পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আদালতে করপোরেশনের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে করপোরেশনের শতকোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট করার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পরিবহন বিভাগের এক কর্মচারী। দুর্নীতির দায়ে দীর্ঘ পাঁচ বছর আত্মগোপনে থাকার পর হঠাৎ আবির্ভাব ঘটে তার। তিনি ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক মো. গোলাম ছরোয়ার। দীর্ঘদিন ধরে তার বিরুদ্ধে চলমান অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে তার সন্ধান পায়নি ডিএসসিসি। তবে অদৃশ্য কারণে সেই কর্মকর্তা এখন চাকরিতে পুনর্বহাল হয়েছেন। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ পদ ভাগিয়ে নেওয়ার তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের তত্ত্বাবধায়ক ও একই টার্মিনালের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে সহকারী ব্যবস্থাপকের পদেও ছিলেন।
চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো যোগাযোগ ছাড়া একাধারে ছয় মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে তার চাকরিই থাকার কথা নয়। গত পাঁচ বছর ধরে ওই কর্মকর্তাকে বহুবার তলব করার পরেও খুঁজে পায়নি ডিএসসিসি। এভাবে দীর্ঘদিন কেটে যাওয়ার পর ওই কর্মচারী হঠাৎ করে মেয়র বরাবর আবেদন করে নিজের উপস্থিতির কথা জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এর সঙ্গে ডিএসসিসির সাবেক ও বর্তমান প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
ডিএসসিসি সূত্র জানিয়েছে, এই কর্মচারীর নামে দায়ের করা তিনটি বিভাগীয় মামলা হচ্ছে, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের ক্যান্টিনের ভাড়া আদায় না করা, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের মূল নকশা মামলার প্রয়োজনে সঠিক সময়ে সরবরাহ না করা এবং আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে করপোরেশনের ক্ষতি করা। করপোরেশনের রাজস্ব তছরুপ, রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা এবং ব্যক্তিস্বার্থে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের বিভিন্ন কাউন্টার বিভিন্ন পরিবহনের নামে অবৈধভাবে বরাদ্দ দেওয়া। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে রাজস্ব আদায় করে সংস্থার তহবিলে জমা না দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ডিএসসিসির প্রভাবশালী এই কর্মচারী অসুস্থতার কারণে এর আগে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যক্তিগত শুনানিতে উপস্থিত হতে পারেননি বলে ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট ও ৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন মেয়র বরাবর পৃথক দু’টি আবেদন করেন তিনি। তার আবেদনের বিষয়ে তদন্ত করার জন্য ডিএসসিসির তখনকার প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামানকে নিযুক্ত করে ডিএসসিসি। পরে ২০১৯ সালের ৩ মার্চ ওই কর্মচারী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য উপস্থিত হন। এই দীর্ঘসময় তিনি করপোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখার কারণ হিসেবে নিজেকে অসুস্থ বলে দাবি করেন। তার এই অসুস্থতার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সংস্থার প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর বদরুল আমিনকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান অভিযুক্ত গোলাম ছরোয়ারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের কোনও সত্যতা খুঁজে পাননি। আত্মপক্ষ সমর্থনের মাত্র দুই দিনের মাথায় তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত তিনটি বিভাগীয় মামলায় আনা অভিযোগগুলো ‘সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি’ বলে ২০১৯ সালের ৫ মার্চ ১৫ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা। যদিও ডিএসসিসির (অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের) সাবেক দুই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (আনছার আলী খান ও খান মোহাম্মদ বিলাল) ছরোয়ারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সত্যতা পেয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন। এই কর্মকর্তার (মো. আসাদুজ্জামান) প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তাকে চাকুরি ফেরতের ব্যবস্থা করা হয়। সর্বশেষ তিনি ঈদুল ফিতরের ছুটির আগের দিন ডিএসসিসিতে পুনঃযোগদান করেন।
দায়িত্ব পালনকালে সায়েদাবাদ টার্মিনালের মূল নকশা ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংগ্রহ করেন গোলাম ছরোয়ার। কিন্তু নকশাটি তিনি মামলার প্রয়োজনে যথাযথ সময়ে কর্তৃপক্ষকে সরবরাহ না করে গায়েব করে ফেলেন। এছাড়া ওই বাস টার্মিনাল সংক্রান্ত অপর একটি রিট পিটিশন মামলায় সিটি করপোরেশন যাতে জিততে না পারে সে জন্য তিনি মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ অবস্থায় তাকে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলেও তিনি যে জবাব দেন তা ‘সন্তোষজনক নয়’ বলে প্রত্যাখ্যান করে ডিএসসিসি। পরে ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় দ্বিতীয় মামলাটি হয়।
ডিএসসিসি গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এই কর্মচারী ২০০৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় ওই টার্মিনালের ১ নং ক্যান্টিনটি ভাড়ায় পরিচালনা জন্য মো. আলমগীর হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু ক্যান্টিন পরিচালক দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্টিনের ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেননি। করপোরেশন তার কাছ থেকে দুই লাখ দুই হাজার ৩৬৬ টাকা পাওনা ছিল। এছাড়া ক্যান্টিন বিষয়ে ২০০৭ সালে একটি মামলা রয়েছে। কিন্তু ওই মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়ার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার জন্য তৎকালীন সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এ সংক্রান্ত নথিটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষ বরাবর উপস্থাপন না করায় করপোরেশনের ক্ষতি হয়েছে। এজন্য ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ গোলাম ছরোয়ারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়।
এছাড়া সায়েদাবাদ টার্মিনালের টোল আদায়ের জন্য রাজস্ব আদায় সহকারী নিয়োগ করে সিটি করপোরেশন। কিন্তু তখন আব্দুর রাজ্জাক নামে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ করে কর্তৃপক্ষ। পরে তার কাছ থেকে ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৮০০ টাকা অনাদায়ী থাকায় তাকে বরখাস্ত করে খলিলুর রহমান নামে আরেক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু গোলাম ছরোয়ার তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালনকালে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া খলিলুর রহমানকে বরখাস্ত করে পুনরায় আব্দুর রাজ্জাককে রাজস্ব আদায়কারী হিসেবে নিযুক্ত করেন। এই ব্যক্তি থেকেও ২০ লাখ ৮৮ হাজার ৫৫ টাকা আনাদায়ী থেকে যায়।
এসব টাকা আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় কর্তৃপক্ষ গোলাম ছরোয়ারকে সাময়িক বরখাস্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে। একপর্যায়ে এসব টাকা পরবর্তী ২০ দিনের মধ্যে আদায় করে দেবেন- লিখিত এই অঙ্গীকার করলে কর্তৃপক্ষ তাকে পদে পুনর্বহাল করে। কিন্তু পরবর্তী দুই বছর পার হলেও তিনি অঙ্গীকার পালন করেননি। এ অবস্থায় তার এমন আচরণ দায়িত্বে অবহেলা, অসদাচরণ, প্রতারণার সামিল এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে তিনটি প্রতিবেদনেই মতামত দেওয়া হয়।
গোলাম ছরোয়ারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলার শুনানীতে তাকে তলব করা হলেও তিনি কখনো উপস্থিত হননি। করপোরেশন থেকে মামলাটি তদন্ত করার জন্য অভিযুক্ত গোলাম ছরোয়ারের ঠিকানায় সাধারণ ডাকের পাশাপাশি রেজিস্ট্রি ডাকে অভিযোগনামা পাঠানো হলেও তিনি গ্রহণ করেনি। ব্যক্তিগত শুনানির জন্য চারবার দিন ও সময় ঠিক করে চিঠি দেওয়া হলেও তিনি গ্রহণ করেননি। শুনানিতে তিনি হাজির না হওয়ায় ঢাকা পৌর করপোরেশন কর্মচারী চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
বর্তমানে গোলাম ছরোয়ার চাকরিতে যোগদান করায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বেশ আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে গোলাম ছরোয়ারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, আমি এখন অসুস্থ, ডাক্তার কথা বলতে নিষেধ করেছেন। আমি পরবর্তীতে আপনার সাথে যোগাযোগ করবো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।