Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চীনকে চাপে ফেলতে চাইলে মাথা রক্তাক্ত করা হবে

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির শতবর্ষ পূতিতে শি জিনপিং

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০২১, ১২:০৪ এএম

বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কোয়ার গতকাল যেন মানুষের ঢেউয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে। সেখানে জনতার উদ্দেশে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) শততম বর্ষপূর্তিতে গলা ছেড়ে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, চীন অন্য কোনো দেশকে চাপে ফেলে না। কেউ যদি চীনকে চাপে ফেলতে চায় তাদেরকে তিনি হুঁশিয়ারি দিলেন। বললেন, তাদের মাথা রক্তাক্ত করে দেয়া হবে স্টিলের গ্রেট ওয়ালের ওপারে। এ সময় জনতার উল্লাসে যেন ফেটে পড়ছিল তিয়ানানমেন স্কোয়ার।

গতকাল সিসিপির শততম বর্ষের অনুষ্ঠানে সামরিক যুদ্ধজাহাজ ফ্লাই-পাস্টে অংশ নেয়। কামান থেকে স্যালুট জানানো হয়। বাজানো হয় দেশাত্মবোধক গান। অনুষ্ঠানে প্রায় এক ঘণ্টা বক্তব্য রাখেন প্রেসিডেন্ট শি। এ সময় তিনি আধুনিক চীনে তার দলের ভ‚মিকা কী সে সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন।

তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূলে তার দল। জনগণের কাছ থেকে তাদেরকে আলাদা করার চেষ্টা করলে তা ব্যর্থ হবে। তিনি বলেন, শুধু সমাজতন্ত্র রক্ষা করতে পারে চীনকে। চীনের সমাজতন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত যেসব চরিত্র তারাই পারে চীনকে উন্নত করতে। চীনকে কখনোই কাউকে উৎপীড়ন, জুলুম অথবা পরাধীনে নিতে দেব না। যদি কেউ সেটা করার সাহস দেখায় তাহলে গ্রেট ওয়ালের ওপারে তাদের মাথা রক্তাক্ত করা হবে।

শতবর্ষ উপলক্ষে বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় গোটা চীন জুড়ে। তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে বিশাল সংখ্যায় মানুষ জড়ো হয়। হেলিকপ্টার এবং প্লেন থেকে স্যালুট জানানো হয়। জায়ান্ট স্ক্রিন টাঙানো হয় গোটা চত্বরে। সেখানে লাইভ দেখানো হয়েছে প্রেসিডেন্টের বক্তৃতা। এছাড়াও ব্যান্ড এবং দেশের বিশিষ্ট শিল্পীরা দেশাত্মবোধক গান গেয়েছেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে দলবদ্ধভাবে যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন, ক্যানন স্যালুট ও দেশাত্মবোধক গান বাজানো হয়। শি জিনপিং বলেছেন, এক সময় চীনের মানুষদের হত্যা করা হতো। তাদের নিয়ে হাসাহাসি করা হতো। সে যুগ চলে গেছে। চীনে কমিউনিস্ট শাসন গড়ে উঠেছে। ১৪০ কোটির দেশের বিরুদ্ধে কেউ সে কাজ করার চেষ্টা করলে তার মাথা ভেঙে দেয়া হবে। গ্রেট ওয়াল অফ স্টিলে মাথা থেতলে দেয়া হবে। প্রেসিডেন্টের কথা শুনে উচ্ছ¡সিত হয়েছেন সাধারণ মানুষ। হাততালি দিয়ে তারা স্বাগত জানিয়েছেন শি জিনপিংয়ের কথা।

প্রেসিডেন্ট বলেছেন, চীনের মানুষ কেবল পুরনো মূল্যবোধ ভেঙে নতুন মূল্যবোধ গড়ে তুলেছে। শক্তিশালী চীন গড়ে তুলেছে। যেখানে দারিদ্র্য নেই, অনটন নেই। দেশকে আরো উন্নত করার প্রতিশ্রæতি দিয়ে শি জিনপিং বলেছেন, দেশের সামরিক শক্তি আরো উন্নত করতে হবে। সমস্ত সেনাবাহিনীকে আরো আধুনিক করে তোলা হবে। মাও জেদংয়ের পর চীনের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা শি বলেন, ‘কেবল সমাজতন্ত্রই চীনকে রক্ষা করতে পারবে’। চীনের জনগণ কখনোই কোনো বিদেশি বাহিনীকে তাদের অপমান, দমন ও পরাধীন করতে দেবে না বলে মন্তব্য করেন শি। ‘যে কেউ এরকম কিছু করার সাহস দেখালে চীনের ১৪০ কোটিরও বেশি লোকের স্টিলের মহাদেয়ালে তাদের মাথা রক্তাক্ত হয়ে যাবে’ বলেন তিনি। এসময় উপস্থিত জনতা ব্যাপক করতালির মাধ্যমে তার এ বক্তব্যকে স্বাগত জানায়। ‘একটি পরিমিত সমৃদ্ধ সমাজ’ গড়ে তোলার মাধ্যমে চীন তার শতবর্ষী লক্ষ্য অর্জন করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রয়টার্স বলছে, কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব থেকে চীনকে দ্রæত বের করে নিয়ে আসা ও বিশ্ব মঞ্চে আরো দৃঢ় অবস্থান নেয়ার জন্য শি ও কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা আরো উচ্চাসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তিয়ানআনমেন স্কোয়ারের দক্ষিণপাশে বেইজিংয়ের ‘নিষিদ্ধ শহরের’ দুর্গপ্রকারে বসা দেশটির নেতারা যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারের উড্ডয়ন ও শতবর্ষ উদযাপনে তাদের তৈরি করা ‘হান্ড্রেড’ উপভোগ করেন।
শতবর্ষ আগে ১৯২১ সালের ১ জুলাই চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দীর্ঘ এক গৃহযুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে তারা চীনের ক্ষমতায় আসে। তারপর থেকে ৭২ বছর ধরে দলটি চীন শাসন করে আসছে। প্রথমে কৃষক ও শ্রমিকদের নিয়ে গঠিত হলেও পরবর্তীতে চীনের ক্ষমতাসীন এ দলটি ‘চীনা ধরনের সমাজতন্ত্র’ সেøাগানের আলোকে বাজার অর্থনীতি ও এর উদ্যোক্তা সংস্কৃতিকে বরণ করে নেয়, কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা ভøাদিমির ইলিচ লেনিনের প্রবর্তিত পার্টির কর্তৃত্ববাদী শাসনের মডেল ধরে রাখে।

২০২০ সালে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টিতে ২৪ লাখ ৩০ হাজার নতুন সদস্য যুক্ত হয়। ২০১৩ সালে শি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে এ বছরই সবচেয়ে বেশি লোক দলটিতে যোগ দেয়। এখন দলটির সদস্য সংখ্যা নয় কোটি ৫১ লাখ ৫০ হাজার বলে বুধবার প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল চীনা কমিউনিস্ট পার্টি। দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের পর প্রায় ৭২ বছর আগে ক্ষমতালাভ করে দলটি। সেই থেকে একনাগাড়ে চীন শাসন করছেন কমিউনিস্ট নেতারা। চীন হয়ে উঠেছে বিশ্বের অন্যতম একদলীয় শাসনের দেশ। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি।

 



 

Show all comments
  • Ariful Islam Shakil ২ জুলাই, ২০২১, ১:২৮ এএম says : 0
    করোনাভাইরাস এর মতন মহামারী ছড়াইয়া এখন মহানন্দে আছে বিশ্বের ভিতরে চীন হইতেছে একটা ডেঞ্জার দেশ
    Total Reply(0) Reply
  • L.A Hakim ২ জুলাই, ২০২১, ১:২৯ এএম says : 0
    আমেরিকা, ইজরায়েল, ভারত,ফ্রান্স,বৃটেন থেকে চীন অনেক ভালো একটি দেশ। শুধু উইঘুর ছাড়া চীনের সব কাজকর্ম প্রশংসানীয়।
    Total Reply(1) Reply
    • AZAD ২ জুলাই, ২০২১, ৭:৪১ এএম says : 0
      এটা একটা মূল্যবান অভিমত । আমাদের প্রত্যেকেরই উচিৎ সবকিছুর সারবস্তু সম্পর্কে অবগত থাকা ।
  • Biplob Mahbub ২ জুলাই, ২০২১, ১:২৯ এএম says : 0
    Congratulations Sir, Xi Jinping The great leader of The China and the world...
    Total Reply(0) Reply
  • Ñâzïr Mûllä ২ জুলাই, ২০২১, ১:২৯ এএম says : 0
    এমন হুশিয়ার তাদের মুখে-ই মানায় কারন মহা প্রাচির তার দৃষ্টান্ত।
    Total Reply(0) Reply
  • Towhid Bin Alam ২ জুলাই, ২০২১, ১:২৯ এএম says : 0
    ছয় যুগ থাকার কোনো প্রয়োজন নাই, এমনকি এখন সময় এসেছে নতুন প্রজন্মের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া হোক ।
    Total Reply(0) Reply
  • Sohan Siraj ২ জুলাই, ২০২১, ১:৩০ এএম says : 0
    অস্ত্রহীন যুদ্ধ বাধিয়ে (করোনা) বিশ্বকে দমিয়ে শতবর্ষ উদযাপন করছেন জিন পিং!
    Total Reply(0) Reply
  • Md Alauddin Ali ২ জুলাই, ২০২১, ১:৩০ এএম says : 0
    শারা বিশ্ব একদিকে আর চীন একদিকে। চীনের একটা জিনিস খুব ভালো লাগে সেটা হলো তারা নিজেদের মাতৃভাষা কে গুরুত্ব দেয় বেশি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শি জিনপিং


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ