Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা শুনে গর্বিত প্রধানমন্ত্রী

আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উদযাপিত

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩১ মে, ২০২১, ১২:০২ এএম

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষীদের পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্বপালনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আপনারা বিশ্বে বাংলাদেশের পতাকাকে সমুন্নত রাখবেন। পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা, আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। যখন যে সরঞ্জাম লাগবে, ব্যবস্থা করে দেব।

গতকাল শনিবার ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২১’ উদযাপন অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও গতকাল যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উদযাপিত হয়।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী বিশ্বের সকল দেশের শান্তিরক্ষীদের অসামান্য অবদানকে এই দিনে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামদি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সেনা বাহিনীর প্রধান, ভারপ্রাপ্ত নৌবাহিনী প্রধান, বিমান বাহিনীর প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও), পুলিশের আইজি, জাতিসংঘের মহাসচিব এবং জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী পৃথক বাণী দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাবিশ্বে কোভিড-১৯ ভীষণভাবে মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। এ সময় ধৈর্য্য ও ধীরস্থিরভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে। আমাদের যারা শান্তিরক্ষায় যাচ্ছে, তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। সব ধরেনের সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করছি। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য যা যা প্রয়োজন সঙ্গে তাই দেয়ার ব্যবস্থা করছি। সফরে বিশ্বের যখন যেখানে গেছি, সেখানে সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা আমাদের শান্তিরক্ষীদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। গর্বে আমার বুকটা ভরে গেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। এটা গর্বের বিষয়, আপনারা বিশ্বশান্তি রক্ষায় কাজ করছেন। যেখানেই যাচ্ছেন, বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করছেন। পরকে আপন করে নেয়ার মতো কাজটি করছেন। জানি আপনাদের কষ্ট হয়, বৈরী পরিবেশে দায়িত্ব পালন করছেন। এটা একটা চ্যালেঞ্জও। সবচেয়ে সঙ্ঘাতপূর্ণ-জটিল জায়গায় আমাদের শান্তিরক্ষীরা সফলভাবে কাজ করছে। এজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।

শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কর্মরত নারীদের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী পাইলটদের নিয়ে খুব গর্ববোধ করি। এখন সব জায়গায় মেয়েদের একটা ভালো সুযোগে আছে। দেশের মানুষের অর্থনীতির উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, বর্তমান ও ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য শিক্ষা-দীক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও কর্মসংস্থান তৈরি করাই আমাদের কাজ। আমরা সেটা করছি।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত ১২২টি দেশের ৮০ হাজার ১৮৪ জন শান্তিরক্ষীর মধ্যে ৬ হাজার ৭৪২ জন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী রয়েছে। এই সংখ্যা বিশ্বে নিয়োজিত মোট শান্তিরক্ষীর ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। এছাড়াও, বর্তমানে বাংলাদেশের ২৮৪ জন নারী শান্তিরক্ষী বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত আছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের শান্তিরক্ষীরা ৪০টি দেশে ৫৫টি ইউএন মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে ৮টি মিশনে আমাদের শান্তিরক্ষীরা নিয়োজিত আছেন। এছাড়া দক্ষিণ সুদানে ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসেবে মেজর জেনারেল পদবীর কর্মকর্তা এবং কঙ্গো, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ও দক্ষিণ সুদানে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবীর কর্মকর্তা নিযুক্ত রয়েছেন। তাদের দক্ষতার কারণেই তারা এই পদ পেয়েছেন।

শান্তিরক্ষা মিশনে ১৯৮৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের ১৫৯ জন শান্তিরক্ষী শহীদ এবং ২৪০ জন আহত হয়েছেন। সম্প্রতি শান্তিরক্ষা মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মোৎসর্গকারী ৮ বাংলাদেশীকে জাতিসংঘের হ্যামারশোল্ড পদকে ভূষিত করা হয়। যা একক দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যারা নিয়োজিত তারা যেন নিজ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে ইতোমধ্যেই সে পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে। দুর্গম এলাকাতেও ভি-স্যাটের মাধ্যমে ব্যয়বহুল ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের অধিকতর নিরাপত্তা প্রদানের জন্য কন্টিনজেন্টসমূহে এলএভি অ্যাম্বুলেন্স, আইইডি জ্যামারসহ মাইন রেজিস্ট্যান্ট অ্যাম্বুশ প্রোটেকটেড ভেহিক্যাল (এমআরএপি) সংযোজন করা হয়েছে। কারণ, যারা নিরাপত্তায় কর্মরত রয়েছেন, তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখা আমাদের একান্তভাবে দরকার।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ ও আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে আমরা ১ নম্বর শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ’ হিসেবে গৌরবের ৩৩ বছর উদ্যাপন করছি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বিগত ৩৩ বছর ধরে বাংলাদেশের প্রতিটি শান্তিরক্ষী ত্যাগ-তীতিক্ষা এবং গর্বের সঙ্গে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালন করে বিশ^ শান্তি রক্ষায় অনেক গৌরবময় অবদান রেখে যাচ্ছেন। বিশ^ শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথাও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বিশ^শান্তি রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন তারা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বই করছেন। এ কাজ করতে গিয়ে আপনারা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন। আমার মনে হয়, সবথেকে সঙ্ঘাতপূর্ণ জায়গা, সবথেকে জটিল জায়গাগুলোতেই আমাদের শান্তিরক্ষীবাহিনী বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছেন। সেজন্য আপনাদেরকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। মিয়া সেপ্পো অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তনিও গুতেরেজের একটি বার্তাও পড়ে শোনান। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠান থেকে দক্ষিণ সুদান, কঙ্গো, সেন্ট্রাল আফ্রিকা রিপাবলিক এবং লেবাননে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী কন্টিনজেণ্টের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মত বিনিময় করেন এবং দেশের কেবল প্রধানমন্ত্রী নয় জাতির পিতার কন্যা হিসেবে তাদের সবসময় সবরকম সহযোগিতা প্রদানের আশ^াস প্রধান করেন।

অনুষ্ঠানে তিনি জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে একটি সুভ্যেনির এবং এবং ইউএন পিস কিপার্স জার্নালের একটি সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করেন। বিশ^ শান্তি প্রতিষ্ঠায় আত্মত্যাগকারী বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অনুষ্ঠানের শুরুতে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিয়ে ‘বাংলাদেশ ইন গ্লোবাল পিস’ শীর্ষক এবটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও অনুষ্ঠানে প্রচারিত হয়।

গত এক বছরে বিশ^ শান্তি স্থাপনে শহীদ এবং আহত সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন পুরস্কার বিতরণ করে অনুষ্ঠানে তাদের সম্মানিত করেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া গণভবন প্রান্তে এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও বিমান বাহিনী প্রধান, পুলিশের আইজিপিসহ উর্ধ¦তস সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং সাবেক সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং আমন্ত্রিত দেশি ও বিদেশি অতিথি সেনাকুঞ্জে উপস্থিত ছিলেন।



 

Show all comments
  • Mukter Hussain ৩০ মে, ২০২১, ১:৫২ এএম says : 0
    দেশরত্ন জননেত্রী বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-র সু দক্ষ নেতৃত্বের ফসল,,,
    Total Reply(0) Reply
  • Merry Gold ৩০ মে, ২০২১, ১:৫৩ এএম says : 0
    বাংলাদেশের সেনাবাহিনী দেখলে গর্বে বুকটা ভরে যায়
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Mannan Shahin ৩০ মে, ২০২১, ১:৫৩ এএম says : 0
    আমাদের বাংলাদেশী পারে, বিশ্ব দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত, আমাদেরকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না ইনশাআল্লাহ,, ,,,, জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Robin ৩০ মে, ২০২১, ১:৫৪ এএম says : 0
    আমরা গর্বিত আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার মতো একজন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছি। অভিনন্দন ও শুভকামনা বংগবন্ধুর কন্যার প্রতি
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Year Ali Shikder ৩০ মে, ২০২১, ১:৫৪ এএম says : 0
    দূর্যোগে দূর্বিপাকে সংকটে সংগ্রামে অর্জনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পতাকা হাতে বঙ্গবন্ধুকন্যা জয়তু মাননীয় মানবিক প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃতে সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে সমৃদ্ধির অদম্য অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে দূর্বার এগিয়ে যাবেই ইনশাআল্লাহ জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু আমিন।।
    Total Reply(0) Reply
  • Mir Irfan Hossain ৩০ মে, ২০২১, ১:৫৮ এএম says : 0
    We are also proud for them.
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল ইসলাম ৩০ মে, ২০২১, ২:০০ এএম says : 0
    আমরা যখন শুনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের বাইরে সুনাম করেছে তখন আমাদেরও গর্বে বুকটা ভরে যায়।
    Total Reply(0) Reply
  • রক্তিম সূর্য ৩০ মে, ২০২১, ২:০১ এএম says : 0
    আরও সামনে েএগিয়ে যাক বাংলাদেশের সেনাবাহিনী।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ