Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মোবাইলের প্যাকেটে ধরা খুনি

চট্টগ্রামে পরকীয়া থেকে বিয়ে পরে খুন

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৮ জুন, ২০২১, ১২:০৭ এএম

তালাবদ্ধ ঘর থেকে উদ্ধার হয় গলিত লাশ। বিকৃত হয়ে যাওয়ায় চেনার উপায় ছিল না। পাওয়া যায়নি কোন ক্লু। দেড় মাস আগে বাসা ভাড়া নিলেও তাদের কোন নাম-ঠিকানা জানেন না বাড়ির মালিক। ঘরে তেমন আসবাবপত্রও ছিলনা। কিছু কাপড়-চোপড়ের সাথে পাওয়া যায় নতুন একটি মোবাইল ফোনের প্যাকেট। আর এ প্যাকেটের সূত্র ধরেই আলোচিত মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি পৌঁছে যায় খুনি পর্যন্ত।

ধরে আনার পর খুনি স্বীকার করেন নিহত নারী তার স্ত্রী। তাদের একজন হিন্দু, একজন মুসলমান। দুজনের আগের সংসার আছে। সে সংসারে সন্তানও আছে। পরকীয়ায় জড়িয়ে পালিয়ে বিয়ে করেন তারা। এরপর দাম্পত্য কলহে স্ত্রীকে খুন করে পালিয়ে যান স্বামী। সিআইডির হাতে ধরা পড়ার পর খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন পল্লব বর্মণ (৩৪)।

তার বাড়ি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর গ্রামে। আর হত্যাকাÐের শিকার মিমি আক্তার (২৬) একই গ্রামের বাসিন্দা। তার স্বামী সিঙ্গাপুর প্রবাসী। ছয় বছরের এক সন্তানের জননী মিমি মোবাইল রিচার্জ করতে গিয়ে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন পল্লবের সাথে। পল্লবের রয়েছে স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়ে।
দুই বছর পরকীয়ার পর গত ১৮ জানুয়ারি মিমিকে চট্টগ্রামে এনে বিয়ে করেন পল্লব। প্রথমে তারা নগরীর পাহাড়তলী থানার সরাইপাড়ায় একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। কয়েকদিন সেখানে থাকার পর যান কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনে হানিমুনে যান। সেখানে ২০ দিন কাটিয়ে ফের চট্টগ্রামে আসেন। গত ১ মার্চ তারা পাহাড়তলী ওই বাসায় উঠেন।

সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, বিয়ের কিছুদিন পর পল্লব তার আগের স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ শুরু করেন। মিমি সেটা বুঝতে পারেন। তাদের মধ্যে শুরু হয় মনোমালিন্য। একপর্যায়ে মিমি অভিমানে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেন। এতে তিনি দুর্বল হয়ে পড়লে একজন চিকিৎসক বাসায় এনে তার চিকিৎসা করানো হয়। এতে কিছুটা সুস্থ হয়ে মিমি আবার ঝগড়া শুরু করেন। একপর্যায়ে মিমিকে খুনের সিদ্ধান্ত নেন পল্লব।
গত ৪ মার্চ পল্লব বাসার ছাদে উঠে সেখানে ছাদবাগানের জন্য রাখা এক বোতল কীটনাশক দেখতে পান। কীটনাশকের বোতলটি বাসায় নিয়ে আসেন। কিনে আনেন ১০টি ঘুমের ওষুধ। ওইদিন সন্ধ্যায় মিমিকে পানির সঙ্গে ১০টি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে দেন। এতে মিমি নিস্তেজ হয়ে পড়লে তাকে বেলের শরবতের সাথে কীটনাশক মিশিয়ে খাইয়ে দেন। বিষে ছটফট করতে করতে বিছানাতেই প্রাণ হারান মিমি। মৃত্যু নিশ্চিত হলে তার পোশাক ও মোবাইল নিয়ে বাসায় তালা দিয়ে পালিয়ে যান পল্লব।

সেখান থেকে রাতের বাসে ঢাকায় রওনা দেন। বাস থেকে নামেন আবদুল্লাহপুর। আলামত গোপন করতে সেখানে মিমির ফোনটি নালায় ফেলে দেন। কয়েকদিন আবদুল্লাহপুর অবস্থান করে পালিয়ে যান ময়মনসিংহের ভালুকায়। খুনের ২৬ দিন পর গত ১ এপ্রিল পাহাড়তলী থানার আব্দুল আলী সড়কের মাধবী ভবনের চতুর্থ তলার বাসা থেকে মিমির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পরপর সেখানে ছুটে যায় সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। গলিত লাশ শনাক্ত এবং খুনের রহস্য উদঘাটনের মত কিছুই পাওয়া যায়নি সেখানে।

ওই বাসায় পাওয়া নতুন কেনা একটি মোবাইলের প্যাকেট আলামত হিসেবে উদ্ধার করে সিআইডি। আনুষ্ঠানিক তদন্ত পাওয়ার পর সম্পূর্ণ ক্লুলেস এ মামলার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামেন সিআইডি কর্মকর্তারা। মোবাইল প্যাকেটের সূত্র ধরে প্রথমে মোবাইলের দোকান। সেখান থেকে মোবাইল ক্রেতার নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে পল্লব বর্মণ পর্যন্ত পৌঁছে যায় সিআইডি। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তার অবস্থান শনাক্ত করে গত ৯ মে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খুনের দায় স্বীকার করেন পল্লব। এরপর ১০ মে আদালতে জবানবন্দি দেন তিনি। গত ১৪ জুন এ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয় মহানগর আদালতের প্রসিকিউশন শাখায়। মামলাটি তদন্ত করেন সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মহিউদ্দিন রতন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরকীয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ