Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডেঙ্গু সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো

গত বছরের চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশনকে সমন্বিতভাবে কাজ করার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

গত বছরের চেয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যার মধ্যে আক্রান্তের নব্বই শতাংশই ঢাকায়। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অভিযান চলমান থাকলেও আশানুরূপ কমছে না রোগীর সংখ্যা। হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালগুলোতে। বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা আবহাওয়া বিবেচনায় চলতি মাসে আরও বাড়তে পারে রোগীর সংখ্যা। এদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৪২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো পাঁচ হাজার ৪৩৪ জনে। নতুন শনাক্ত ২৪২ জনের মধ্যে ২১ জন ঢাকার বাইরে এবং বাকি ২২১ জন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি মাসের ১১ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৭৬ জনে। এর আগে, জুলাই মাসে দুই হাজার ২৮৬ জন, জুন মাসে ২৭২ জন ও মে মাসে ৪৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৮২৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ৭২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ডেঙ্গু রোগী বাড়বে। একদিকে মহামারি করোনা অন্যদিকে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। আর তাই হাসপাতালে জায়গা সংকুলান করতে পারছি না। ডাক্তার-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা সর্বোচ্চ দিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করছে। এখন প্রায় সবই খুলে দেয়া হয়েছে। জীবন জীবিকা পাশাপাশি চলবে। জীবন বেশি গুরুত্ব। জীবনকে রক্ষা করে আমাদের জীবিকা অর্জন করতে হবে। আমরা মৃত্যুর হার কমাতে চাই। শুধু সরকার পারবে না, সবাইকে প্রয়োজন। নিজেদের সুরক্ষা নিজেদের করতে হবে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত সাত দিন ধরে আছেন শিশু হাসপাতালে ফাতেমা নূর জান্নাত। ডেঙ্গুর ভয়াবহতায় হাসপাতালে তাকে নিয়ে পরিবারের প্রতি মুহূর্তের এক যুদ্ধক্ষেত্র, সেই যুদ্ধে সামিল ডাক্তার নার্স সবাই। এই হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন শুধুই শিশু ভর্তি হন ১০-১২ জন। তবে ভুক্তভোগীরা বলছেন, সন্তানের এমন পরিস্থিতি জন্য দায় এড়াতে পারে না সিটি করপোরেশনের কর্তাব্যক্তিরা।
ডেঙ্গু আক্রান্ত এক শিশুর অভিভাবক বলেন, আমার ডেঙ্গু আক্রান্ত বাচ্চাকে নিয়ে আজকে পাঁচ দিন হাসপাতালে। আমাদের বাসার আশপাশে প্রচুর মশা। কিন্তু সিটি করপোরেশনের কোনো মাথা ব্যথা নেই। আমার সন্তানের কিছু হলে এর দায় সিটি করপোরেশনের। সিটি করপোরেশনকে আরও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করা উচিত।

পরিসংখ্যান বলছে, গতবছরের চেয়েও নাজুক বর্তমান অবস্থা। গত বছরের জুনে ২০ জন, জুলাইয়ে ২৩ জন, আগস্টে ৬৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। আর এবারের আগস্টেই গড়ে প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন ২৫০ জন করে। চলতি বছরের জুনে ২৭২ জন, জুলাইয়ে ২ হাজার ২৮৬ জন আক্রান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে শুধুই ঢাকা শিশু হাসপাতালে চলতি বছর ডেঙ্গুতে প্রাণ গেছে পাঁচ জনের।

ঢাকা শিশু হাসপাতাল সহকারী অধ্যাপক ডা. রিজওয়ানুল আহসান জানান, পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে, এমন হলে নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশনকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। অন্যথায় নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে ডেঙ্গু পরিস্থিতি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কিটতত্ত¡বিদ প্রফেসর কবিরুল বাশার বলছেন, আগস্ট মাসে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি উপযুক্ত সময়, তাই ভয়াবহতা এড়াতে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। চলতি বছর সারা দেশে এখন পর্যন্ত চার হাজারের অধিক আক্রান্ত হয়েছে। যার সিংহ ভাগ ঢাকায়।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় কমিটির উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেছেন, একই সঙ্গে করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়ায় নগরবাসী নাকাল। কোভিড-১৯ ও ডেঙ্গু জ্বর-দুটোই ভাইরাসজনিত রোগ, এদের মধ্যে উপসর্গজনিত মিল-অমিল আছে। আবার দুটিই জটিল হয়ে পড়তে পারে কারও কারও ক্ষেত্রে। সে ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।

তিনি বেলন, দুই রোগের সংক্রমণের হার বাড়ায় হাসপাতালের শয্যা, সুযোগ-সুবিধা আর চিকিৎসাসেবার ওপরও পড়েছে চাপ। আবার দেখা যাচ্ছে, কোনো কোনো রোগীর ডেঙ্গু আর কোভিড একসঙ্গেই হয়েছে। তখন চিকিৎসাব্যবস্থা কী হবে, তা নিয়ে তৈরি হচ্ছে দ্বিধাদ্ব›দ্ব। কেউ ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর সেখানে গিয়ে কোভিড-১৯ রোগীর সংস্পর্শে এসে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

প্রফেসর ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু ও কোভিড দুটোই প্রতিরোধযোগ্য রোগ। এই সময় যখন চারদিকে এ ধরনের রোগীর আক্রান্ত হওয়ার হার ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, হাসপাতালগুলো পরিপূর্ণ, তখন নিজের পরিবারের সুরক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন।

তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা যায় এডিস মশা নির্মূলের মাধ্যমে। নিজের বাসা–বাড়ি, আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখুন। টবের নিচে, বারান্দায়, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের নিচে, পরিত্যক্ত টায়ারে বা গ্যারেজে যেন পানি না জমে থাকে। নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটান এসব জায়গায়। এডিস মশার ডিম এক বছর পর্যন্ত পরিবেশে টিকে থাকতে পারে, তারপর বৃষ্টি এলে লার্ভা তৈরি করে। তাই পরিচ্ছন্নতা ও মশা নিধন অভিযান কেবল বর্ষায় নয়, সারা বছর ধরে চালাতে হবে। দিনের বেলা শিশুদের মশারি টানিয়ে ঘুম পাড়াবেন। ফুলহাতা জামাকাপড় পরাবেন। রিপেলেন্ট ক্রিম লাগাতে পারেন। পাড়া–মহল্লার সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করুন, তবে মশামুক্ত হতে পারবেন।

একই সঙ্গে কোভিড প্রতিরোধ ডেঙ্গুর চেয়েও সহজ আর সস্তা। একটি মাস্ক আর একটি যেকোনো মূল্যের সাবানই আপনাকে সুরক্ষা দিতে পারে। কঠোর লকডাউন উঠে গেছে, তার মানে এই নয় যে অকারণে বাইরে ঘুরে বেড়াবেন, হইচই করবেন, পার্টি করবেন। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে এক মুহ‚র্তও নয়, আর সর্বদা বাইরে মাস্ক পরে থাকবেন। বারবার হাত পরিষ্কার করবেন। অন্যের সঙ্গে ন্য‚নতম ৩ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখবেন। সরকার টিকা গ্রহণের বয়সসীমা শিথিল করেছে, তাই প্রথম সুযোগেই টিকা গ্রহণ করে ফেলুন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডেঙ্গু রোগী

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
২৫ জানুয়ারি, ২০২২
৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১
৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ