Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কক্সবাজার হবে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পর্যটন কেন্দ্র

বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কক্সবাজার হবে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সমুদ্র সৈকত এবং পর্যটন কেন্দ্র। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ সম্ভাবনাময়। তাই বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের একটা কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে চাই। গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে স¤প্রসারণ কাজ উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, সার্বিকভাবে ভৌগোলিক অবস্থানটাকে সামনে রেখে সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের একটা কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে চাই আমাদের দেশটাকে। তাতে আর্থিকভাবেও আমাদের দেশ অনেক বেশি লাভবান হবে। বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশ বিশ্ব যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু হলেও আগামীতে বাংলাদেশ সেই কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে।

কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত এবং পর্যটনের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, অনেক চিন্তা ও পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে এবং কক্সবাজার নিয়ে তো আরও বেশি। কক্সবাজার হবে বিশ্বে সর্বশ্রেষ্ঠ সি বিচ, পর্যটন কেন্দ্র এবং অত্যন্ত আধুনিক শহর। সেভাবেই পুরো কক্সবাজারটাকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ করবো। কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই রানওয়ে সম্প্রসারণের মাধ্যমে আমি মনে করি যে ওয়াদা জনগণের কাছে দিয়েছিলাম সেখানে আরও একটা ধাপ আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে এই যে জলভাগের ওপর আমরা একটা রানওয়ে নির্মাণ করছি সেটাও দৃষ্টিনন্দন হবে এবং অনেকে এটা দেখতে যাবে। তিনি জলভাগের ওপর এই রানওয়ে নির্মাণের সাহস নিয়ে কাজ শুরু করতে যাওয়া সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন রুটে বিমানের ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনার কথা জানান সরকার প্রধান।

বিমানের সেবা বাড়াতে এবং এর আধুনিকায়নে সংশ্লিষ্টদের সততা এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে জাতির পিতার যে স্বপ্ন ছিল সে স্বপ্ন যেন আমরা পূরণ করতে পারি। আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে রূপকল্প ঘোষণা করেছিলাম, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে, সেখানে আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি। এটাকে ধরে রেখে আমাদের উন্নত দেশের পথে এগিয়ে যেতে হবে এবং ইনশাল্লাহ আমরা সেটা করতে পারবো।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিভিল এভিয়েশন অথোরিটি অব বাংলাদেশ (সিএএবি)-এর চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান। অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এভিয়েশন অগ্রগতি সম্পর্কিত কর্মকান্ড নিয়ে অনুষ্ঠানে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

কক্সবাজারে সমুদ্র তীরবর্তী জমি পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে বিমানবন্দরের রানওয়ে স¤প্রসারণ করে নতুন ১০ হাজার ৭০০ ফুট রানওয়ে হবে। যার, ১ হাজার ৩০০ ফুট থাকবে সাগরের বুকে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে কক্সবাজার বিমান বন্দর হবে বিশ্বের সাগর উপক‚লে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন বিমান বন্দরগুলোর অন্যতম এবং এটিই হবে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে। যার ফলে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের বোয়িং ৭৭৭ ও ৭৪ এর মতো বড় আকারের বিমানগুলো এই বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারবে এবং এখানে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করার পথ সুগম হবে।

প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা সরাসরি কক্সবাজারে আসতে পারবেন। বিমান বন্দরে যাত্রী পরিবহণ ক্ষমতাও বাড়বে। বাড়বে ফ্লাইট অপারেশনের সংখ্যা। ভবিষ্যতে কক্সবাজার সংলগ্ন মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন্সগুলোর বড় বড় উড়োজাহাজও অবতরণ করতে পারবে কক্সবাজারে। আগামী ৫০ বছরের চাহিদা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে এই প্রকল্প।

২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর সরকার ১ হাজার ৫৬৮ দশমিক ৮৬ কোটি টাকার প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের মে মাসে সম্পন্ন হবার কথা থাকলেও এর আগেই এটি সম্পন্ন করা হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ থেকে যে সব আন্তর্জাতিক রুটে বিমান যাচ্ছে তার পাশপাশি আরো কয়েকটি আন্তর্জাতিক রুট চালুর প্রচেষ্টা চলছে জানিয়ে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিউইয়র্ক, টরেন্টো, সিডনির মতো দূরত্বে চলার মতো আমাদের ড্রিমলাইনার ও অন্যান্য বিমান আছে। বিশেষ করে আমাদের দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথেও যোগাযোগ বাড়াতে হবে। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে আমাদের যোগাযোগ হলে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের স¤প্রসারণ হবে।

তিনি বলেন, আমরা শুধু পশ্চিমাদের দিকে মুখ করে থাকবো না। পাশাপাশি, আমরা অন্যান্য যে সব বন্ধুপ্রতীম দেশ আছে সেখানে আমাদের বিমান যাতে যায় ভবিষ্যতে সেই চেষ্টা করবো।

সৈয়দপুর বিমানবন্দরটাকেও তার সরকার উন্নত করতে চাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে যেন উন্নত হয় যাতে ভুটান, নেপাল বা ভারতের কয়েকটা রাজ্য এই বিমাবন্দরটা ব্যবহার করতে পারে। সেভাবে এটাকে একটা আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে আমরা উন্নত করতে চাই। আর সিলেট সেটা ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সেখানেও মেঘালয়, আসাম বা ভারতের অনেক রাজ্য থেকেও তারা আমাদের এই বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারে। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরটাও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সেখানেও ত্রিপুরা থেকে শুরু করে ভারতের অনেক প্রদেশ এটা ব্যবহার করতে পারে। সেভাবে একটা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা তৈরি করা এবং সেভাবে উন্নত করা সেই চিন্তা আমাদের মাথায় রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বলতেন বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানটা এমন যে, বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড। অর্থাৎ প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের মধ্যে একটা সেতুবন্ধ এই বাংলাদেশ রচনা করতে পারে। সেই সুযোগটা আমাদের রয়েছে। কারণ, ইন্টারন্যাশনাল এয়াররুট বাংলাদেশের ওপর দিয়ে, কক্সবাজারের ওপর দিয়ে যাচ্ছে। কাজেই, কক্সবাজারকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধন হিসেবে গড়ে তুলতে এখানে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠা করা তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, কক্সবাজার জাতির পিতার খুব প্রিয় জায়গা ছিল এবং তিনি কারাগারে না থাকলে প্রতি বছর সেখানে পরিবার নিয়ে একবার হলেও যেতেন এবং সেখানকার ঝাউবন জাতির পিতারই পরিকল্পনা বলেও বঙ্গবন্ধু কন্যা অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন। জাতির পিতা ১৯৭২ সালেই সকল বিমানবন্দরকে পুনর্গঠন করে চলাচলের উপযোগী করে তুলেছিলেন এবং ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্স’ প্রতিষ্ঠা করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী।



 

Show all comments
  • Nahid Sarkar Papun ৩০ আগস্ট, ২০২১, ৫:৩২ এএম says : 1
    ডিজিটাল বাংলাদেশ আরো দূর্বার গতিতে এগিয়ে যাক,.. জয় বাংলা।
    Total Reply(0) Reply
  • Emdad Sarker ৩০ আগস্ট, ২০২১, ৫:৩২ এএম says : 0
    এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ৩০ আগস্ট, ২০২১, ৫:৩৩ এএম says : 0
    এখানেও সঠিক পরিকল্পনার ঘাটতি আছে । উন্নত দেশের মতো বিমান সরাসরি পানিতে ল্যান্ড করার সিস্টেম রাখলে ভালো হয়। যেহেতু এটা পর্যটক এলাকা তাই একশো বছরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Sajib Ferdous ৩০ আগস্ট, ২০২১, ৫:৩৩ এএম says : 0
    "অত্যাধুনিক কক্সবাজার" সোনার বাংলার একাংশ ।
    Total Reply(0) Reply
  • Shaokat Hossen Saikat ৩০ আগস্ট, ২০২১, ৫:৩৩ এএম says : 0
    কৃতজ্ঞতা ও শুভ কামনা রইল জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Tanvir Mahmud ৩০ আগস্ট, ২০২১, ৫:৩৭ এএম says : 1
    প্রতিটি উপজেলায় বিমান বন্দর করা উচিত। আমার হংকং সাংহাই সিংগাপুরের চেয়েও এগিয়ে আছি। আমরা বিমান ছাড়া চলাচল করতে চাইনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Narod Chandra Singha ৩০ আগস্ট, ২০২১, ৫:৩৭ এএম says : 0
    সাথে সব পুরনো বিমানবন্দর গুলো চালু করার দাবি জানাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Milon Hossain ৩০ আগস্ট, ২০২১, ৫:৩৯ এএম says : 0
    সরকারের সব উন্নয়ন পরিকল্পনা ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিভাগ কেন্দ্রিক। উত্তরে যে দুটি বিভাগ আছে সরকার মনে হয় ভুলে গেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Rayhan Khan ৩০ আগস্ট, ২০২১, ৫:৩৯ এএম says : 0
    আরেকটি মাইলফলক যোগ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায়। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গুলো যথাসময়ে শেষ করাটা সরকারের জন্য বেশ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যথাযথ উদ্যোগ ও সব পক্ষের সমন্বিত প্রয়াসে দেশের মহৎ কর্ম পরিকল্পনাগুলো সফলতার মুখ দেখবে এটাই একান্ত চাওয়া দেশবাসীর।
    Total Reply(0) Reply
  • Sultan Mahmud ৩০ আগস্ট, ২০২১, ৫:৪০ এএম says : 0
    অত্যন্ত ভালো একটা উদ্যোগ কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মানের আন্তর্জাতিক ডিজাইনের সমুদ্রপৃষ্ঠের উপর রানওয়ে তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু খেয়াল রাখবেন মুজিববর্ষের উপহার এর ঘর গুলার মতন বিমানবন্দরের রানওয়ে যেন উদ্বোধনের আগে ভেঙে না পড়ে। দুর্নীতি বন্ধ না করতে পারলে কোন উন্নয়নই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ