Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লকডাউন এখন তামাশায় পরিণত হয়েছে: মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০২১, ৬:৪০ পিএম | আপডেট : ৭:১৬ পিএম, ২৭ জুন, ২০২১

করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকারের ঘোষিত লকডাউন এখন তামাশায় পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সরকার ৭ দিনের জন্য পুনরায় লকডাউন ঘোষণা করেছে যা এখন তামাশায় পরিণত হয়েছে। এখন আবার বলছে যে, সোমবার থেকে না বৃহস্পতিবার থেকে। এগুলো ফান। তামাশা তো সেজন্যই।

রোববার (২৭ জুন) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের অযোগ্যতা এবং জবাবদিহিহীনতার কারণে লকডাউন সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। গরীব সাধারণ মানুষ দিন আনে দিন খায় শ্রেনীর মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা না করে অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরের শ্রমিক ও কর্মরত ব্যক্তিদের নগদ টাকা ট্রান্সফারের ব্যবস্থা না করে লকডাউন কখনোই কার্যকর হতে পারে না।

লকডাউন কেনো তামাশায় পরিণত হচ্ছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কেনো তামাশা নয়। আপনারা এর আগে প্রথমে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেন। সেই ছুটিতে দেখা গেলো শ্রমিকরা একবার গেলো, আবার তারা ফিরে আসলো। শনিবার আপনি আবার লকডাউনের ঘোষণা দিলেন। একটা লকডাউন তো চলছে এখন। স্টিল অন। আপনি গাড়ি-ঘোড়া বাইরের জেলাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। যার ফলে কি হচ্ছে? মানুষে হেটে রওনা দিয়েছেন ঢাকার দিকে ফিরে আসছে। একদল লোক যাচ্ছে-ছুটি ৭দিন মনে করে। আবার আরেক দল ঢাকায় ফিরছে। এই যে অবস্থাগুলো আপনি আগে চিন্তা করবেন না কী হতে পারে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত উইটি। সরকার বললো না যে, এবার কঠোর লকডাউন করবে। তখন মানুষ বলে এরপরে কী বলতে হবে- কঠিন লকডাউন, তারপরে কি বলতে হবে, নেত্রীর লকডাউন, তারপরে কী বলতে হবে, আল্লাহর কসম লকডাউন। এই যে হিউমার এটা বাংলাদেশের মানুষরা বলছে। এ নিয়ে সবাই তামাশা করছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রী মানিকগঞ্জে বলেছেন, জনগণ যদি আমাদের সহযোগিতা করে। জনগণ তো সহযোগিতা করতে চায়, তারা বাঁচতে চায়, আপনারা তো তাদেরকে বাঁচতে দিচ্ছেন না।

হাসপাতালগুলোতে ঔষধের সংকট দেখা দিয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, রাজধানী ও সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে কোভিড-১৯ ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ ভয়াবহ রুপ নেয়ায় স্থায়ী কমিটির সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। রোগীর চাপে সরকারি ও স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেখা দিয়েছে জরুরী চিকিৎসা উপকরণ সংকট ও জীবন রক্ষাকারী ঔষধের মারাত্মক সংকট। সবচেয়ে আশংকা বিষয় যে, রাজধানীর কেন্দ্রীয় ঔষাধাগারে অধিকাংশ জরুরী চিকিৎসার উপকরণ মজুদ প্রায় শেষ। রেমডিসিভির ইনজেকশন নেই, করোনা টেস্টিং কিট নেই, ভেন্টিলেটার ও হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা নেই। এছাড়া আইসিইউ বেড, অক্সিজেন, কনসেনট্রেটর অক্সিজেন সিলিন্ডারের পরিমান অত্যন্ত অপর্যাপ্ত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সব ব্যবস্থা আছে বলে যে মিথ্যাচার করছে তাতে স্থায়ী কমিটির সভায় ক্ষোভ ও ধিক্কার জানানো হয়।

করোনা সংকট মোকাবিলায় অবিলম্বে করোনা বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট জাতীয় কমিটি, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন, এনজিও এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মতামতের মাধ্যমে যৌথ প্রচেষ্টার উদ্যোগ গ্রহনের জন্য সরকারের প্রতি আবারো আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপিতে নেতৃত্বের কোনো সংকট নাই:

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপিতে নেতৃত্বে কোনো সমস্যা নেই। বিএনপি একটা রাজনৈতিক দল, এটা একটা পেট্রোজেনিয়াস পলিটিক্যাল পার্টি, কোনো মনোবৃত্তিক পলিটিক্যাল পার্টিও নয়। ইটস এ প্ল্যাটফর্ম অব অল দি পেট্রোজিনিয়াস এলিম্যাটস। সেই জায়গায় কিছু কথা থাকবে, যেহেতু গণতান্ত্রিক দল সেখানে বিভিন্ন রকমের কথা-বার্তা থাকবে। কিন্তু আন্ডার দি লিডারশীপ অব তারেক রহমান বিএনপি ইজ ইউনাইটেড দেন দি পাস্ট। অতীতে যা ছিলো তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ আছে বিএনপি এখন। গত একযুগ ধরে যে অত্যাচার-নির্যাতন চলছে তার মধ্যেও দেখে বিএনপি এখন পর্যন্ত সোজা হয়ে মাথা উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেট ইজ দি রিজন যে, বিএনপি সত্যিকার অর্থে জনগণের দল, জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে এই দল ধারণ করে আছে এবং তারেক রহমান সাহেব এই দুর্দিনে সুদূর লন্ডন থেকে যে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেই নেতৃত্বে গোটা দল আজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আছে।

বিএনপিকে নিয়ে কিছু গণমাধ্যমের নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশনার প্রসঙ্গে টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে এই সরকার জনগণের সমস্ত অধিকারকে কেড়ে নিয়ে এই রাষ্ট্রকে যেভাবে ধবংস করে দিচ্ছে সে ব্যাপারে আমরা পত্র-পত্রিকায় সেই রকমের কোনো লেখা দেখি না। সেখানে বিএনপির সমালোচনা, বিএনপিকে নিয়ে উঠে পড়ার কারণটা কী থাকতে পারে? সারাক্ষণ বিএনপির বিরুদ্ধে, দ্যান বিএনপি ইজ এ ফ্যাক্টার এবং তারেক রহমান আরেকটা বড় ফ্যাক্টার। সেকারণে তারেক রহমান সম্পর্কে তৈরি করা, মনগড়া কথা-বার্তা সবাই লেখেন।

বিএনপির মধ্যে কোনো সমস্যা নেই জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, যারা বিএনপির বিরুদ্ধে লেখছেন তারা নিঃসন্দেহে ভুল তথ্য থেকে লেখেন, বিভ্রান্ত হয়ে লেখেন এবং জনগনকে বিভ্রান্ত করেন। এটা আমি মনে করি যে, দিজ নট ক্রাইসিস এট দিস টাইম এবং পত্রিকাগুলো প্রায়োরেটি ফিক্সডআপ করতে পারছে না। প্রায়োরেটি শুড বি যে হেলথ-করোনা, প্রায়োরেটি শুড বি মেগা করাপশন, প্রাইয়োরেটি শুড বি ঢাকা টু গাজীপুর রোড, প্রায়োরেটি শুড বি দেয়ার ইজ নো বেড ইন দি হসপিটাল, নো অক্সিজেন, প্রণোদনা নাই, মানুষ খেতে পারছেন, চাকুরিচ্যুত হচ্ছেন মানুষ, নতুন করে ২ কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে। কোথায় এসব প্রতিবেদন? এসব কি বিএনপির একার দায়িত্ব। মিডিয়ার কী কোনো দায়িত্ব নেই। কোন দেশে গণতন্ত্র সফল হয়েছে মিডিয়ার একটা ভূমিকা ছাড়া।

বিএনপির ভবিষ্যত কুয়াচ্ছন্ন’- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির ভবিষ্যত নিয়ে উনারা এতো উদ্বিগ্ন কেনো? এই কারণে তারা মনে করেন যে, বিএনপি হচ্ছে একমাত্র রাজনৈতিক দল যা জনগণের ইচ্ছা-আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিনিধিত্ব করে, বিএনপির একমাত্র দল যে, যারা এই ভয়াবহ দানবকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে জনগণের একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। আর জনগণ জেগে উঠলে ক্ষমতাসীনরা পালাবার পথ খুঁজে পাবে না।

তিনি বলেন, আমি বলতে চাই, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত ঘোরতর অন্ধকারে নিমজ্জিত। এজন্য যে, তারা যে কাজগুলো করেছে এবং করছে গোটা জাতিকে তারা আজকে একটা অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। তারা এই জাতির সমস্ত অর্জিত ভালো-সুন্দর সব কিছুকে ধবংস করে দিয়েছে, গণতন্ত্রকে ধবংস করেছে, মানুষের ভোটের অধিকারকে ধবংস করেছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ধবংস করেছে, অর্থনীতিকে লুটপাটের অর্থনীতিতে পরিণত করেছে এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের স্বাধীনতার যে মূল লক্ষ্য ছিলো যে, একটা সুন্দর,সুষ্ঠু, স্বাস্থ্য সম্মত একটা জাতির নির্মাণ করা সেই জাতির সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করে দিচ্ছে।

এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন নসু উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল ইসলাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ