন্ধ থাকা। অন্য সময় তো নানা কারণে রফতানি কমে, এবার কমেছে শুধুমাত্র গার্মেন্টস বন্ধ থাকার কারণে। বরং আমাদের হাতে এখন প্রচুর অর্ডার আছে। আমরা অনেক অর্ডার পেয়েছি, কিন্তু কাজ করতে পারিনি ওই সময়।

বিজিএমইএ’র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল ইনকিলাবকে বলেন, জুলাই মাসে ঈদুল আজহা পালিত হওয়ার কারণেই আগস্টে এসে রফতানি বেড়েছে। তিনি বলেন, সাধারণত ঈদের মাসে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি কম হয়, তখন ওই মাসে যে চালান জাহাজীকরণ হওয়ার কথা তা পরের মাস পর্যন্ত পিছিয়ে যায়। তাই জুলাইয়ে মাইনাস ১১ দশমিক ০২ শতাংশের যে প্রবৃদ্ধি হয়, আগস্টে এসে তা পূরণ হয়েছে। তবে জুলাই—আগস্টে আরএমজি পণ্যের গড় রফতানি প্রবৃদ্ধি মাইনাস ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, গত দুই মাসে রফতানির আনুষ্ঠানিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আমরা ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ পিছিয়ে আছি। এদিকে ওভেনের ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশের তুলনায় বরাবরের মতোই ভালো করছে নিটওয়্যার খাত। গত মাসে খাতটি ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লাভ করে। অবশ্য নিটওয়্যার খাতে প্রবৃদ্ধির পেছনে মূলত সুতার দর বৃদ্ধি অবদান রাখে বলে জানান রুবেল।

করোনা মহামারির মধ্যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি আয়ের উৎস চামড়া খাতে। বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের প্রধান বাজার ইউরোপের দেশগুলোতে করোনার প্রাদুর্ভাব কমে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে শুরু করায় চাহিদা বেড়ে রফতানিতে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৪—১৫ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে ১১৩ কোটি ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। ২০১৯—২০ অর্থবছরে তা আরো কমে ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলারে নেমে আসে। সদ্য সমাপ্ত ২০২০—২১ অর্থবছরের এই খাত থেকে আয় হয়েছে ৯৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার। নতুন অর্থবছরের প্রথম মাসে চামড়া রফতানি থেকে আয় এসেছে ৯ কোটি ৫ লাখ ডলার। এ সময়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে ২ দশমিক ৪২ শতাংশ।

গত দুই মাসে করোনা মহামারির মধ্যেও বড় প্রবৃদ্ধি করেছে হিমায়িত চিংড়ি রফতানিতে। এ সময়ে হিমায়িত চিংড়ি রফতানি করে বাংলাদেশ ৭ কোটি ৩৭ লাখ ডলার আয় করেছে। রফতানির এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ কম। এ খাতের লক্ষ্য ছিল ৫ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৫ কোটি ৮৯ লাখ ডলার।

বিভিন্ন কৃষি পণ্য রফতানি করে চলতি অর্থবছরের দুই মাসে বাংলাদেশ ২০ কোটি ৭২ লাখ ডলার আয় করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কম অর্জিত হয়েছে। তবে আগের বছরের তুলনায় লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। ধারাবাহিক লোকসানের কারণে গত বছরের শেষ দিকে দেশের সব সরকারি পাটকল বন্ধের উদ্যোগ নেয় সরকার। নতুন অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ধস নেমেছে পাট রফতানিতে। দুই মাসে পাট রফতানিতে আয় এসেছে ১২ কোটি ৭৬ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৯ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। এ হিসাবে এই খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৩৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ৪৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ