Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গণপরিবহনে নৈরাজ্য

চট্টগ্রামে দ্বিগুণ ভাড়ার পরও অতিরিক্ত যাত্রী বহন : বালাই নেই স্বাস্থ্যবিধির

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০২১, ১২:০১ এএম

চট্টগ্রামে বাস-মিনিবাসে ঠাসাঠাসি করে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। ভাড়াও আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ। কোথাও নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই। করোনাকালে গণপরিবহনে এমন নৈরাজ্য চলছে। তবে তা দেখারও যেন কেউ নেই। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের প্রতিনিয়তই বাকবিতন্ডা, হাতাহাতি এমন কি মারামারির ঘটনাও ঘটছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে পরিহন শ্রমিকদের হাতে রক্তাক্ত জখম হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। গণপরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে যাত্রীরা।
গাদাগাদি করে বাসভর্তি যাত্রী পরিবহনের ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। আবার দ্বিগুণ ভাড়া দিতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে সীমিত আয়ের কর্মজীবীরা। তাদের মাসিক আয়ের বিরাট অংশ ব্যয় হচ্ছে যাতায়াত খাতে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহানগরীতে জনসংখ্যার তুলনায় গণপরিবহনের সংখ্যা অনেক কম। পরিবহন মালিকরা বলছেন, গত বছর টানা লকডাউনে বন্ধ থাকায় অনেক গণপরিবহন বিকল হয়ে গেছে। সড়ক পরিবহন আইনে কড়াকড়ি এবং উচ্চহারে কর-ভ্যাট আরোপের ফলে এ খাতে নতুন বিনিয়োগও আসছে না। ফলে গণপরিবহন সঙ্কট আরও বেড়েছে।
এতে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের যে নির্দেশনা তা মানা যাচ্ছে না। যাত্রীরা বাধ্য হয়েই গাদাগাদি করে বাসে উঠছেন। অন্যদিকে সরকারিভাবে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের শর্তে ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হলেও তা মানা হচ্ছে না। মহানগরী এবং জেলার প্রায় প্রতিটি রুটে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় চলছে। কোন কোন রুটে সর্বশেষ গন্তব্যে না গিয়ে যাত্রীদের মাঝ পথে নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। আবার ভাড়াও আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ।
নগরীর আন্দরকিল্লার বাসিন্দা নূর হোসেন চাকরি করেন চট্টগ্রাম ইপিজেডের একটি কারখানায়। বিধি-নিষেধের আগে তার আসা-যাওয়ায় বাস ভাড়া লাগতো ২০ টাকা। এখন তাকে ভাড়া গুনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ৬ নম্বর রুটের বাস কাটগড় থেকে লালদীঘি পর্যন্ত চলাচলের কথা থাকলেও বিকেলে ইপিজেডের কারখানা ছুটির পর ইপিজেড থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করছে। আবার ভাড়াও আদায় করছে দ্বিগুণের বেশি। বারিক বিল্ডিং থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত সড়কে যানজটের অজুহাতে এসব বাস লালদীঘির পাড় পর্যন্ত যায় না। এরফলে তিনবার গাড়ি বদল করে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে তাকে বাসায় ফিরতে হচ্ছে।
একই অবস্থা অন্যান্য রুটেও। ৬ এবং ১০ নম্বর রুটের বাস কাটগড় এবং পতেঙ্গা সৈকত পর্যন্ত যাওয়ার কথা থাকলেও ইপিজেড পর্যন্ত যাত্রী বহন করে। ইপিজেডে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে ফের কাটগড়ে যাত্রী তোলা শুরু করে। অর্থাৎ একই যাত্রীদের একবার নামিয়ে নিয়ে ফের ডবল ভাড়ায় কাটগড় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ন্যূনতম (উঠা-নামা) বাস ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ১০ টাকা। এমন নৈরাজ্য চলছে অন্যান্য রুটেও। মহানগরী থেকে জেলার বিভিন্ন রুটেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গণপরিবহনে ভাড়া দ্বিগুণ হওয়ার প্রভাবে প্রভাব পড়েছে রিকশা-অটোরিকশা এবং রাইড শেয়ারিংয়েও। তারাও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।
মাঝে মধ্যে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এবং ট্রাফিক পুলিশের উদ্যোগে কিছু অভিযান এবং জরিমানা অথব যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হলেও গণপরিবহনে নৈরাজ্য থামছে না। রাস্তায় যানজট, সড়কের অবস্থা বেহাল এমন সব অজুহাতে চলছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। আবার গণপরিবহন সঙ্কটের কারণে যাত্রীরাও বাধ্য হয়ে ঠাসাঠাসি করে বাসে উঠছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব বেলায়েত হোসেন বেলাল বলেন, কাউন্টার ভিত্তিক বাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায় করা হলেও সিটি সার্ভিসের অন্যসব গণপরিবহনে তিনগুণ যাত্রী বহন করে ভাড়াও দ্বিগুণ আদায় করা হচ্ছে। এসব দেখার দায়িত্ব যাদের তারাও নীরব, কারণ যাত্রীরা কোন অভিযোগ করছে না। তিনি গণপরিবহনে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে আগের নিয়মেই ভাড়া আদায় এবং যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানান।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ক্যাবের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, করোনায় আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে গণপরিবহনে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় স্বল্প আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। এই নৈরাজ্য বন্ধ করার দায়িত্ব যাদের তারাও নির্বিকার। প্রশাসনের চোখের সামনে ভাড়া নিয়ে চরম বিশৃঙ্খলা চলছে। লকডাউন কেউ মানছে না। কিন্তু গণপরিবহনের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এটা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার।
তবে ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে গণপরিবহনে অভিযান এবং নজরদারি অব্যাহত হচ্ছে। প্রায় অভিযান চালিয়ে মামলা এবং জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। সর্বশেষ গত ১৪ জুন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২২টি যানবাহন আটক ও ৪৩টির বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ