পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ গতকাল বৃহস্পতিবার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। তিনি পূর্বতন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের কাছ থেকে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এর আগে গতকাল সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে নতুন সেনাপ্রধান লে. জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে জেনারেল র্যাংক ব্যাজ পরানো হয়েছে। নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান নবনিযুক্ত সেনাপ্রধানকে এ র্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর গতকাল জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ দায়িত্ব পালনে সবার সহযোগিতা চেয়ে বলেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে জনগণের দূরত্ব থাকবে না। সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিডিয়ার দূরত্ব থাকবে না।
সেনাপ্রধান বলেন, ২০২১ সালের একটি বিশেষ গুরুত্ব আছে। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি। সেইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী যোগ হয়েছে। এরকম একটা মাহেন্দ্রক্ষণে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পেরে নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে করছি। তিনি বলেন, সকলের সহযোগিতা ছাড়া এত বড় গুরুদায়িত্ব পালন করা যাবে না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যে ক্লাসিক্যাল রোলগুলো আছে, সে দায়িত্ব আমরা যাতে সঠিকভাবে পালন করতে পারি।
আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দায়িত্ব গ্রহণের পর নবনিযুক্ত সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ শিখা অনির্বাণে পুস্পস্তবক অর্পণ করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর সেনাকুঞ্জে সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে এবং সেখানে তিনি একটি গাছের চারা রোপণ করেন।
জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ১ ডিসেম্বর ১৯৬৩ সালে খুলনা জেলার এক সমভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন আহমেদ স্বাধীনতা-পূর্বকালে একনাগারে দুই যুগ জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ ২৩ ডিসেম্বর ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি হতে ৯ম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সাথে কমিশন লাভ করেন। কমিশনপরবর্তী তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশন এলাকায় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদানপূর্বক তার সামরিক কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এ্যান্ড স্টাফ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে মাস্টার্স ইন ডিফেন্স স্টাডিজ এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ (বিইউপি) হতে ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ-এ প্রথম বিভাগে অসামান্য ফলাফলসহ এমফিল সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি বিইউপি এর অধীনে পিএইচডি সম্পন্নের উদ্দেশ্যে অধ্যয়নরত আছেন। জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ প্রথম স্থান অধিকার এবং এমআইএসটি গোল্ড মেডেল অর্জনসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমবিএ ডিগ্রী অর্জন করেন।
তিনি ২০১০ সালে সফলতার সাথে চীনের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি (এনডিইউ) হতে ডিফেন্স এ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ কোর্স এবং মিরপুরে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এ্যান্ড স্টাফ কলেজ হতে আর্মি স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করেন। পাশাপাশি তিনি এনডিইউ, ওয়াশিংটন হতেও গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তার বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনে তিনি জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) হিসেবে আমি ট্রেনিং এ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একমাত্র লজিস্টিকস্ ফরমেশন এবং ১৯ পদাতিক ডিভিশন কমান্ড করেন। এছাড়াও তিনি একটি পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার, বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে কাউন্টার ইন্সারজেন্সি অপারেশন এলাকায় একটি পদাতিক ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হিসেবে কমান্ড নিযুক্তিতে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (বিআইআইএস) এর মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন পাইওনিয়ার ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসেবে ২০১৪-২০১৬ পর্যন্ত ইউনাইটেড ন্যাশনস্ মাল্টিডাইমেনশনাল ইন্টিগ্রেটেড স্ট্যাবিলাইজেশন মিশন ইন দ্যা সেন্ট্রাল আফ্রিকা (মিনুস্কা)তে বহুজাতিক বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং অসামান্য কর্মদক্ষতা প্রদর্শনের জন্য এসআরএসজি কর্তৃক সাইটেশন প্রাপ্ত হন। তিনি বিভিন্ন ফরমেশন সদর দফতরে সিনিয়র অপারেশনাল এবং প্রশাসনিক স্টাফ অফিসারসহ সিনিয়র ডাইরেক্টিং স্টাফ হিসেবে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, প্রশিক্ষক হিসেবে ক্যাডেট কলেজ ও প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সদর দফতর আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড (আর্টডক) এর চিফ অব ডকট্রিন ডিভিশন এবং সেনাবাহিনী সদর দফতরে সামরিক প্রশিক্ষণ পরিদপ্তরের পরিচালক হিসেবে অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে তিনি সেনাসদরে কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত ও দুই কন্যা সন্তানের গর্বিত পিতা।
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন সেনাপ্রধানের র্যাংক ব্যাজ পরানোর অনুষ্ঠানে অরো উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লে. জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী। গত ১০ জুন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে লে. জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে ২৪ জুন থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য সেনাপ্রধানের দায়িত্ব দেয় সরকার।
বিদায়ী সেনাবাহিনী প্রধানের বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত ঃ বিদায়ী সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এর বিদায়ী সংবর্ধনা বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত হয়। নবনিযুক্ত সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এর কাছে দায়িত্বভার হস্তান্তরের পর সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সকল পদবির সদস্যের উপস্থিতিতে বিদায়ী সেনাবাহিনী প্রধানকে সামরিক রীতিতে বিদায় জানানো হয়। এর আগে তিনি সকালে শিখা অনির্বাণে পুস্পস্তবক অর্পণ করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর সেনাকুঞ্জে সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে এবং সেখানে তিনি একটি গাছের চারা রোপণ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।