Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

প্রত্যেকটা সংগ্রামে আমার মায়ের অবদান রয়েছে

গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রত্যেকটা সংগ্রামে আমার মায়ের অনেক অবদান রয়েছে। একটা গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু আমি সব সময় এটা বলি, আমার মা ছিলেন সব থেকে বড় গেরিলা। অসামান্য স্মরণশক্তি ছিল তার। বাংলাদেশের কয়েকটি বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত সঠিক সময়ে সেই সিদ্ধান্তগুলো সঠিক সময়ে আমার মা নিয়েছিলেন বলেই কিন্তু আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি। গতকাল ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন’ ও ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক-২০২১ প্রদান’ অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুক্ত হন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি আমার মায়ের যে অবদান রয়ে গেছে দেশের রাজনীতিতে; শুধু তাই না, আমাদের বাংলাদেশের মানুষের যে আর্থিক দুরবস্থা, মানুষের কী চাহিদা, সে বিষয়গুলোও তিনি জানতেন এবং শিক্ষার প্রতি তার প্রচÐ আগ্রহ ছিল। কারণ, আমার নানা শিক্ষিত ছিলেন। তিনি যশোরে চাকরি করতেন এবং তার খুব শখ ছিল যে তার দুই মেয়েকে তিনি লেখাপড়া শেখাবেন, বিএ পাস করাবেন। সে যুগে এ রকম চিন্তা করাটাও একটা দুঃসাহসিক ব্যাপার ছিল।

পাকিস্তান রাষ্ট্র হওয়ার পর থেকেই কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে সব সময় রিপোর্ট দিতো। সে প্রসঙ্গ স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে রিপোর্টগুলো আমি প্রকাশ করেছি, সেখানে আমি কিন্তু একটি জিনিস খুঁজে দেখেছিলাম যে কোথাও আমার মায়ের কথা লেখা আছে কিনা। কিন্তু সেখানে তারা আমার মায়ের বিরুদ্ধে কিছুই লিখতে পারেননি। অথচ আমার মা রাজনীতিতে এত সক্রিয় ছিলেন। এই যে গোপনে দলের লোকজনের সঙ্গে দেখা করা। সংকটকালে ছাত্রলীগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং তাদের দিকনির্দেশনা দেওয়ায় সময় বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে তিনি তার পোশাক পরিবর্তন করতেন। একটা বোরকা পরে, তারপরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, বিশেষ করে পলাশি অথবা আজিমপুর কলোনিতে আমাদের এক আত্মীয়ের বাসা; সেখানে গিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করা, তাদের দিকনির্দেশনা দিয়ে আবার ফিরে এসে তিনি আমাদের নিয়ে বাসা ফিরতেন। এর বিস্তারিত আমার লেখায় আছে। আমি বেশি বলছি না।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের কল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু তার পাশে থেকে সব সময় প্রেরণা জুগিয়েছেন আমার মা। আমার মা কখনও সামনে আসেননি, কখনও কোনও মিডিয়ার সামনে যাননি। কখনও নিজের নামটাও ফলাতে চাননি। তিনি নীরবে পাশে থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে আমার বাবাকে সহযোগিতা করে গেছেন, সমর্থন দিয়ে গেছেন। এটাই হচ্ছে সবথেকে একটা বড় ত্যাগ, যা তিনি স্বীকার করে গেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকের দিনের যে প্রতিপাদ্য বিষয় ‘বঙ্গমাতা সংকটে-সংগ্রামে নির্ভীক সহযাত্রী’, এটা একান্তভাবেই যথার্থ। কারণ, তার নীরব সাক্ষী আমি। আমি বড় মেয়ে। আম্মার সঙ্গে আমার বয়সের তফাৎ কিন্তু খুব বেশি না। ১৬, ১৭ বা ১৮ বছর এ রকমই একটা ডিফারেন্স হবে। আমি আমার মায়ের সব থেকে কাছের এবং তার সুখ-দুঃখের সাথী, তার জীবনের কাহিনি আমি যতটা শুনেছি, আর কারও বোধহয় এতটা সময়-সুযোগ হয়নি।

বঙ্গমাতার ধৈর্য ও সাহস এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং বাস্তবায়ন করতে যথেষ্ট অবদান রেখেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আর পাঁচটা নারীর মতো বা সংসারের কর্ত্রীর মতো আমার মায়ের যদি নানা রকমের চাহিদা থাকতো; স্বামীর কাছে মানুষের অনেক আকাক্সক্ষা থাকে; অনেক কিছু পাওয়ার থাকে, কত মানুষ কত কিছুই তো চায়, শাড়ি চায়, বাড়ি চায়, গহনা চায়, এটা চায়, সেটা চায়; আমার মা কিন্তু সংসারের বা নিজের ব্যক্তিগত জীবনের বা আমাদের জন্য কখনও কোনও দিন কোনও ব্যাপারে আমার বাবার কাছে তার কোনও চাহিদা ছিল না। বরং সব সময় তিনি এটাই বলতেন, সংসার নিয়ে ভাবতে হবে না। আমাদের কথা চিন্তা করতে হবে না। তুমি দেশের কাজ করছো, দেশের কাজই করো। দেশের কথাই চিন্তা করো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ছয় দফা না আট দফা। এটা নিয়ে যখন চরম বিতর্ক, সেই ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং আমাদের বাসায় হয়েছে। আমাদের আওয়ামী লীগেরও অনেক সিনিয়র নেতা চলে গেছেন আট দফার পক্ষে। কারণ, পাকিস্তান থেকে নেতারা এসেছেন আট দফার পক্ষ নিয়ে। কিন্তু আট দফা ছিল একটা শুভঙ্করের ফাঁকি। এটা তাদের মতো শিক্ষিত অনেকেই হয়তো ধরতে পারেননি। কিন্তু আমার মায়ের কাছে সেটা স্পষ্ট ছিল। সেখানে আমার মায়ের স্পষ্ট কথা ছিল, ছয় দফার একটা দাঁড়ি কমা সেমিকোলনও বদলাবে না। যেটা আব্বা বলে গেছেন সেটাই হতে হবে। সেই সিদ্ধান্তটাই ওয়ার্কিং কমিটিতে নেওয়া হয়েছিল।

তিনি বলেন, সেই ৭ মার্চের ভাষণ। তার আগে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাটা দেওয়া হলো, সেখানে প্যারোলে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের নেতাদের যে প্রচন্ড চাপ। আইয়ুব খান মিটিং ডেকেছে, যেতেই হবে। আমার মায়ের কাছে প্যারোলে যাওয়াটা অত্যন্ত অসম্মানজনক মনে হয়েছিল। আইয়ুব খান যদি আলোচনা করতে চায় সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। কারণ, জনগণ তখন রীতিমতো আন্দোলন করছেন, গণঅভ্যুত্থান হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অনেক নেতা, বড় আইনজীবী, বড় সাংবাদিক। তাদের অনেকেই প্যারোলে যাওয়ার জন্য প্রচন্ড চাপ দিচ্ছিলেন। আমার মা সেখানে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যদি এই সিদ্ধান্তটা সঠিকভাবে না নিতেন আর খবরটা আমার বাবার কাছে না পৌঁছাতেন, তাহলে বাংলাদেশ কোনদিনও স্বাধীন হতো না।

তিনি বলেন, এরপরে এলো ৭ মার্চের ভাষণ। সেই ভাষণের সময়েও অনেকের অনেক কথা ছিল। কেউ কেউ এত উৎসাহিত বা উত্তেজিত যে এই মুহূর্তেই ঘোষণা দিতে হবে। তাহলে তো জালিয়ানওয়ালাবাগের মতো ঘটনা ঘটে যেতো। ওখান থেকে একটি মানুষও জীবিত ফিরে যেতে পারতো না। আর কোনও দিন যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করা যেতো না।

সরকার প্রধান বলেন, সেখানে আমার মায়ের যে কথা, মায়ের যে পরামর্শ, সেটাই কিন্তু বাংলাদেশের ভাগ্যকে এগিয়ে নিয়ে যায়, যার জন্য আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করি। এরকম আরও বহু সময়ে আমি দেখেছি। সব থেকে বড় কথা হলো, নিজের জীবনটাকে তিনি সব সময় খুব সাদাসিধা রেখেছেন। তিনি বলেন, আমার আব্বা যখন প্রধানমন্ত্রী, মা’র কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের মধ্যে তাদের যদি বিলাসিতা হয়, তাহলে অভ্যাস খারাপ হয়ে যাবে, নজর খারাপ হয়ে যাবে। ওই বত্রিশ নাম্বারের বাড়ি ছেড়ে তিনি কখনও আসেননি। এসেছেন, হয়তো ঘুরে দেখে গেছেন। কিন্তু ওইখানে বসবাস করার কথা কখনও চিন্তাও করেননি। আমার মাকে আমি সব সময় একই রকম দেখেছি। কখনও কোনো ব্যাপারে বেশি বিলাসিতা পছন্দ করতেন না।

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (বঙ্গমাতা) নিজের জীবন দিয়ে গেছেন। আমার আব্বাকে যখন হত্যা করল, সেটা যখন তিনি দেখলেন, তখনই সোজা খুনিদের বললেন, তোমরা ওনাকে মেরেছো আমাকেও মেরে ফেলো। তারা বলেছিল, আপনি আমাদের সাথে চলেন। তিনি বলেছিলেন, তোমাদের সাথে আমি যাবো না। তোমরা এখানেই আমাকে খুন করো। ঘাতকদের বন্দুক গর্জে উঠেছিল। আর সেখানেই আমার মাকে তারা নির্মমভাবে হত্যা করে। আমাদের পরিবারে তো কেউ বেঁচে ছিল না। আমরা দুই বোন বিদেশে ছিলাম। কতটা সাহস একটা মানুষের মনে থাকলে এই মানুষটা মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জীবন ভিক্ষা না নিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিলেন।



 

Show all comments
  • Qari Muhammed Abdul Mozid ৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:৪৩ এএম says : 0
    বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯১ তম জন্ম বার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
    Total Reply(0) Reply
  • Hemel Rahman ৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:৪৩ এএম says : 0
    বিনম্র শ্রদ্ধা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এর প্রতি যার অনুপ্রেরনায়,, "" বাঙালি জাতি পায় একজন "" হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী "" জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু আল্লাহ তায়ালা তাকে সহ তার পরিবারের সকলকে "" জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুক""
    Total Reply(0) Reply
  • Rayhan Islam Roney ৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:৪৩ এএম says : 0
    বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করি এবং দোয়া করি মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের নসীব করুন, আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Sheikh Nasir Ahmed ৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:৪৩ এএম says : 0
    বিনম্রচিত্তে স্মরণ করছি জাতির পিতার সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কে
    Total Reply(0) Reply
  • Ruhul Amin ৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:৪৪ এএম says : 0
    বঙ্গবন্ধুর লড়াই সংগ্ৰামে সততা প্রেরণাদায়ী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯১তম জন্ম বার্ষিকীতে ঘোড়জান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। ঘোড়জান ইউনিয়ন শাখা, চৌহালি সিরাজগঞ্জ।
    Total Reply(0) Reply
  • Sabbir Ahmed ৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:৪৪ এএম says : 1
    বঙ্গবন্ধু হত্যা ও হত্যা পরিকল্পনার সাথে জড়িত সকল মীর্জাফোর ও খুনীদের সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Habibur Rahaman ৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:৪৫ এএম says : 0
    বিনম্র শ্রদ্ধা বঙ্গমাতার প্রতি ।
    Total Reply(0) Reply
  • M Zaman Mintu ৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:৪৬ এএম says : 0
    ত্যাগ ধৈর্য প সাহসিকতা প্রতীক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ