পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিচারপ্রার্থীদের সময়, শ্রম ও অর্থের সাশ্রয় এবং আদালতে মামলা জট হ্রাসে মধ্যস্থতার মাধ্যমে (মেডিয়েশন) বিরোধ নিস্পত্তির সুযোগ প্রদানে নির্দেশিকা জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।‘জুডিশিয়াল রিফর্মস কমিটি’র সুপারিশের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নির্দেশে আবশ্যিকভাবে মধ্যস্থতার সংশ্লিষ্টতা বিধানাবলী পালনে ৫ আগস্ট এ নির্দেশিকা জারি করা হয়।
নির্দেশিকা অনুযায়ী এক বৈঠকে বিরোধ নিস্পত্তির পাশাপাশি জমা দেয়া কোর্ট ফি পর্যন্ত ফেরতের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ফৌজদারি কার্যবিধির ৮৯(এ) ও ৮৯ (সি) ধারা এবং অর্থ ঋণ আদালতের ২২ ধারাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইনে থাকা মধ্যস্থতা সংক্রান্ত বিধি-বিধান পালনে নির্দেশিকা জারি করা হয়। এর ফলে মামলার পক্ষগণের সময়, শ্রম ও অর্থের সাশ্রয় হওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিরোধ নিষ্পত্তিতে আইন অনুযায়ী বর্ণিত মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ ও আদালত নির্ধারিত দিনের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি না হলে সময় বাড়ানো সুযোগ রয়েছে। বিরোধ নিষ্পত্তি না হলে আবার মামলা করার জন্য পক্ষগণ আদালতে যেতে পারবেন।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো.আলী আকবর স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়, বিভিন্ন আইনে বর্ণিত মধ্যস্থতা সংক্রান্ত বিধানাবলী প্রতিপালনার্থে অনুসরণীয় নির্দেশিকা, ২০২১’ এ বলা হয়, দেওয়ানি মোকদ্দমায় লিখিত জবাব দাখিলের পর আদালত শুনানি মুলতবি করে বাধ্যতামূলকভাবে মধ্যস্থতার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। মধ্যস্থতা সংক্রান্ত শুনানির জন্য একটি তারিখ ধার্য করবেন। সে অনুযায়ী মধ্যস্থতা সংক্রান্ত শুনানির নির্ধারিত তারিখে মোকদ্দমার বাদী, বিবাদী কিংবা তাদের আইনগত প্রতিনিধি বা তাদের আইনজীবী সশরীরে আদালতে হাজির হলে আদালত পক্ষগণ বা তাদের আইনগত প্রতিনিধিকে মধ্যস্থতার বৈশিষ্ট্য ও সুবিধাসমূহ ব্যাখ্যা করে বোঝাবেন।
বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে, মধ্যস্থতা শুরু হলে তার মাধ্যমেই মোকদ্দমার নিষ্পত্তি হতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। আর মধ্যস্থতার আলোচনা শুরুর পর যদি দেখা যায় বিরোধীয় বিষয়টিতে পক্ষসমূহের অবস্থান এমন অনমনীয় যে কোনো মধ্যস্থতা সম্ভব নয়, অথবা মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি কোনো পক্ষের জন্যই অনুকূল কোনো অবস্থান সৃষ্টি করছে না, তাহলে সেই পর্যায় থেকে পুনরায় প্রচলিত আইনে মোকদ্দমার কার্যক্রম চালু করা সম্ভব। কিন্তু মধ্যস্থতার আলোচনা একবার শুরু হলে অনেক ক্ষেত্রেই পক্ষগণ আর প্রথাগত মামলা পরিচালনার কার্যক্রমে না গিয়ে মধ্যস্থকারীর মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে আগ্রহী হবেন। এমতবস্থায় পক্ষগণের অন্তত একবার মধ্যস্থতার জন্য আলোচনায় বসা উচিত। মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে পক্ষগণ নিজেরাই নিজেদের পক্ষের মধ্যস্থতাকারী নির্বাচন করতে পারবেন। সুতরাং এই প্রক্রিয়ায় পুরো বিষয়টিতেই পক্ষগণের নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকবে। পক্ষগণ আদালত বা জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের মাধ্যমে মোকদ্দমার বিরোধীয় বিষয় মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে চাইলে এ বাবদ তাদের কোনো খরচ বহন করতে হয় না । অন্যক্ষেত্রে দরিদ্র ও অসচ্ছল পক্ষগণ প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ সাপেক্ষে মধ্যস্থতা বাবদ খরচ আইনগত সহায়তা দেয়া সংস্থার কাছ থেকেও লাভ করতে পারে। মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে মধ্যস্থতাকারী কোনো সিদ্ধান্ত দেন না, বরং তিনি পক্ষগণের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করেন। এক্ষেত্রে পক্ষগণের সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীনতা থাকে।
সুবিধাগুলো হচ্ছে : মধ্যস্থতা প্রক্রিয়ায় গোপনীয়তা বজায় থাকা: মধ্যস্থতা প্রক্রিয়ায় যেকোনো পর্যায়ে পক্ষগণের মধ্যে যে আলোচনাই হোক না কেন বা যে দলিল-প্রমাণই উপস্থাপন করা হোক না কেন, তার গোপনীয়তা অটুট থাকে এবং মধ্যস্থতায় ব্যর্থ হলে মধ্যস্থতার আলোচনা আদালতে প্রমাণ হিসেবে গ্রাহ্য হয় না। মধ্যস্থতার প্রক্রিয়া সহজ ও ফলপ্রসূ: মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে পক্ষগণ বা তাদের নিযুক্ত আইনজীবীরা মধ্যস্থতা আলোচনার স্থান, কাল এবং কার্যসম্পাদন প্রক্রিয়া নিজেরাই ঠিক করেন বলে এর কার্যপ্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ ও ফলপ্রসূ। এর ফলে পক্ষগণের সময়,শ্রম ও অর্থের সাশ্রয় হয়। মধ্যস্থতার প্রক্রিয়াটি অনানুষ্ঠানিক। আদালতে অথবা সালিশ আইনের অধীনে সালিশে সাধারণত পক্ষগণের কথা বলার সুযোগ কম থাকে। কিন্তু মধ্যস্থতার প্রক্রিয়াটি অনানুষ্ঠানিক হওয়ায় পক্ষগণ নিজেরা নিজেদের সমস্যা বা বিরোধ নিষ্পত্তিতে অধিক কথা বলার সুযোগ পান। এর ফলে পরস্পরের ভুল বোঝাবুঝির অবসানের ক্ষেত্র তৈরি হয়। মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে কালক্ষেপণের সুযোগ কম: প্রচলিত পদ্ধতিগত কারণে অনেক ক্ষেত্রে মামলা নিষ্পত্তিতে বছরের পর বছর সময় লেগে যায়, কিন্তু মধ্যস্থতার মাধ্যমে এক বৈঠকেই বিরোধ নিষ্পত্তি হতে পারে। আর এই পদ্ধতিতে আইনগতভাবে সর্বোচ্চ ৯০ (নব্বই) দিন সময় প্রয়োজন হতে পারে। পক্ষগণ মতৈক্যে উপনীত হওয়ার পরে আদালত সে মর্মে ৭ দিনের মধ্যে ডিক্রি বা আদেশ দিতে পারেন। এতে মোকদ্দমা নিষ্পত্তিতে কালক্ষেপণের সুযোগ কম।
মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে কোর্ট ফি ফেরতের সুযোগ: মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি হলে পক্ষগণ কোর্ট ফি ফেরত পাবেন। যার ফলে পক্ষগণের অর্থের সাশ্রয় হবে।
মামলা পরিচালনায় ব্যয় হ্রাস: মধ্যস্থতার মাধ্যমে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক কম সময়ে মোকদ্দমা নিষ্পত্তি হয়। ফলে মোকদ্দমার সার্বিক পরিচালনা ব্যয়সহ আইনজীবীর ফি বাবদ ব্যয় কম হয়।
মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে স্বল্প সময় ব্যয়: আদালতে বিচার বা সালিশের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি হলেও অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা থেকে যায়। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মোকদ্দমা নিষ্পত্তি হলে রায়ের বিরুদ্ধে বা সালিশি রোয়েদাদের বিরুদ্ধে আপিল বা উচ্চ আদালতে রিভিশন হয়।
অর্থ ঋণ আদালত আইন-২০০৩ এর অধীনে মধ্যস্থতাকারী নিয়োগের রক্ষত্রে এই আইনের ২২(২) ধারায় বর্ণিত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করতে হবে। মধ্যস্থতার মাধ্যমে আদালতের আদেশের ১০ দিনের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী নিযুক্ত হয়েছে কি-না রস বিষয়ে রমাকদ্দমার পক্ষগণ আদালতকে অবহিত করবেন। পক্ষগণ মধ্যস্থতাকারী নিযুক্ত করতে ব্যর্থ হলে আদালত পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করবেন। মধ্যস্থতাকারী নিযুক্ত হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে আদালত মধ্যস্থতা কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন।
আপিল বা রিভিশনের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল বা লিভ টু আপিল হয়। আপিল বিভাগ যে রায় দেবেন তার বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ পক্ষ রিভিউ পিটিশন দায়ের করেন। এতে সব মিলিয়ে মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা হতে পারে। মধ্যস্থতার মাধ্যমে মোকদ্দমা নিষ্পত্তি হলে সেই মধ্যস্থতার ডিক্রি বা আদেশের বিরুদ্ধে কোনো আপিল বা রিভিশন রক্ষণীয় নয়। এর ফলে একদিকে যেমন বিরোধীয় বিষয়ের দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব, অন্যদিকে আপিল-রিভিশন ইত্যাদির আইনগত সুযোগ না থাকায় মামলার আর কোনো দীর্ঘসূত্রিতা থাকে না। এতে পক্ষগণের সময়, শ্রম ও অর্থের সাশ্রয় হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।