পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ১/১১’র কঠিন সময়ে খালেদা জিয়ার পাশে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আসম হান্নান শাহ ইন্তেকাল করেছেন ইন্নালিল্লাহে -----রাজিউন।
সিঙ্গাপুরের রাফেলস হার্ট সেন্টারে স্থানীয় সময় ভোর ৫টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে তার ছোট ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নানের বরাত দিয়ে দলের চেয়ারপার্সনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শাইরুল কবির খান একথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, স্যারের ছোট ছেলে আমাকে মোবাইল টেলিফোনে কাঁদতে কাঁদতে বলেছেন, আব্বু চলে গেছেন। আব্বু আর নেই …… ।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭৮ বছর।
গত ১১ সেপ্টেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে হৃদরোগে আক্রান্ত আসম হান্নান শাহকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরে নেয়ার পর তার হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচার (এনজিওপ্লাস্ট) করে হৃদযন্ত্রের ধমনীতে চারটি রিং পরানো হয়েছিলো।
গত ৬ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মহাখালী ডিওএইচএস‘র বাসা থেকে নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে বেরুনোর সময়ে হান্নান শাহ হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হন। সেসময়ে দ্রুত তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে কয়েকদিন লাইফ সাপোর্টে রাখার পর চিকিৎসকদের পরামর্শক্রমে সিঙ্গাপুরে নিয়ে হয়।
দলের নেতা অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আসম হান্নান শাহ‘র মৃত্যুতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক পৃথক বার্তায় শোক প্রকাশ করে তার বিদাহী রুহের মাগফেরাত কামনা করেছেন।
তারা শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, সিঙ্গাপুরে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বুধবারই তার লাশ দেশে নিয়ে আসা হবে।
মৃত্যুকালে আসম হান্নান শাহ স্ত্রী নাহিদ হান্নান, দুই ছেলে শাহ রেজাউল হান্নান, শাহ রিয়াজুল হান্নান ও এক মেয়ে শারমিন হান্নান সুমিকে রেখে গেছেন।
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঘাগটিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন হান্নান শাহ। তার বাবা ফকির আবদুল মান্নান ১৯৬৫-৬৮ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। তার ছোট ভাই শাহ আবু নঈম মোমিনুর রহমান সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি ছিলেন।
বর্ণাঢ্য সামরিক জীবনের অধিকারী বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আসম হান্নান শাহ ১৯৬২ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমী থেকে কমিশন লাভ করেন। এরপর তিনি পাকিস্তানের বিভিন্ন সেনানিবাসের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বিগ্রেড কমান্ডার, চট্টগ্রামের মিলিটারি একাডেমীর কমান্ডেন্ট, যশোর ‘স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি এন্ড ট্যাকটিক্স’ এর চিফ ইন্সট্রাক্টর,পাকিস্তানের কোয়েটার আর্মি কলেজ অব ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ইন্সট্রাক্টর সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে পালন করেন হান্নান শাহ।
১৯৮১ সালে ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে একদল সেনা বাহিনীর হাতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে রাঙ্গুনিয়া থেকে প্রেসিডেন্টের লাশ ঢাকায় নিয়ে আসেন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আসম হান্নান শাহ।
এইচ এম এরশাদ সরকার হান্নান শাহকে সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়। তিনি সরকারের সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব(এপিডি) ও বিএডিসি‘র চেয়ারম্যানও ছিলেন।১৯৮৩ সালে বিএডিসির চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে বিএনপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন হান্নান শাহ।
রাজনৈতিক জীবনে শুরুতে ১৯৮৩ সালে হান্নান শাহ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক, ১৯৮৬-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত দলের সাংগঠনিক সম্পাদক(ঢাকা বিভাগ) এবং ১৯৯৩-২০০৯ সাল পর্যন্ত দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্যের দায়িত্ব পালন করে।
১/১১ এর কঠিন সময়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও জিয়া পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে আসম হান্নান শাহ বিএনপির তৃনমূল নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময়ের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও দলের সংস্কারপন্থী অংশের ‘কর্মকাণ্ড’ ও ‘ষড়যন্ত্র’ এর বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের সামনে এসে সাহসী কণ্ঠে কথা বলে দেশ-বিদেশে দলের নেতা-কর্মীদের দৃষ্টি কাড়েন তিনি।
২০০৯ সালে দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে আসম হান্নান শাহ সর্বোচ্চ ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ষষ্ঠ কাউন্সিলেও তিনি এই পদে পুনঃনির্বাচিত হন।
দুইবার গাজীপুর-৪ আসন(কাপাসিয়া) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন হান্নান শাহ। খালেদা জিয়ার সরকারের পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী ছিলেন তিনি।
স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে আসম হান্নান শাহ কয়েকবার কারাগারে যান। একইভাবে বর্তমান সরকারের আমলেও তাকে কয়েকবার কারাবাস করতে হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ৩০টির বেশি মিথ্যা মামলা রয়েছে।
জানাজা
হান্নান শাহর বড় ছেলে শাহ রেজাউল হান্নান জানান, আসম হান্নান শাহ‘র কফিন বুধবার সন্ধ্যা ৬ টয় ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় মহাখালী ডিওএইচএসের মসজিদ, সাড়ে ১১টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়, বাদ জোহর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
এরপর সিএমএইচে মরহুমের লাশ রাখা হবে।
পরদিন শুক্রবার সড়ক পথে মরহুমের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে তার নির্বাচনী এলাকা গাজীপুরে। সেখানে প্রথম সকাল ৯টায় জয়দেবপুর রাজবাড়ী মাঠে, সকাল সাড়ে ১০টায় কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এবং বাদ জুম্মা মরহুমের গ্রাম চালা বাজার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সর্বশেষ নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার করবের পাশেই সমাহিত করা হবে।
মহাসচিব ফখরুল হান্নান শাহ’র বাসায়
মৃত্যু সংবাদের খবর পেয়ে সকাল ৯টায় মহাখালীর ডিওএইচএস‘র বাসায় ছুটে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি শোকগ্রস্ত বড় ছেলে শাহ রেজাউল হান্নানসহ পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন।
স্বামীর মৃত্যুর খবরে হান্নান শাহের স্ত্রী নাহিন হান্নান অচেতন অবস্থায় আছেন। চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা দিচ্ছেন
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।