Inqilab Logo

রোববার ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১, ৩০ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ময়লার ওজনে টাকা পরিশোধ

পানিজট নিরসনে ডিএসসিসি’র উদ্যোগ

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০২১, ১২:০২ এএম

রাজধানীর বিভিন্ন সুয়ারেজ, ড্রেন থেকে নিয়মিত বর্জ্য, ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার না করায় পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ ছিল। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়, তৈরী হচ্ছিল পানিজটের। দীর্ঘ দিন ধরে ওয়াসার হাতে থাকা সুয়ারেজ লাইন পরিষ্কার না করা, অপরদিকে ঠিকাদারদের কাজে ফাঁকির কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। তাই হাতে নিয়েছে অভিনব উদ্যোগ। সুয়ারেজ, ড্রেন লাইন থেকে যে পরিমাণ বর্জ্য, ময়লা-আবর্জনা উঠানো হবে সেই বর্জ্যরে ওজন মেপে ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করবে ডিএসসিসি।
সেজন্য ডিএসসিরি প্রতিটি অঞ্চলে একাধিক ঠিকাদার নিয়োগ করেছে ডিএসসিসি। ঠিকাদাররা ময়লা আবর্জনা তুলে বস্তায় ভরে রাখবে। সেই বস্তা মাতুয়াইলের ল্যান্ডফিল্ডে বা ময়লার ভাগাড়ে নিয়ে ডিজিটাল স্কেলে মেপে প্রতি টন হিসেবে বিল পরিশোধ করবে ডিএসসিসি। এছাড়া পানিজট নিরসনে খাল উদ্ধার ও পরিষ্কার অভিযান চলমান রেখেছে সংস্থাটি।
ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকতা আবু নাছের ইনকিলাবকে বলেন, ঠিকাদাররা যে ময়লা আবর্জনা তুলবেন তা মাতুয়াইলের ল্যান্ডফিল্ডে ডিজিটাল স্কেলে মেপে প্রতি টন হিসেবে বিল পরিশোধ করা হবে। এতে করে ঠিকাদাররা কাজে গাফলতি করবে না। কারণ তারা যত ময়লা পরিষ্কার করতে পারবেন ততো টাকা বিল পাবেন। পানিজট নিরসনে এ উদ্যোগ ভাল কাজে লাগবে আশা করি।
ডিএসসিসির বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, ওয়াসা থেকে হস্তান্তর করা সুয়ারেজ, ড্রেন, লোকাল এলাকাগুলোর ড্রেন থেকে ময়লা পরিষ্কার করা হচ্ছে। সেই ময়লা বস্তায় বেধে বেধে একত্রে রাখা হচ্ছে। কিন্তু আগে এই গলিত ময়লা রাস্তার পাশেই খোলা অবস্থায় ফেলে রাখা হতো যা আবার বৃষ্টিতে ড্রেনে পড়তো এবং দুর্গন্ধ ছড়াতো। বস্তায় বেধে রাখায় গলিত ময়লা যেমন ছড়াচ্ছে না না, তেমনি দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে না। এছাড়া ময়লা আবর্জনা পরিবহনেও সুবিধা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ১৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল বাশার ইনকিলাবকে বলেন, মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা খুবই ভাল হয়েছে। ঠিকাদাররা কাজে ফাঁকি দেবে না, ময়লা বেশি তুলতে পারলে তারা বেশি টাকা পাবে। তিনি বলেন, নিজে দাড়িয়ে থেকে ড্রেনের ময়লা পরিষ্কারের কাজ তদারকি করছি। স্থানীয় লোকজনদেরও সাথে রাখছি। নিজেও কাজ বুঝে নিচ্ছি পাশাপাশি এলাকাবাসীকে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছি। অনেক ড্রেনে কাপড়, ডাবের খোসা, ফার্নিচারও ফেলা হয়েছে। ফলে ড্রেনের পানি প্রবাহ ঠিক মত হতো না। বৃষ্টি হলে রাস্তা ডুবে যেত। আশা করি পরবর্তীতে পানিবদ্ধতা হবে না।
এদিকে গত চার দিনে রাজারবাগ চানমারি মোড় থেকে শাহজাহানপুর ঝিল পর্যন্ত বিস্তৃত নর্দমার ১৭০ মিটার অংশ হতে ১০৭ মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। এসব বর্জ্যের প্রায় অর্ধেকই পুলিশ লাইনের সামনে চানমারি মোড়ের পিট হতে পরবর্তী পিটের মধ্যবর্তী মাত্র ৩৫ মিটার অংশ হতে উত্তোলন করা হয়েছে। অপসারিত বর্জ্যের মধ্যে পলিথিন ব্যাগ, চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক বোতল, গাম বুট, পুলিশের বিভিন্ন ধরনের কাপড়, ইট, ইটের খোয়া, কাটের টুকরা ইত্যাদি রয়েছে। তবে তার মধ্যে প্লাস্টিক বোতল, ফেব্রিকস, পলিথিন ব্যাগের আধিক্য ছিল।
এছাড়া পানিবদ্ধতা দূর করতে চলছে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, খাল পরিষ্কাল। গত তিনদিনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিম্নাঞ্চল বিশেষত ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের পানিবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ৫০০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। ডেমরা ও মাতুয়াইল এলাকার জলপ্রবাহের জায়গাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও দীর্ঘ সময় ধরে সেসব জায়গা দুর্বৃত্তদের দখলে ছিলো। ফলে পানিবদ্ধতা সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করতে থাকে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ এরফান উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন আদালত অভিযান পরিচালনা করে। এসব জায়গায় তৈরি করা ব্যবসায়িক স্থাপনা, দোকান, থাকার ঘর, কাঠের ব্যবসা, বাঁশের ব্যবসাসহ নানাবিধ প্রতিষ্ঠান স্থাপনা উচ্ছেদ করে অপসারণ করা হয় এবং উদ্ধারকৃত জায়গায় গতকালই খনন কাজ শুরু করা হয়।
অভিযান প্রসঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট ইরফান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঢাকার নিম্নাঞ্চলে পানিপ্রবাহের যে জায়গাগুলো ছিল, দীর্ঘ সময় ধরে সেসব জায়গা নানা কায়দায় দুর্বৃত্তরা দখল করে নেয়। চলাচলের জায়গা সৃষ্টির নামে পানিপ্রবাহের অধিকাংশ জায়গায় দখলদাররা কাঠের দোকান দিয়ে দখল করে। জায়গাগুলো এমনভাবে দখল করে নিয়েছে যে, সেখানে পানি প্রবাহের ন্যূনতম সুযোগটুকুও অবশিষ্ট ছিল না। ৩ দিনে প্রায় ৫ শত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। দখলমুক্তির পর সেখানে পানিপ্র্রবাহের জায়গায় খননকাজ শুরু হয়েছে।



 

Show all comments
  • Musleh Uddin ১৫ জুন, ২০২১, ৬:১৭ এএম says : 0
    এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হলে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। দখলদারদের দৌড়াত্ব কঠোরভাবে বন্ধ করতেই হবে। নতুবা সকল প্রকার পদক্ষেপ কোনো কাজে আসবে না। থাইল্যান্ডে সাগরের নিচে কোনো ময়লা আবর্জনা ফেললে তা সাথে সাথে পরিস্কার করার ব্যবস্থা করে। নতুবা বাংলাদেশ ময়লার স্তূপে পড়ে থাকতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mominul+Hoque ১৫ জুন, ২০২১, ৯:৫৮ এএম says : 0
    ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য সিটি কর্পোরেশন থেকে আইন করতে হবে যে, প্রত্যেক দোকান দার এমন কি ফুটপাতের ভ্যানগুলো পর্যন্ত সামনে ডাস্টবিন রাখতে হবে বাধ্যতামূলক। ব্যবসায়ী যার সামনেই কোন ময়লা আবর্জনা দেখা যাবে তাকেই দণ্ড দিতে হবে এবং কোন পথচারী যদি কোন কিছু নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে না ফেলে পথের মধ্যে ফেলে সাথে সাথে দোকানদার তাকে ধরতে হবে না হয় সে নিজেই পরিষ্কার করতে হবে। অর্থ্যাৎ এককথায় প্রত্যেক দোকানদার দোকানের পাশে ময়লা ফেলার ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে প্রত্যেক পথচারী নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলে। তাহলে ঢাকাকে পরিষ্কার করার ব্যপারে এবং জলাবদ্ধতা নিরশনে একটি ভালো ফল আসবে মনে হচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • আবদুল খালেক ১৫ জুন, ২০২১, ৮:৩১ পিএম says : 0
    জনগণ সচেতন হতে হবে।সু নাগরিক হতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডিএসসিসি

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ