Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রতিশোধ নিতেই স্ত্রী ও সন্তানকে খুন

জেল থেকে বেরিয়ে বিয়ে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

বরগুনার পাথরঘাটা থানার হাতেমপুর গ্রামে ধর্ষণের অভিযোগে ধর্ষক শাহীন মুন্সিকে গ্রেফতার করা হয় গত বছরের ৩ জুলাই। তিন মাস কারাবন্দী থাকার পর ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে বিয়ে করার শর্ত সাপেক্ষে আদালত তাকে জামিন দেয়। জামিন পাওয়ার পরদিন শাহীন মুন্সির সাথে সুমাইয়া আক্তারের বিয়ে হয়। শাহীন মুন্সী পেশায় জেলে। গত ১ জুলাই থেকে সুমাইয়া আক্তার ও তার ৯ মাস বয়সের সন্তান নিখোঁজ ছিল। ২ জুলাই বাড়ির পাশে নরম মাটি দেখতে পেয়ে সুমাইয়ার বাবা রিপন বাদশার সন্দেহ হয়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় মাটি খুঁড়ে তার মেয়ে ও নাতনির লাশ উদ্ধার করেন। ঘটনার সময় থেকেই শাহীন মুন্সী পলাতক ছিলেন। সোমবার রাতে ঢাকার সিআইডির একটি বিশেষ টিম চট্টগ্রামের বন্দর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে শাহীন মুন্সীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। গতকাল মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মা ও শিশু হত্যার মর্মান্তিক ঘটনার বর্ণনা দেন বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।
তিনি আরো বলেন, গত বছরের ৩ জুলাই শাহীন মুন্সীর বিরুদ্ধে পাথরঘাটা থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় তিনি গ্রেফতার হয়ে ৩ মাস কারাবন্দী ছিলেন। পরবর্তীতে আসামী পক্ষ ও ধর্ষণের শিকার পরিবারের পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা হয়। আসামী ওই নারীকে বিয়ে করার সম্মতি দিলে বাদী পক্ষ আদালতে জামিনের বিরোধীতা করেননি। পরে কারাগার থেকে বের হয় সুমাইয়া আক্তারকে বিয়ে করেন। বিয়ের তিন মাস পর তাদের ঘরে শিশু কন্যার জন্ম হয়। এর মধ্যে করোনালকডাউনে শাহীন মুন্সী তার পেশা হারায়। দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। গত ৩০ জুন শাহীন তার স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে ওই গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে দাওয়াতে যান। ১ জুলাই বাসায় ফিরে আসার পর স্ত্রীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে নাইলনের দড়ি স্ত্রীর গলায় পেঁচিয়ে হত্যা করেন। পরে লাশ বাড়ির পাশে মাটি খুঁড়ে চাপা দেন। ওই সময় বাড়িতে শাহীনের মা ঘুমিয়ে ছিলেন। স্ত্রীকে মাটিচাপা দেয়ার পর ঘরে ফিরে এসে দেখেন ৯ মাস বয়সের মেয়ে কান্নাকাটি করছে। তখন শাহীন শিশুকে নিয়ে খালের পানিতে চুবিয়ে হত্যা করে স্ত্রীর সঙ্গে মাটিচাপা দিয়ে পালিয়ে যান। ঘটনার পর দিন সুমাইয়ার ছোট বোন বাড়িতে এসে বোনের খোঁজ করেন। ওই সময় শাহীন জানায় যে সুমাইয়া তার মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে। ওই রাতেই শাহীন পালিয়ে যান। পরদিন সুমাইয়ার বাবা মেয়ে ও নাতনিকে খুঁজতে বাড়িতে আসেন। বাড়ির পাশে নরম মাটি দেখে তার সন্দেহ হয়। আশেপাশের লোকজন ডেকে মাটি খুঁড়ে মেয়ে ও নাতনির লাশ উদ্ধার করেন।
সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার আরো জানান, এটি একটি সমাজের অবক্ষয়। সামাজিকভাবে ধর্ষণের বিষয়টি মধ্যস্থতা করে একটি সমাধান করা হলেও ওই নারী ধর্ষকের হাত থেকে বাঁচতে পারেননি। তার ৯ মাসের সন্তানকেও হত্যা করে। শাহিন স্ত্রী-সন্তানকে মাটিচাপা দিয়ে প্রথমে খুলনা পালিয়ে যান। এরপর সেখান থেকে আত্মগোপনের জন্য চট্টগ্রাম গিয়ে শুধুমাত্র থাকা-খাওয়ার বিনিময়ে একটি গ্যারেজে চাকরি নেন। এই হত্যাকাÐের সঙ্গে আর কেউ জড়িত রয়েছে কি-না বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
আগের ধর্ষণ মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ওই মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। সুমাইয়াকে বিয়ে করার শর্তে শাহিনের জামিন হয়েছিল কি-না সে সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। তবে শাহিনের জামিনের বিষয়ে বাদীপক্ষের কোনো আপত্তি ছিল না।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ