Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলবে বিএনপি -মির্জা ফখরুল

প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৪:৩৩ পিএম, ৩ অক্টোবর, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : সুন্দরবনের কাছে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধে ব্যাপকভাবে জনমতে গড়ে তুলবে বিএনপি। দুপুরে এক গোলটেবিলি আলোচনায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কথা জানান।

তিনি বলেন, আমি গতকাল (রোববার) খুলনা গিয়েছিলাম। সেখানে আমার যেটা অভিজ্ঞতা হয়েছে যে, রামপালের বিষয়ে শহরের মানুষেরাই তো সেভাবে কনভিনসড না যে, তাদের আন্দোলন করা দরকার এটাকে প্রতিরোধ করার জন্য, তাদের রাস্তায় বেরিয়ে আসার জন্য। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে ব্যাপক জনমত গড়ে তুলতে হবে। আপনাদের দায়িত্ব, আমাদের দায়িত্ব, সকলের দায়িত্ব জনমত তৈরি করার ব্যাপারে আমাদেরকে বেরুতে হবে। শুধু রাস্তায় নামবো বললেই তো হবে না। যারা এফেক্টেড হচ্ছেন, ভিকটিম হচ্ছেন, তাদের মধ্যে জনমত গড়ে তুলতে হবে।এটা জরুরী।

এজন্য ছোট ছোট লিফলেট তৈরি করে রামপালের বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষতিকর প্রভাবের বিষয়ে জনগনকে অবহিত করার কথাও বলেন বিএনপি মহাসচিব।

মানুষের যখন নিজের স্বার্থে আঘাত লাগবে, তখন কিন্তু মানুষ সেখানে মানুষ প্রতিরোধে দাঁড়ায়। আড়িয়াল খাঁর বিমানবন্দরের জায়গার কথা বলেছেন, ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত কয়লার ব্যাপারে যে আন্দোলন হয়েছিলো, যেখানে মানুষের মনে হয়েছে, তাদের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়েছে, সেখানে মানুষ চলে এসেছে। আমাদেরকে সেই কাজটাই আগে করতে হবে।

দলের অবস্থান পুনরুল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একটি কথা আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি বাংলাদেশের জনগনের পক্ষেই কাজ করেছে সব সময়। দেশের স্বার্থে কাজ করেছে, হয়ত সব সময় সফল হয়নি। কিন্তু বিএনপির আন্তরিকতার অভাব নেই।

জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আজকের সংকট মোকাবিলা করবে, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে, জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে। আমি দৃঢ়তার সাথে বলছি, বিএনপি জনবিরোধী যেকোনো প্রকল্প প্রতিরোধ করবে ইনশাল্লাহ।

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের সেমিনার কক্ষে বিএনপিসমর্থিত ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ-এ্যাব’ এর উদ্যোগে ‘ রামপাল কয়লঅভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র: কারিগরি, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ত্রিমাত্রিক বিপত্তি’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনা হয়। অনুষ্ঠানে এ্যাব এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রকৌশলী আনহ আখতার হোসেন মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই সরকার এই পর্যন্ত যতগুলো প্রকল্প হাতে নিয়েছেন, সেগুলু অনৈতিকভাবে, অন্যায়ভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। রামপাল শুধু নয়, সব প্রকল্পে তারা ব্যয়ভার বাড়িয়েছে। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দুর্নীতি অর্থ উপার্জন। যে উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির কথা বলছেন, তাতে কত বড় শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে। বিনিয়োগই নেই, উন্নয়ন হবে কোথায় থেকে?

গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে সরকার ‘মিথ্যা প্রচারনা’য় জনগণকে বিভ্রান্ত করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এভাবে প্রচার করে তারা (সরকার) একটা গিমিক রচনা করতে চাচ্ছে- আমাদের ভাষায় সবচেয়ে প্রিয় প্রধানমন্ত্রী। আমাদেরকে তিনি যে জিনিসগুলো দিচ্ছেন যেটা আমাদের জাতির অস্তিত্বকে বিপন্ন করে ফেলেছে। গোটা জাতিকে সংকটে মধ্যে নিয়ে এসেছে। শুধু রামপাল নয়, প্রত্যেকটি জায়গায় দেখবেন, বাংলাদেশের স্বার্থকে বিসর্জন দেয়া হয়েছে। ট্রানজিট করেছেন-খুব ভালো কথা। আমরা এর বিপক্ষে নই। ট্রানজিট হতে হবে আমার স্বার্থকে রক্ষা করে। সেখানে কতটুকু স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে?

রামপালে কেনো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধিতার কারণ তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা আমার সুন্দরবন ধ্বংস করবে, যা আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের জন্য প্রয়োজন। সেজন্য বলতে চাই, আমার দেশের স্বার্থে, জনগনের স্বার্থে কখনোই আমরা আপোষ করি না, করবো না এবং ভবিষ্যতেও কাউকে করতে দেবো না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, রামপাল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে গেলে এই বাংলাদেশ টিকে থাকবে না, কুৎসিত বাংলাদেশ থাকবে। এখানে বিএনপি মহাসচিব আছেন, তাকে অনুরোধ করব, রামপালের ব্যাপারে যে ভূমিকা আপনারা রেখেছেন, তার প্রশংসা করি। এই ইস্যুতে আপনারা সাহসীভাবে সোচ্চার থাকুন।

আনহ আখতার হোসেনের সভাপতিত্বে ও প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সঞ্চালনে সেমিনারে গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাষ্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য্ অধ্যাপক খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, সদস্য সচিব অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপি ভাইস চেয়ারপারসনের শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক তাজমেরী এস ইসলাম, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, এ্যাব এর মহাসচিব প্রকৌশলী আলমগীর হাছিন আহমেদসহ প্রকৌশলীরা বক্তব্য রাখেন।

শনিবার খুলনার একটি হোটেলে ‘দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন ভাবনা ও সুন্দরবন’ শীর্ষক সেমিনারেও মির্জা ফখরুল বক্তব্য দেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন ন্যাশনালিস্ট টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (এনটিএ) এ সেমিনারের আয়োজন করে। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মাহমুদুল হাসান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ